পঞ্চগড় থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্য
প্রকৃতিতে এখন চলছে শীতকাল। মেঘলুপ্ত আকাশের সূর্য কিরণে জলজল করছে প্রকৃতি। এখনই শীতের বেশ আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। প্রকৃতির এই শান্ত ও স্বচ্ছ আকাশে এমন সময়ই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থান থেকে গত ২৬ তারিখ শুক্রবার থেকে হিমালয়ের তৃতীয় পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্লভ দৃশ্যের দেখা মিলছে।
বিগত বছর ভালোভাবে দেখা গিয়েছে। এবারও খালি চোখেই দেখা মিলছে কার্শিয়ং, কাঞ্চনজঙ্ঘা চূড়ার অপরূপ দৃশ্য। তাইতো শীত এলেই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ভিড় জমাতে শুরু করেছে প্রকৃতিপ্রেমি ও হাজার হাজার পর্যটক।
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গ মাইলের বাংলাদেশের একমাত্র পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকেই এই দূুর্লভ দৃশ্যের দেখা পাওয়া যায়। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মেঘমুক্ত আকাশে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো ও জেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খালি চোখেই দেখা যায় কার্শিয়ং, হিমালয়, এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। ঋতু বৈচিত্রের এই সময়ে মেঘলুপ্ত নীল আকাশে পাহাড়ের বরফশুভ্র গায়ে সূর্য কিরণ পড়লেই চকচকে উজ্জ্বল পাহাড়ের দৃশ্যের দেখা মিলে। এর জন্য বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না। তাই মোহনীয় এই দৃশ্য দেখতে পর্যটক ভিড় জমতে শুরু করেছে তেঁতুলিয়ায়।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই পর্যটক মনোমুগ্ধকর এই দৃশ্য দেখতে জড়ো হচ্ছেন তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলোতে। কেউ এসেছেন বন্ধুদের সাথে। আবার কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছেন। মহানন্দার তীর থেকে কেউ তৃপ্ত দৃষ্টিতে দেখছেন হিমালয়ের দৃশ্য আবার কেউ মুঠো ফোনের সাহায্যে তা ক্যামেরা বন্দি করছেন। কেউ বা তুলছেন সেলফি। মহানন্দার পাড় থেকে এভাবেই চোখের সামনে প্রকৃতির অপরূপ চিত্রছবি অবলোকন করে পর্যটকরা।
সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় হিমালয়ের রূপও পরিবর্তিত হয়। যা প্রকৃতিপ্রেমিদের আরও মুগ্ধ করে। উত্তর আকাশে দেখতে পাওয়া নয়নাভীরাম হিমালয় মূলত বরফে আচ্ছাদিত শুভ্র মেঘের মতো লাগে। তার সাথেই রয়েছে পিরামিডের মতো এভারেস্টের চূড়া। নিচের অংশে কালো ও সবুজ আকৃতির পাহাড়টি মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা।
জানা যায়, জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সীমান্ত থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব ৮ কিমি, নেপাল ৬১ কিমি, ভূটান ৬৪ কিমি, চীন ২০০ কিমি, দার্জিলিং ৫৪ কিমি,এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার মাত্র ৭৫ কিমি।
ঢাকা থেকে আগত পর্যটকরা জানান, আগে শুধু শুনেছি তেঁতুলিয়া থেকে হিমালয় পাহাড় দেখা যায়। কিন্তু এবার বাস্তবে দেখলাম। অসাধারণ এক দৃশ্য। যা না দেখলে কেউ অনুধাবণ করতে পারবেনা। এত কাছে, এত স্পষ্ট আমি কল্পনাই করতে পারিনি।
তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন 'দৈনিক অধিকারকে' জানান, প্রতি বছর শীতকালে তেঁতুলিয়ায় হাজার হাজার পর্যটক খালি চোখে হিমালয় দেখতে আসে। এখানে এছাড়াও কয়েকটি পিকনিক স্পট ও চা বাগানসহ কিছু দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। যা সহজেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তেঁতুলিয়া দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে।