পঙ্গপাল ও কিছু কথা

আবু নাসার উদ্দিন
প্রকাশিত: ১০:২২ পিএম, শনিবার, ২ মে ২০২০ | ৬৪৩

কৃষিতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। কারণ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত জাতের উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। পেট ভরে মানুষ খেতে পাচ্ছে। আমরা সুখে আছি । অসুখ টের পাচ্ছি করোনা-কালীন, আরেক অসুখ সমাসীন নাম পঙ্গপাল । গতবারের থেকে ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু তো মনে হয় এবারও থাকছেই। পত্রিকায় দেখলাম গতবারের চেয়ে ডেঙ্গু্র প্রকোপ এবার নাকি চারগুন বৃদ্ধি পাবে। 

যাহোক পঙ্গপাল নিয়েই বলতে চাচ্ছি। পঙ্গপাল সম্পর্কে আমার খুব একটা জানা ছিল না। কথায় কথায় একদিন অফিসে বসে বললাম যাক এই করোনাটা গেলে ইনশাআল্লাহ বাঁচি। আমার জুনিয়র এক সহকর্মী বলল স্যার এরপর পঙ্গপাল আসতেছে । আমি বললাম এ আবার কি? নাম তো পরিচিত।

ছোট বেলায় অনেক পোলাপান মিলে খেলতে খেলতে হঠাৎ কারো আম, জাম, বড়ই গাছে আক্রমণ করে তা পেড়ে নিয়ে আসলে পরে ঐ গাছের মালিক বাচ্চাদেরকে আমাদের এলাকায় পঙ্গপাল বলেই অভিহিত করত। তাই পঙ্গপাল নামটা শুনেছি। আমার সহকর্মীর মুখ থেকে শোনার পর বিষয়টি ইউটিউবে দেখলাম।

হ্যাঁ এটা তো চেনা ঘাসফড়িঙ (Grasshopper) এর মতো দেখতে। এই পঙ্গপাল Acrididae পরিবারে ছোট শিংয়ের বিশেষ প্রজাতির যারা দল বেঁধে চলে। দলগত ভাবে শক্তিশালী এবং এককভাবে খুবই দুর্বল। ফসল খেকো এই দলটি পাকিস্তান, ভারতে ইতোমধ্যে এসেছে।

FAO অবশ্য বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে এখনও চিহ্নিত করেনি। এটি একটি ভালো খবর। মাস খানেক আগের একটি পত্রিকায় দেখালাম পঙ্গপাল নিয়ে কৃষি বিভাগ বলছে বাংলাদেশে উদ্বেগের কোন কারণ নেই। আবার অনেকেই বলছেন পঙ্গপাল যখন আসবে ঐ সময় বাংলাদেশে বন্যা থাকবে তাই সমস্যা নাই বা বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে বা বাংলাদেশের আবহাওয়া পঙ্গপালের জন্য আরামদায়ক নয় । লেখাটি ছোট করতে চাচ্ছি তাই আর যুক্তিতে যেতে চাচ্ছি না।

এ কয়েকটি বিষয় আমি পজিটিভলি নিচ্ছি তাহলো পঙ্গপাল আমাদের দেশে আসবে না বা আসলেও ঐসময় পানি থাকবে ফসল থাকবে না বা FAO বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছে না বা আমরা ভৌগিলিকভাবে সুবিধাজনক স্থানে আছে । কিন্তু একটা বিষয়ে আমি মানতে পারিনা, বাংলাদেশ আজ কৃষিতে অনেক এগিয়েছে।

এখানে কৃষিবিদ বা কৃষিবিজ্ঞানী যারা আছেন তারাও অনেক মেধার অধিকারী। দেশে স্বনামধন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান/ বিশ্ববিদ্যালয় আছে বা কয়েকজন কীটতত্ত্ববিদের নাম আমরা অনেকেই  জানি তারা অনেক ভালো কাজ করেছে বা করছে।  তাদের বেশ কিছু সাফল্য ইতোমধ্যে দেশবাসী জানে।

তারা কেন বলছেন না যে পঙ্গপাল প্রতিরোধে গবেষণা চলছে। অচিরেই আমদের উৎপাদিত মেডিসিন / ফিউমিগেন্ট/ ফরমুলেশন/ পদ্ধতি আমরা ট্রায়ালে যাব। অতঃপর একদিন শুনব বা পত্রিকায় দেখব পঙ্গপাল প্রতিরোধে বাংলাদেশের একজন কৃষিবিদ/ কীটতত্ত্ববিদ/কেমিস্ট/ গবেষক/ গবেষণা প্রতিষ্ঠান/ বিশ্ববিদ্যালয় এর আবিস্কার সফল হয়েছে। বাংলাদেশ আগামী মাস থেকে বিশ্বের বাজারে রপ্তানীর উদ্দেশ্যে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করবে বা রপ্তানী করবে বা প্রযুক্তি হস্তান্তর করবে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ অধিদপ্তর গবেষণাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নিতে পারে। হয়ত অনেকেই ভাবছে চিনা হাঁস বিশ্বের সব পঙ্গপাল একসাথে খেয়ে ফেলবে? এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত আছে। ধরে নিলাম হাঁস সব পঙ্গপাল খেয়ে ফেলল তারপরও পরবর্তী রিসার্স কে উৎসাহিত করার জন্য হলেও আমাদের এটা নিয়ে কাজ করা প্রয়োজন। জাতি হিসেবে আমরা কি সবসময় অন্যের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকব? মেডিসিন, ভেকসিন, প্রতিষেধক, টিকা সবসময় কি শুধু অন্যের কাছ থেকেই নিতে হবে? তাহলে আমরা দেশকে কি স্বপ্ন দেখাব? আমাদের দেশে এত ডিগ্রীধারী আছেন তাদের নাম এবং ডিগ্রীর ওজন রাখতে হলেও সুনিদিস্ট কিছু করা প্রয়োজন।

আমার একজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক যিনি বয়সে অনেক প্রবীণ এবং প্রশাসনিক জ্ঞান ছিল সত্যিই প্রশংসনীয়। তার পিএইচডি নেই কেন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মাস্টার্স এর একটি ক্লাসে সেটা প্রায় ২০০৪/২০০৫ সালে হবে। উনি উত্তরে বলেছিলেন এইযে, দোতলা থেকে যদি চক দিয়ে একটা ঢিল ছুড়ে দেই রাস্তায় যে মানুষটির মাথায় পড়বে সেও একজন পিএইচডি হোল্ডার। সুতরাং এত ডিগ্রী দিয়ে কি লাভ? স্যারের কথার তাৎপর্য হলো কাজের জন্য এতো ডিগ্রীর প্রয়োজন নাই। এটা বলার উদ্দেশ্য যাদের পিএইচডি নেই তারাও রিসার্সে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তদুপরি প্রতিটি রিসার্স ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি/বিদেশি ডক্টরেটধারীদের যে পরিমান আধিক্য তাতে আমার মনে হয় একটু ইচ্ছা আর সময় দিলে ভালো কিছু করা সম্ভব। অনেক কিছুর প্যাটেন্ট আমরা পেতে পারি।

পড়তে পড়তে অনেকেই হয়ত যুক্তি দাঁড় করিয়ে ফেলছেন রিসার্সারদের মূল্যায়ন নেই আরও অন্যান্য ভাবনা আসতে পারে। হয়ত আবার অনেকেই জবাব দেবে সরকারের টাকায় পড়েছেন? বড় বড় ডিগ্রী নিয়েছেন? ইত্যাদি ইত্যাদি । এসব বলার ইচ্ছা আমার মোটেও নাই বা কখনই ছিলনা, শুধু বলব নিজস্ব কিছু করলে আপনি মানসিক যে সুখ অনুভব করবেন তার মূল্য অন্য কিছুর সাথেই তুলনীয় নয়।  আমরা দেশ হিসেবে বিগত কয়েক বছরে অনেক এগিয়েছি কিন্তু করোনা দুর্যোগে হয়ত গতি কিছুটা কমবে এটা বিশ্বব্যাপী একই অবস্থা। তবে আমাদের দেশের গল্পটা একটু অন্যরকম হবে আশা করি।

এদেশে খাদ্য সংকট না হওয়ারই কথা। কারণ যতটুকু জানি যথেষ্ট পরিমান খাদ্য মজুদ আছে । আবার বাংলাদেশে গ্রামের মানুষ যদি ১৫/২০দিন বা ১ মাসও বাজারে না যায় উঠানে যা আছে (শাক, সবজি) এগুলো দিয়েই মুটামুটি সংসার চলে যায়। উপরন্তু ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ৩১ দফা নির্দেশনায় পতিত জমি চাষের আওতায় আনতে বলেছেন। Homestead Vegetable Gardening কে উৎসাহিত করেছেন। বাঙ্গালীর তরকারি কিনতে বাজারে যাওয়ার প্রয়োজন না থাকলেও চায়ের দোকানে বসে আড্ডা মারাটা তারা খুব মিস করে। আগেও জানতাম তবে করোনাকালে সেটার কঠিন প্রমান পেলাম।

অতীতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ খাদ্য সহায়তা দিয়েছে চাকরীর সুবাধে খুব কাছে থেকে দেখেছি। ঔষধসহ অনেক কিছুই বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সাফল্য দেখেছি। এবার আমাদের দেশীয় রিসার্সারদের স্ব স্ব বিষয়ে অর্জিত জ্ঞানের ফলাফল দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

লেখক: আবু নাসার উদ্দিন

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক)

গাজীপুর