আতংকের নাম বাইল্যাছড়ি

আবারো তৎপর হয়ে উঠেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা, পাঁচটি নৈশকোচ ভাঙচুর

শাহীন আলম, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল ২০১৮ | ১৭৯
আতংকের নাম গুইমারা উপজেলার বাইল্যাছড়ি এলাকা। গেল কয়েক বছরে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার গুইমারার বাইল্যাছড়ি যৌথখামার, বুদংপাড়া রাস্তার মাথা, জোড়া ব্রীজ, সাইন বোর্ড ও রাবার বাগানসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক স্বশস্ত্র সংগঠন (ইউপিডিএফ)এর সন্ত্রাসীরা হত্যা, অপহরণ, গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও সহ প্রায় অর্ধশতাধিক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে। সর্বশেষ গত ২১শে মার্চ হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ডাকা অবরোধ চলাকালে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে টহল পুলিশের উপর হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। 
 
২০১৭ সালের শেষের দিকে সন্ত্রাসীরা যখন বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো তখন নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগীতায় তৎকালীন গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহাদাত হোসেন টিটুর নেতৃত্বে পুলিশের একটি টহল দল প্রায় প্রতিরাতেই অভিযান চালিয়ে বেশ ক’জন সন্ত্রাসীকে আটক করতে সক্ষম হয়।
 
পরে আটককৃতদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক প্রায় অর্ধশত সন্ত্রাসীকে আসামী করে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে করে ঐ এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিছুটা কমে আসে। শুধু বাইল্যাছড়িই নয় গুইমারা উপজেলায় সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। এরই মধ্যে ওসি মোঃ শাহাদাত হোসেন টিটু বদলী হয়ে জেলা সদরের দায়িত্ব নেন।
 
দীর্ঘদিন বাইল্যাছড়ি এলাকাটি শান্ত থাকার পর সম্প্রতি আবারো মাথাছাড়া দিয়ে উঠে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকাগামী ৫টি নৈশকোচে ভাঙচুর চালিয়েছে তারা। বরাবরের মত বাইল্যাছড়ি জোড়া ব্রীজ এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
 
জানা গেছে, সোমবার রাতে খাগড়াছড়ি থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নৈশকোচগুলো বাইল্যাছড়ি জোড়া ব্রীজ এলাকায় পৌছামাত্র আগ থেকে ওৎ পেতে থাকা উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় তারা এস আলম, শান্তি পরিবহন, সৌদিয়া, হানিফ পরিবহনের পাঁচটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসসহ বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালায়।
 
সন্ত্রাসীদের ছোড়া ইটের আঘাতে এক যাত্রী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় না ঘটলেও সাধারণ যাত্রীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ করে রাতের অন্ধকারে কেন বা কি কারনে এ হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে ইউপিডিএফের আধিপত্য বিস্তার ও নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য পরিকল্পিত ভাবে এ হামলা চালিয়েছে তারা।
 
এদিকে যাত্রীবাহি নৈশকোচে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মাটিরাঙ্গা জোন অধিনায়ক লে. কর্ণেল কাজী মো. শামশের উদ্দিনসহ সেনা ও পুলিশ সদস্যরা। এসময় নিরাপত্তাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
 
সদ্য গুইমারা থানায় যোগদানকৃত অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, গুইমারা উপজেলার মধ্যে বাইল্যাছড়ি জোড়া ব্রীজ এলাকাটি খুবই ঝুকিপূর্ণ ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বলে শুনেছি। আমরা সন্ত্রাসীদের দমনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। ইতঃমধ্যে ঐ এলাকায় টহল জোরদার করেছি।
 
তবে পুলিশের একার পক্ষে সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব নয় জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, জেলা প্রশাসন সহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব।