নাটোরের বড়ভিটা বিল এখন পারিযায়ী পাখীদের অভয়াশ্রম

ফিরোজ আহমেদ, নাটোর জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:১০ পিএম, রোববার, ২০ জানুয়ারী ২০১৯ | ১১৯৬

পাখীর কিচির-মিচির ডাক, মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা, খাবারের সন্ধানে যেখানে সেখানে অবাধ বিচরণ দেখতে সবারই ভাল লাগে। আর অতিথি পাখী হলে তো সে কথাই নেই। এমনই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পারিযায়ী পাখির দেখা মিলছে শহরতলির বড়ভিটা বিলে।

নাটোরের বড়ভিটা বিলকে এখন পারিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে। নাটোর শহারতলির হরিশপুর ইউনিয়নের বড়ভিটা বিল এখন হয়ে উঠেছে লাখ লাখ পারিযায়ী পাখীর আবাসস্থল। এর বিপরীত দিকে মল্লিকহাটি বিলেরও ঠিক একই চিত্র। সেখানে এখন এসব অতিথি পাখী অবাধে বিচরণ করে নীরবে প্রকৃতির শোভা বর্ধনসহ ভারসাম্য রক্ষা করে চলেছে। বেশ কয়েক বছর আগে শীতের সময় পারিযায়ী পাখীর আসা-যাওযা শুরু হয। সেই থেকে এখানে প্রতি বছর অতিথি পাখির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

নাটোর জেলায় কোন হাওড়-বাওর না থাকলেও এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বিল। হালতি পাখির নামানুসারে নাম করণ করা হালতির বিল ছাড়াও রয়েছে চলনবিল, চিনিডাঙ্গার বিল আর ভাতঝরার বিলের মত অনেকগুলো বিল। এবারে নাটোরের এই সব বিলে অতিথি পাখীদের জন্য আবহাওয়া অনুকূলে ও পর্যাপ্ত খাবার থাকায় শীতের সময় প্রতিবছর লাখ লাখ অতিথি পাখির দেখা মেলে। শীতকালে সোলি, বদর, লালমোন, শামুকখোল, বক, বালিহাঁস, কাইয়ুম ও বাগাড়ি সহ নানা প্রজাতির পাখির কিচির মিচির ডাকে মুখরিত থাকে ওই সব বিলের বিলের সর্বত্র।

বিলের দেশী ছোট ছোট মাছই মূলতঃ ওইসব পাখীর প্রধান খাদ্য। সেখানে যারা পুকুর ও খালে মাছ চাষ করেন তারাও ওই সব অতিথি পাখীদের অবাধ বিচরনে ও সংরক্ষনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে। গত চার থেকে পাঁচ বছর আগেও নাটোর শহরতলির বড়ভিটা বিলে এত পাখী দেখা যায়নি। বর্তমানে বড়ভিটা ও মলি¬কহাটি বিলে বিচরণ করা পারিযায়ী পাখির সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় লাখ হবে বলে স্থানীয় পাখী প্রেমীদের ধারনা। চলতি বছর হঠাৎ করে এখানে বেড়েছে এসব অতিথি পাখীর সংখ্যা।

বিলটি শহরের একদম কাছে হওয়ায় এখানে প্রতিদিনই সকাল-বিকাল শত শত দর্শনার্থীরা আসছেন পারিযায়ী পাখীর কলতান, মুক্ত নীলাকাশে ডানা মেলে উড়ে চলা, বিলের পানিতে নামা, খাবার সন্ধানের মত মোহময় সব দৃশ্য উপভোগ করতে। দর্শনার্থীদের অনকে মনের অজান্তেই কিংবা অতি উৎসাহ আর ভাল লাগায় মোবাইল ফোনে ওইসব অতিথি পাখীর অবাধ বিচরণের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধারন করছেন। বিকেলে সেখানে অনেককে প্রায় প্রতিদিনই কোলাহল মুক্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশে অতিথি পাখীর প্রেমে হাবুডবুু খেতে দেখা যায়।

সংবাদ পেয়ে এরই মধ্যে নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বড়ভিটার এই বিলের অতিথি পাখী পরিদর্শনে যান। সেখানে তিনি একসাথে ঝাঁকে ঝাঁকে এত পাখী দেখে উচ্ছসিত হয়ে উঠেন। তিনিও অন্যদের মত মোবাইল ফোনে নীলাকাশে পাখীর অবাধ বিচরনের দৃশ্য ধারণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও আপলোড করেন। সেখানে অবস্থানকালেই সাংবাদিকদের সামনে তিনি বড়ভিটা বিলকে অতিথি পাখীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে সেই সাথে সেখানে পাখীর অভয়ারণ্য তৈরী ও সংরক্ষনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান।

এসময় জেলা প্রশাসকের সফরঙ্গী অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, তিনিও একসাথে এত পাখী কখনও দেখেননি। আব্দুস সামাদ নামে সেখানকার এক মাছ চাষী জানান, এখন ওইসব অতিথি পরিযায়ী পাখি সকাল-বিকাল সেখানে বিচরণ করে। ওই পাখীরা মূলতঃ দেশী প্রজাতির ছোট ছোট মাছ খায়। তাদের মাছ চাষে লোকসান হলেও তারা ওইসব পাখীরা যাতে সেখানে অবাধে বিচরণ করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখেন। এর আগে অনেক শিকারীরা বন্দুক, জাল ও ফাঁদ দিয়ে অতিথি পাখী শিকার করতে এসেছে কিন্তু তারা পাখীর শিকার করতে দেননি। তিনি জানান, প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ওই সব অতিথি পাখী সংরক্ষনে আর কোন সমস্যা থাকবে না।