হারিয়ে যাচ্ছে কালের স্রোতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার ঢেঁকি

রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:০৪ পিএম, সোমবার, ১ মার্চ ২০২১ | ৪০১

হারিয়ে যাচ্ছে কালের স্রোতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামবাংলার ঢেঁকি । ৯০ দশকেও প্রায় সব বাড়িতেই একসময় ঢেঁকি নামক যন্ত্র পাওয়া যেত। অগ্রাহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধান কাটার সঙ্গে কৃষানীদের ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দ শোনা যেতো।কিন্তু কালের পরিবর্তনে ঢেঁকি এখন ইতিহাসের  স্মৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায়  গ্রামে ঢেঁকির আর ছন্দময় শব্দ শোনা যায় না। খুব কম বাড়িতে ঢেঁকি অাছে তাও অব্যাবহৃত।

এক সময় নতুন ধান ঘরে উঠার পর চাল গুড়া করা, আটা দিয়ে পিঠা ফুলি, ফিন্নি, পায়েশ তৈরি করার ধুম পড়ে যেতো।এছাড়াও নবান্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ ও পুঁজায় ঢেঁকিতে চাল ভেঙ্গে গুড়া বা আটা তৈরির সময় গ্রামের বধুরা গান গাইতেন। চারিদিকে পড়ে যেতো হৈঁ-চৈঁ।  এক সময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি গ্রামীণ জনপদে চাল ও চালের গুড়া বা আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম ছিল। গ্রাম বাংলার বধুরা কাজ করতো আর গভীর রাত থেকে ভোর সকাল পর্যন্ত ধান বানতো। এখন ঢেঁকির সেই ধুপধাপ শব্দ আর শোনা যায় না।

এখন ঢেঁকির ব্যবহার নাই বললেই চলে। ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত যে কি সুসাধু পুষ্টিকর ছিল তা এখন অনুধাবন করা যাচ্ছে কিন্তু তা এখন পাওয়া দুঃসাধ্য। প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ঢেঁকির ব্যবহার কমেছে। তবুও গ্রামের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ সখের বেশে বাড়ীতে ঢেঁকি রাখলেও এর ব্যবহার করে না।এক সময় গ্রামীণ কৃষকেরা দারিদ্র নারীদের মুজুরী দিয়ে ঢেঁকিতে চাল ও আটা ভাঙ্গিয়ে নিতো। এভাবেই চলতো অনেক গরীব অসহায় মানুষের সংসার।

নুর হোসেন (৭৫) জানান, ঢেঁকি শিল্প হলেও গ্রামীণ জনপদে এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ নেই।এক সময় ঢেঁকির বেশ কদর ছিল।যখন মানুষ ঢেঁকিতে ধান ও চাল ভেঙ্গে জীবিকা নির্বাহ করতো।তেল-বিদ্যুৎ চালিত বিভিন্ন মেশিন দিয়ে গ্রামগঞ্জে গিয়ে ধান ভাঙ্গার কারণে ঢেঁকি আজ বিলুপ্ত প্রায়। তারা আরো বলেন, আধুনিক যন্ত্র বা মেসিনের কারণ ঢেঁকি হারিয়ে গেছে। কারণ ঢেঁকিতে ধান বানতে, আটা ও চালের গুড়া করতে কষ্ট হয় সময় লাগে আবার পরিশ্রম বেশী।  তাই  সবাই ঢেঁকি ব্যাবহার না করে মেসিনে গিয়েই কম সময়ের বিনা কষ্টে ধান বানা। চালের গুড়া আবার চাল খেকে আটা বানার কারণেই ঢেঁকি এখন বিলিন। বর্তমানের সন্তানেরা ঢেঁকি কি জিনিস সেটা চিনবেইনা বলে দাবি করেন তারা।