মধুপুরের রাবারের উৎপাদন বেড়েছে চলছে মহোৎসবের হরিলুট!

মধুপুর সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:২৩ পিএম, রোববার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ | ১০২৩

টাঙ্গাইলের মধুপুরের সাদা সোনা রাবারের উৎপাদন বাড়লেও থেমে নেই দুর্নীতি। মধুপুর উপজেলার পীরগাছা রাবার বাগানে চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও শ্রমিকদের ভাল পরিচর্যার করণে প্রায় ৩ গুন বেশী রারার কষ উৎপাদন হয়েছে বলে বাগানের ব্যাবস্থাপক মিয়া তোফায়েল আহমেদ জানান।

বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন এর অধীনে মধুপুর উপজেলার পীরগাছা এলাকায় ১৯৮৬ সালের ২রা ফেব্রæয়ারীতে প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে রাবার বাগান গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে ১০ হাজার ২৩ বিঘা জমিতে রাবার বাগান রয়েছে।
বিগত ৫ বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে এই বাগানে লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ১শ’ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হয়েছে ।

২০১১-১২ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ১ হাজার মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৭শ’ ৪৭ মেট্রিক টন, ২০১২-১৩ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ১ হাজার ১শ’ ৫০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৬শ’ ৭০ মেট্রিক টন, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৮শ’ ৫২ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৫শ’ ৬০ মেট্রিক টন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৬শ’ ৮০ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছিল ৬শ’ মেট্রিক টন, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৭শ’ ১৫ মেট্রিক টন , উৎপাদন হয়েছিল ৭শ’ ৬৫ মেট্রিক টন এবং ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে লক্ষমাত্রা ছিল ৭শ’ ৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে ৮শ’ ৮৬ মেট্রিক টন।

রাবার চাষ লাভজনক হলেও সেখানে চলছে হরিলুট। হরিলুট বন্ধ করা সম্ভব হলে এই লাভাজনক সাদা সোনার (রাবার) সম্পদ দিয়ে জাতীয় বাজেটের মোটা একটা অংশ পূরণ করা সম্ভব বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।

কিন্তু সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রতিনিয়তই রাবার চুরি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে পরের দিন তার চাকরি চলে যায়। অভিযোগ উঠেছে রাতের আঁধারে কারখানা থেকে রাবার পাচার হয় নিয়মিত। কিন্তুু তা দেখলেও কারও কিছু বলার থাকে না। ব্যাপক চাপের মুখে কাজ করেন এখানকার শ্রমিকরা। এক সময় মধুপুর এসব এলাকায় ছিল গজারির বন।

ধীরে ধীরে বন উজার হয়ে যায় । ভূমিদস্যুরা এসব জমির বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। ২কিলোমিটার প্রস্থ ও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পীরগাছা রাবার বাগানে উৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ৩০ লাখ ৭০ হাজার ৮২টি অনুৎপাদনশীল গাছের সংখ্যা ২২ হাজার ৩শ’ ৫৫টি । রাবার গাছ রয়েছে । সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়। এ বাগানে প্রায় ৫শ’ ৮৭ জন পিচমিল টেপার প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ কেজি রাবারের কষ কারখানায় জমা দেন ।

ফেব্রæয়ারি থেকে আগষ্ট পর্যন্ত সময়কে পিক এবং সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়কে অফ পিক সময় ধরা হয় । পিক সময়ে একজন শ্রমিক প্রতি কেজি রাবার কষ সংগ্রহ বাবদ পায় ৩ টাকা আর অফ পিক সময়ে পায় ৬ টাকা কেজি । খুব ভোর থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয় । প্রতিদিন একজন শ্রমিকের আয় ৭০ থেকে ৮০ টাকা ।

এ আয়ে তাদের সংসার চলে না বলে তারা জানান। শুধু রাবার চুরি নয়, এখন জমি দখলের ও হিড়িক পড়েছে । এবংকী কষ নামানোর কাজে টিনের স্প্রাউট এর পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ রাবার গাছের পাতা ব্যবহার করছে এতে গাছের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে বলে বাগানের অনেক শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়।

সম্প্রতি অরনখোলা ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বার মজিবুব রহমান (মজি) পীরগাছা (জালালপুর) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যলয়ের পূর্বপাশে ১৫ থেকে ২০বিঘা জমি প্রকাশ্যে হালচাষ করে আনারসের চারা লাগাচ্ছেন ।

বাগান ব্যবস্থাপকের সাথে আঁতাত করে জমি দখল করলেও কারও কোন মাথাব্যথা নেই। এ যেন লুটের মাল! শুধু এই জমিই নয়, বাগানের ভিতর ও বাহিরে গড়ে উঠেছে আনারস ও কলার অনেক বাগান । ব্যবস্থাপক থেকে শুরু করে ফিল্ড অফিসার পর্যন্ত অনেকের পকেটেই যাচ্ছে দখল সুযোগের অর্থ । এভাবে চলতে থাকলে জবর -দখলকারিদের দৌরাতেœ্য বাগানের জমিও নিরাপদ থাকবে না বলে স্থানীয়রা জানান।

এব্যারে জমি দখলকার অরনখোলা ইউনিয়নের বর্তমান মেম্বার মজিবুব রহমান (মজি) ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তিনি জানান, বাগানের ভিতরে তো অনেক জায়গায় বাগানের ব্যাবস্থাপক অনেকের কাছেই দিয়ে রাখছে। ব্যাবস্থাপকের সাথে সমঝতা করে আমিও নিয়েছি।

এ দিকে প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে রাবার ।অভিযোগ উঠেছে, এ রাবার চুরির সাথে জড়িত বাগানের ছোটবড় অনেকেই।রাবার প্রক্রিয়াজাত কারখানার সাবেক কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন,আমি নিজের চোখে দেখেছি রাতের আঁধারে ছোট ছোট ট্রাক ভরে এখান থেকে রাবার চুরি হয়। আর এ চুরির সাথে জড়িত বাগান ব্যবস্থাপক সুপারভাইজার সহ অন্যান্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। প্রতিবাদ করলে পরের দিন তার চাকরি চলে যায়। কারণ একটাই, শ্রমিকের স্বার্থ ও বাগানের অনিয়ম নিয়ে কথা বলাটাই অপরাধ। প্রতি বছর শ্রমিকের জন্য উৎসব ভাতা আসে। সে টাকা কর্মকর্তারা লুটে খান। এবার আমরা সে টাকা চেয়েছি। ব্যবস্থাপক আমাকে ব্যক্তিগত ভাবে ৩০ হাজার টাক দিতে চেয়েছিলেন, আমি সে টাকা গ্রহন করিনি। এ নিয়ে আমার সাথে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তার কয়েকদিন পর শ্রমিক ইউনিয়নের সবার চাকরি চলে যায়।

তিনি বলেন, বাগান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এখান থেকে রাবার চুরি হওয়া সম্ভব নয়। প্রতি রাতেই রাবার চুরি হয়।
পীরগাছা রাবার বাগানের ব্যবস্থাপক মিয়া তোফায়েল আহমেদ তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগকে ভিত্তিহীন অবহিত করে বলেন, বাগান ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকায় কিছু শ্রমিককে বাদ দেয়া হয়েছে।

বিশাল বাগানের কোন সীমার প্রাচীর নেই। নেই পর্যাপ্ত লোকবল। ফলে রাতের বেলা এই বিশাল বাগানের পুরো অংশ পাহারা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই কোন কোন এলাকা থেকে রাবার চুরি হলেও আমরা তা প্রতিহত করতে পারি না। তিনি বলেন, কারখানা থেকে কোন রাবার চুরি হয় না।