হারানো সুর

তাসনুভা জান্নাত অয়ন
প্রকাশিত: ০৬:৪০ পিএম, শনিবার, ২৩ জুন ২০১৮ | ৮৪৪

 

যায় যায় দিন, তবু রয়ে যায় নির্জনতার ঘনঘটা।
ক্ষরিছে ম্লান মানস হতে আলোর ছটা।
দক্ষিণা দোরের সেই, অমৃত স্নিগ্ধ সমীর,
আজি অতি দুর্লভ, বিব্রত-অধীর।
এ ধারায়, হিমশীতল কুয়াশায় যে ছিল শিক্ত
আহা আজি সে রুধিরাক্ত।

যায় যায় দিন, তবু খুঁজিতেছি শানের কলকাকলি
দু’নয়ন যদি আদ্যও কয় আহা মরি মরি !
অতল কুঞ্জের মাঝে নীল ফোয়ারার গিরি,
আজি নিরব-নিস্তব্দ, সবই অশরীরী।
এ বসুধায় যে মাতা ছিল সর্বৈশ্বর্যময়ী
ম্রিয়মান কাঙালিনী আজি সেই, নিত্য মহিময়ী !

যায় যায় দিন, তবু বিবৎসু নির্মল কুটির
ঝিরি ঝিরি হাওয়া সমেত রিমঝিম বাদলার নির।
ক্ষুদ্র কুটিরেও ছিল যে শান্তির শীতলাভাস,
আজি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রাসাদেও নেই তার বাস।
মহিমাপুর্ণ যে প্রিয় ক্ষীরমনা,
অজ্ঞজনে দেয় তারে তীব্র ভর্ৎসনা।

যায় যায় দিন, তবু কাটে না মোর হিয়ায় সাত্তি¡কতা
পাইবো কি কভু কারও হিয়ায় আধ্যাত্তি¡কতা ?
দুর্গম ফোয়ারায় উত্তেজিত সেই ভূধর
আজি নিরুদ্যম-পান্ডুর-তুষাতুর !
অক্ষির অগোচরে যায় নাই।
তবুও কি আন্তকোণের আড়ালে আসে নাই ?


যায় যায় দিন, তবু থামে না প্রবল অয়ন,
রুপ বদলায় তবু বদলায় না অমর চয়ন।
আবদারে আহ্লাদে ভরা ছিল যে মাতুলালয়,
তুচ্ছ ! আজি নহে তাহা আপন আলয় !
ঝড়ের রাতে বাঁশপাতার বারি সেই ঘরের চালায়
আজি অতি দুর্বল এই শহুরে দালানকোঠায়।

যায় যায় দিন, তবু খুঁজিতেছি খেরুয়া কালন্দর
প্রকতারা দোর্তারারার সুরে চেয়ে যেত বর।
কোথায় সেই গভীর নদের মোহানাদ ?
এ যে এক উপেক্ষনীয় মোহরত !
এক কালে যে বন্ধু ছিল মোর কলমী
আজি সেই মোর তনুতে মাখায় বিছুটি।

যায় যায় দিন, তবু খুঁজি পাই না আলতারাঙা পায়ের নিক্কণ
গাঁ-রমণীর মসিনিন্দিত কাজল কালো নয়ন।
আজি তার কলরে ধরে না নিচোল,
কতো মায়া-মমতাঘেরা স্নিগ্ধ আঁচল !
বাংলার সব কুটিরেই ছিল কালি-দোয়াত-মস্যাধার
ঝিলাইয়া দিতো নিরব আলো, দূর করিতো আঁধার।

যায় যায় দিন, তবু ভিজিতে পারিনা রিমঝিম বারিতে
ইহা নাকি এসিড, পারে না মোরে ছাড়িতে।
তরে আজি সব কিছু দূষিত
এসব কিছু মোর হিয়ার দ্বারা অনুমিত।
প্রকৃতির রুপ লিপিদ্ধ করিতো যে মসিজীবি
আজি যে কয়, “সব হইয়াছে আধুনকরীতি।”

যায় যায় দিন, তবু খুঁজিতেছি সৌন্দর্যে মোহান্ধ মানব ।
আনন্দে যে করিতে জানে কলরব।
এ মোক্ষম ধরায় যায় ছিল স্নিগ্ধ মরুৎুু
আজি সে কেবলি এক ভরৎ।
এ মর্ত্যে মুমূর্ষুরে ভক্ষণ করে কর্বুর
আদ্যও কি খুঁজি পাইব, সেই “হারানো সুর” ?