মির্জাপুরের সেই বীরাঙ্গনা ববিজান পেল মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা

মির্জাপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৭:৫৬ পিএম, রোববার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ | ৪৪১

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের সেই বীরঙ্গনা ববিজান বেওয়া অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পেয়েছেন।রোববার টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্য়ালয় থেকে তার নামে ভাতার চেক হস্তান্তর করা হয়।

পরে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক ববিজানের হাতে ৮২ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন। 

এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মঈনুল হক, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেপুটি কমান্ডার সিদ্দিকুর রহমান, ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজাহারুল ইসলাম।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন ববিজান বেওয়া। ববিজান বেওয়া মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের বাঁশতৈল পশ্চিমপাড়া গ্রামের হারাদন আলীর মেয়ে।

২০১৬ সালের বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি স্বচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে তা ওই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারীর নজরে আসে। তিনি টাঙ্গাইলের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহাবুব হোসেনকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। 

দীর্ঘ যাচাই বাছাই শেষে প্রকাশিত খবর সত্য প্রমানিত হলে চলতি বছর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬২তম সভায় ববিজান বেওয়াসহ ৪৬ নারীকে বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ববিজান বেওয়াদের গ্রামে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বিএসসিসহ আরও কয়েকজনের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। ওইদিনই পাক বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ববিজানসহ আরও কয়েকজন নারীকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। অস্ত্রের ভয় আর পাশবিক নির্যাতনে জ্ঞান হারান তিনি। ধর্ষিতা হওয়ার অপরাধে স্বামীর সংসার ছাড়তে হয় তাকে। সরকারি জমিতে ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন তিনি।

বয়স হওয়ায় এখন কানেও শোনেন না তেমন, স্মৃতিশক্তিও কমে গেছে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পাননি ববিজান। পাননি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা বা সরকারি কোনো সযোগ-সুবিধাও। উল্টো পেয়েছেন মানুষের লাঞ্ছনা, ঘৃণা, অপবাদ। 

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, গেজেট প্রকাশের দিন থেকে তার নামে ভাতা চালু হয়েছে। সেই হিসেবে বকেয়া ছয় মাস ও বিজয় দিবসের উৎসব ভাতাসহ আজ রোববার বীরঙ্গনা ববিজানের হাতে ৮২ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করা হলো।