মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল

অতীতের ভুল ভ্রান্তি মত পার্থক্য ভুলে এক হয়ে কাজ করার আহবান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ | ৩৮৯

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে  রেখে স্বাধীনতা বিরোধীচক্র আবার মাথা চারা দিয়ে উঠছে। স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিহত করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মত পথের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। 

মঙ্গলবার রাতে টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদতলে কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

মুক্তিযুদ্ধে বীরোত্তগাথা ভুমিকার জন্য বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের ভূয়সী প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, কাদের সিদ্দিকীই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বেসামরিক থেকে দেশের সর্বোচ্চ বীরোত্তম খেতাব পেয়েছেন। কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবগাঁথা ভূমিকা ও বাংলাদেশ সৃষ্টিতে শুধূ অনস্বীকার্যই নয় গৌরব উজ্জল। ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবীর প্রতিবাদ না করলে আমরা বাঙ্গালিজাতী কলংকিত হয়ে থাকতাম। তার নেতৃত্বে যারা সেদিন জীবনবাজী রেখে প্রতিবাদ করেছিলেন তারা সবাই জাতিকে কলংকমুক্ত করেছে। জাতি সেজন্য তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি মনে মনে প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু বাস্তবে তো আমি কিছু করতে পারিনি। আমিতো যুদ্ধে নামিনি। অন্য কেউ প্রতিবাদ করে নাই। সবাই মেনে নিয়েছে। বঙ্গবীরের নেতৃত্বে যারা সেদিন প্রতিবাদ করে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সীমান্ত ও ভারতে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন। আমি তাদের স্যালুট জানাই। বঙ্গবীরকে অতীতের ভুল ভ্রান্তি মত পার্থক্য ভুলে গিয়ে আগামীতে এক হয়ে কাজ করার আহবান জানান। 

বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের পট পরবির্তনের ফলে টাঙ্গাইলে আজ অনেকেই এমপি হয়েছে। কিন্তু তাদের এমপি হওয়ার কোন যোগ্যতা নেই। তারপরেও হয়েছে। আমি তেল মেরে কাউকে কথা বলিনা। আমি তেল মাখিও না। আমার ঘাড়ের রগ একটু বেশি বাকা। এ কারনে আমাকে অনেকেই পছন্দ করে না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে আমার বোনের কি ক্ষতি হয়েছে জানিনা। কিন্তু আমার ও আমার পরিবারের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমি নির্বাচন করতে পারি না। কারণ ব্যাংক থেকে তিন কোটি টাকা নিয়েছিলাম। ১৩ কোটি টাকা দিয়েছি। এখন তারা বলছে ২৩ কোটি  টাকা আমার কাছে পায়। আজকের সভা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বজ্র তুমি সভা কর আমি মন্ত্রীকে পাঠাবো। এজন্য তিনি প্রধানন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। কোন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমার সভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস এমপিকে পাঠিয়েছেন। সভা থেকে তাকেও ধন্য বাদ জানান। 

কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রশাসক আবু এনায়েত করিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস এমপি, ষাটের দশকের অন্যতম কবি বুলবুল খান মাহবুব, কবি আল মুজাহিদী, বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দকীর স্ত্রী নাছরিন কাদের সিদ্দকী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান খোকা তালুকদার বীর প্রতিক, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট ছালাম চাকলাদার প্রমুখ । 

উল্লেখ্য, স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার বাইরে এই দিন প্রথম টাঙ্গাইলে আসেন। কাদেরিয়া বাহিনীর ১৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ও ৭২ হাজার সেচ্ছাসেবক এই দিনে জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাগত জানান। ওই দিন অনুষ্ঠানে কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী তাঁর ব্যবহৃত স্টেনগানসহ নানা ধরণের প্রায় লক্ষাধিক অস্ত্র জমা দেন। অস্ত্র জমা দেওয়া অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা স্বরূপ বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল নানা ধরনের দশ হাজার অস্ত্র। মেজর আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে তিন হাজার সশন্ত্র মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুকে সশন্ত্র অভিবাদন জানানোর জন্য মাঠের এক পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও কাদের সিদ্দিকী মঞ্চে ওঠার পর প্যারেড কমান্ডার মেজর হাকিম মুক্তিযোদ্ধাদের সতর্ক করে সশন্ত্র অভিবাদন জানান। কাদের সিদ্দিকী হাঁটু গেড়ে বসার সাথে তাল মিলিয়ে মাঠের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো তিন হাজার মুক্তিযোদ্ধাও হাঁটু গেড়ে বসে যার যার অস্ত্র মাটিতে রেখে কাদের সিদ্দিকীর সাথে তাল মিলিয়ে দাঁড়িয়ে অস্ত্র জমা দেন।