ভোগান্তির শেষ কোথায়?

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৩:৫০ পিএম, শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৩৬৪

চিত্রটি রাজধানীর ব্যস্ততম স্থান বা কোনো ফেরিঘাটের দৃশ্য নয়, এটি হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বুকচিরে বেয়ে যাওয়া ধামরাই-মাওনা এর ব্যস্ততম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের দৃশ্য। প্রতিনিয়তই হাজার হাজার মানুষের বিভিন্ন কার্যসাধনের লক্ষে বাজার, পৌরসভা, উপজেলা অফিস ও থানাসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি।

অদৃশ্য কারণেই সড়কটিতে চরম ভোগান্তি ও বিরক্তিকর যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে হরহামেশাই। অনেকদিন আগে থেকেই কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড ও কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন বাজার মোড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয় প্রতিনিয়তই। তার সাথে প্রায় মাস খানেক ধরে যুক্ত হয়েছে মাওনা থেকে ধামরাইয়ের মহাসড়কের যানজট, এতে বিরক্তি আর ভোগান্তির শেষ নেই। তবে জানা গেছে, আগে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশ করা যেত কিন্তু সব পয়েন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় উপজেলার একমাত্র সরকারি হাসপাতালের প্রবেশের জন্য এই রাস্তা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। যার কারণে ইদানিং এই সড়কের ওপর চাপ বেড়েছে আর এই চাপের কারণেই ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। উপজেলার প্রবেশদ্বার সড়কটির যানজটের কারণে বিপাকে পড়েছে যানবাহন চালক, যাত্রী ও এই সড়কে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসার ব্যবসায়ীসহ দোকানিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই সড়কে রয়েছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দোকান সহ উপজেলার বেশিরভাগ ফার্মেসি, যা জনসাধারণের অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এখন এই সড়কটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স সহ নানা ধরনের গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকছে সড়কের মধ্যে, এতে রোগীদের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে।

যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, বাজার মোর হতে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে গাড়ি ঘোরানো, যত্রতত্র গাড়ি স্টপেজ দিয়ে যাত্রী নামানো সহ তিন চাকার পরিবহনে অনিয়ন্ত্রণ ও কিছু অদক্ষ/অপরিপক্ক চালকের হাতে অটো রিক্সা, রিক্সা, ভ্যান ইত্যাদি থাকার কারণে এই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব তিন চাকার যানবাহন এদিক-সেদিক না তাকিয়েই হুটহাট করে গাড়ি ঘোরানো ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে বিভিন্ন সময়ে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন সময় ছোট থেকে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় কিছুদিন আগেই অটোরিক্সার এক যাত্রী গাড়ি চাপায় মারা গেছেন এবং দুর্ঘটনার কারণে চালকের পা কেটে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

এ ব্যাপারে সচেতন মহল মনে করছেন বাজারের মোড় হতে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ থাকলে এ ধরনের যানজট ও দুর্ঘটনা সৃষ্টির কোন আশঙ্কা থাকে না। তাই যানজট নিরসনের জন্য জনসাধারণ উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

সালমা আক্তার নামক এক যাত্রী বলেন, আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ফিরছি কিন্তু যে যানজটে পড়েছি দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে ব্যাপক অস্বস্তির মধ্যে বসে আছি। আমার এখন এমন অবস্থা হয়েছে না পারছি নেমে যেতে, না পারছি বসে থাকতে। এই যানজটে বসে থাকতে-থাকতে অসুস্থ হয়ে একবার বমি করেছি আবার বমির ভাব হচ্ছে।

ফয়সাল নামের এক মোটরসাইকেল চালক বলেন, কড়া রোধের মধ্যে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার মাঝখানে যে যানজটে পড়েছি পেছনেও যেতে পারছিনা এগোতেও পারছি না। রোদে যানজটে দাঁড়িয়ে থেকে আমার ব্যাপক মাথা ব্যথা করছে। যানজটের এ ভোগান্তির শেষ কোথায়?

এই সড়কের এক ফার্মেসির মালিক ও রাজ্জাক নামের আরেক ব্যবসায়ী জানান, যত দিন যাবত এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে কতদিন ধরে আমাদের ব্যবসা খুব খারাপ অবস্থা যাচ্ছে। যানজটের কারণে বিভিন্ন ক্রেতারা এদিকে আসতে পারছে না, আবার আসলেও মালপত্র বের করতে পারছে না। এতে আমাদের ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।

অটোরিকশাচালক শাহাবুদ্দিন জানান, এ রাস্তার যানজটের কারণে আমাদের ইনকাম কমে গেছে। অনেক সময় এই রাস্তায় যানজটে পড়ে থাকতে হয়। যেখানে দিনে ৮০০-১০০০ টাকা ইনকাম হতো জ্যামের কারণে এখন ৬০০-৭০০ টাকা ইনকাম হয়। গাড়ি জমার টাকা দেওয়ার পরে আর বেশি টাকা থাকে না। এভাবে আমাদের খুব সমস্যা হচ্ছে, এই যানজট মুক্ত করলে আমাদের জন্য অনেক ভাল হয়।

পরিবহন চালকদের যানজটের কারণ জিজ্ঞাস করলে সোলায়মান নামের গাড়ি চালক বলেন, অটোরিকশা বেশি হয়ে গেছে এদের কারণে স্ট্যান্ডে বেশি যানজট হয়। অপরদিকে মাইনুল নামের অটোরিকশাচালক বলেন, বাসস্ট্যান্ডে গাড়িগুলো যেভাবে মন চায় সেভাবে ঘোড়ায় এবং যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে সেজন্যই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

সচেতন নাগরিক সালাম মেম্বার বলেন, বাস স্ট্যান্ড থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড পর্যন্ত ফুটপাতের রাস্তা থাকলেও এই রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। কারণ অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রাখাসহ মেরামতের কাজ চলে এই ফুটপাতে। ফুটপাত দখল করে আছে বিভিন্ন ক্ষমতাসীন লোকেরা। ফুটপাত দখলমুক্ত করে চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারলে এবং এই ফুটপাত বর্ধিত করে উপজেলা চত্বর পর্যন্ত করলে জনসাধারণ নানান ধরনের দুর্ঘটনা শিকার থেকে রক্ষা পাবে এবং যানজট নিরসনের অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।

কালিয়াকৈর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, এই যানজটের কারণে আমাদের বাজারের ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, বেচা- কেনা অনেক কম হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের ব্যবসায়ীরা সহ সকলেই ইউএনও মহোদয়ের সাথে বসছিলাম এবং লিখিত দরখাস্ত দিয়েছি।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ বলেন, বিষয়টি আমি জানি এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই আমি রোডস্ এন্ড হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছি। যাতায়াতের জন্য রোডের আরো একটি পয়েন্ট খুলে দেয়া হবে। পাচ-ছয় দিনের মধ্যে এই যানজটের সমাধান হয়ে যাবে।