শিশু সামিয়া হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন, মূল আসামি গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৩৫৩
সকাল সাড়ে আটটার দিকে প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া আক্তার (৯)। এসময় প্রতিবেশী সাব্বির আহমেদ (২১) অপহরণ করে বাবার কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে শিশুটির পিছু নেয়। বনের পাশে গেলে পেছন থেকে শিশুর মুখ চেপে ধরে পাশের একটি বাঁশবনে নিয়ে যায়। সেখানে মেয়েটি বাঁচার জন্য আকুতি মিনতি করে। মেয়েটি তাকে চিনে ফেলায় সাব্বির তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। একপর্যায়ে প্লাস্টিকের রশি দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। 
 
গত (৬ সেপ্টেম্বর)  সকাল ৯ টার দিকে ওই শিশুর লাশ বাঁশবনের ভেতর পাতা দিয়ে ঢেকে রেখে সাব্বির বাড়ি চলে আসে। বাড়িতে গোসল সেরে সকালের নাস্তা খেয়ে বেলা ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে  সাব্বির সামিয়ার বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ইমুতে অডিও বার্তা দেয়। ওইদিন শেষ রাতের দিকে সাব্বির ওই বাঁশবনের ভেতর গিয়ে লাশ খোঁজে নিয়ে ২০০ গজ দূরে আরেকটি বনের পাশে নালার মধ্যে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রাখে। এর একদিন পর পুলিশ ওই নালা থেকে লাশ উদ্ধার করে।
 
এই হত্যাকাণ্ডের ২২দিন পর রহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও সখীপুর থানা-পুলিশের যৌথ একটি টিম। সাব্বির হাসানকে গতকাল বুধবার রাত ১২টার পর তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। রাতেই তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেন।
 
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় সখীপুর থানা চত্বরে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার প্রেস ব্রিফিং করে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
 
গ্রেপ্তারকৃত সাব্বির হাসান উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন ওরফে ছুট্টো মিয়ার ছেলে। সাব্বির নিহত সামিয়ার স্কুলের পাশে মুদির দোকান করত।
 
পুলিশ সুপার বলেন, নিহত সামিয়ার বাবা রঞ্জু মিয়া দুই বছর আগে কুয়েত থেকে দেশে ফেরেন। তিনি উপজেলার দাড়িয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা। নিহত সামিয়া দাড়িয়াপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সামিয়া অপহৃত হওয়ার পরের দিন সামিয়ার বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে সখীপুর থানায় অপহরণের মামলা করেন। 
 
পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার সাংবাদিকদের বলেন, সাব্বির ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে সে কয়েক মাস আগে থেকেই মুক্তিপণ আদায়ের জন্য শিশু অপহরণের পরিকল্পনা করে। সামিয়ার বাবা কুয়েত প্রবাসী হওয়ায় তার মেয়েকেই অপহরণ করার সিদ্ধান্ত নেন সাব্বির।
 
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানায়, গত ৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে সাতটার দিকে সামিয়া বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে প্রাইভেট পড়তে যায়। পড়া শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে সে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দোকানে সহপাঠীরা কেনাকাটা করতে দাঁড়ালে সামিয়া একাই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। এদিকে বাড়ি ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় মা রুপা আক্তার শিক্ষককে ফোন দিয়ে জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে অনেক আগেই বাড়ি চলে গেছে।
 
পরে মেয়েকে খুঁজতে বের হলে বাড়ির কাছাকাছি একটি স্থানে মেয়ের ব্যবহৃত জুতা পড়ে থাকতে দেখেন রুপা। এর কিছুক্ষণ পর ১০ টা ৪০ মিনিটে রঞ্জু মিয়ার মুঠোফোনে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে ইমোতে একটি অডিও বার্তা দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই অডিও বার্তা পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পুলিশ বাড়ির ৪০০ গজ দূর থেকে একটি বনের পাশে মাটি খুঁড়ে সামিয়ার লাশ উদ্ধার করে।
 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদ রানা বলেন, সাব্বির বলেছেন, অপহরণের পর খুনের পরিকল্পনাকারী সে নিজেই। তারপরেও পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আগামীকাল শুক্রবার সাব্বিরকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠানো হবে।