সংস্কারকাজ নিম্নমানের হওয়ায় ঠিকাদারের বিল আটকে গেছে

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল ) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, শুক্রবার, ৫ অক্টোবর ২০১৮ | ৪৬৬

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে দেওহাটা- ধানতারা সড়কের সংস্কারকাজ নিম্নমানের হওয়ায় ঠিকাদারের বিল আটকে দেয়া হয়েছে। সংস্কারের ১৫ দিনেই সড়কটির অবস্থা বেহাল হওয়ায় উপজেলা এলজিইডি অফিস এই বিল আটকে দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সড়কটির বিভিন্ন স্থান ফেটে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। কাজের মান এতই খারাপ হয়েছে যে যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে নয়, হাত দিয়েই কার্পেটিং তোলা যাচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা থেকে ধামরাই হয়ে ঢাকা যাওয়ার অন্যতম সড়ক দেওহাটা-ধানতারা সড়ক। সড়কটি মির্জাপুরের সঙ্গে পাশের ধামরাই, মানিকগঞ্জ, সাটুরিয়া ও ঢাকায় যোগাযোগের সহজ মাধ্যম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে থাকে। এরই মধ্যে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়।

এ অবস্থায় উপজেলা এলজিইডি অফিস দেওহাটা থেকে চান্দুলিয়া আলহাজ শিল্পপতি নুরুল ইসলাম ব্রিজ পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। যার ব্যয় ধরা হয় ৮৩ লাখ টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের আরএস এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। সড়কটির সোয়া দুই কিলোমিটার কার্পেটিং ও দুই কিলোমিটার সিলকোট করা হয়।

মাত্র ১৫ দিন আগে কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ১৫ দিন না ঘুরতেই সড়কটির বিভিন্ন স্থান ফেটে কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ছোট ছোট যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সড়কটির সংস্কারকাজ নিম্নমানের হওয়ায় ঠিকাদারের বিল আটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

সড়কটিতে কার্পেটিংয়ের আগে ট্যাককোট ও প্রাইমকোট সঠিকভাবে না করায় এবং মেকাডামের ওপর কাদামাটি পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।

পথচারী রফিকুল ইসলাম, মীর দেওহাটা গ্রামের টুটুল, কাদের, জুয়েল, শাজাহান ও রাজ্জাক জানান, সড়কটি অত্যন্ত ব্যস্ততম। সময় বাঁচাতে ও দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকা, ধামরাই, সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ ও মির্জাপুরের লোকজন এ সড়ক ব্যবহার করে থাকেন। সড়কটি নির্মাণে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। কার্পেটিংয়ের আগে সড়কটি পরিষ্কার করা হয়নি।

তা ছাড়া কার্পেটিংয়ের আগে আলাদা পিচ দেওয়া হয়, তাও দেওয়া হয়নি। এ কারণে হাত দিয়েই কার্পেটিং তুলে ফেলা যাচ্ছে। তা ছাড়া ভালোভাবে রোলারিংও করা হয়নি। কাজের মান খারাপ করে সরকারের টাকা ঠিকাদার ও অফিসের লোকজন খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।

অন্যদিকে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি মির্জাপুরে যোগ দেওয়ার পর থেকে এলজিইডি অফিসের মাধ্যমে করা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সরেজমিনে পরিদর্শনে যান না বলে অফিসটির কয়েকজন উপসহকারী প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন।

আরএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সারোয়ার হোসেন বলেন, সড়কটি ৮-১০ টনের যানবাহন চলাচলের উপযোগী। সেখানে ২০-২৫ টনের যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া সড়কটি দিয়ে ২৩টি ভাটার ট্রাক চলাচল করে থাকে। এ কারণে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সড়কটির দায়িত্বে থাকা উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই কার্পেটিং করা হয়েছে। সড়কটি দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করায় কিছু জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারকে কোনো বিল দেওয়া হয়নি। তাকে সড়কটির ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কার্পেটিং ফেলে দিয়ে নতুন করে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য নিতে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমানের মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।