কঠোর হতে বাধ্য করবেন না, গ্রিন লাইনকে হাইকোর্ট

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৫ এএম, বুধবার, ২২ মে ২০১৯ | ২৮২

গ্রিন লাইনের বাসের চাপায় পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা না দেওয়ায় হাইকোর্ট বলেছেন, আমরা কঠোর হতে চাই না। কিন্তু আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।

ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকার মধ্যে মাত্র ৫ লাখ টাকার চেক দেয়ার পর গত এক মাসে রাসেলকে আর কোনো টাকা না দেওয়ায় বুধবার বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

এসময় আদালত বলেন: ‘যারা ব্যবসা করে তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিৎ। সবকিছু তো আর আদালতের আদেশ দিয়ে হয় না। আমাদের কারো প্রতি কোনো রাগ, অনুরাগ, বিরাগ নেই। আমাদের কাছে গ্রিন লাইনের এ আচরণ ভাললাগেনি। আমরা কঠোর হতে চাই না। কিন্তু আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না। আমাদের নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার সুযোগ নেই। এরপর যা করার আমরা তাই করব।’

এর আগে গত ১৫ মে এক আদেশে হাইকোর্ট ৭ দিনের মধ্যে রাসেলকে ক্ষতিপূরণের বাকি টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি আদালতে উঠলে গ্রিনলাইনের আইনজীবী অজিউল্লাহকে আদালত বলে গত ২০ তারিখ থেকে গ্রিনলাইন পরিহন আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই আমি নিজেকে এই মামলায় তাদের পক্ষের আইনজীবী থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এরপর আদালত রসেলের আইনজীবীকে বলেন: ‘রসেলের চিকিৎসায় এপর্যন্ত গ্রিন লাইন কী দিয়েছে ‘

তখন রাসেলের আইনজীবী খোন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতকে জানান: ‘গ্রিন লাইন চিকিৎসা বাবদ ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। আর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫ লাখ টাকার চেক দিয়েছে। এরপর আর তারা কোনো যোগাযোগ করেনি। এসময় আদালত বলেন: ‘রাসেল কি এখন হাাঁটাচলা করতে পারে?’

তখন রাসেলের আইনজীবী বলেন: ‘একটি কৃত্রিম পা লাগানো হেয়েছে, এখন ক্র্যাচে ভর করে সে হাঁটতে পারে। এ সময় আদালতের পেছনের সারিতে বসা রসেল ক্র্যাচে ভর করে ডায়েসের কাছাকাছি আসেন।

এক পর্যায়ে রাসেলের আইনজীবী আদালতকে বলেন: ‘আমার যা মনে হয় গ্রিন লাইন ক্ষতিপূরণ না দেওয়ার প্রক্রিয়া খুঁজছে।’

এরপর আদালত বলেন: ‘যেহেতু আজকে গ্রিন লাইনের আইনজীবী নিজেকে এ মামলা থেকে প্রত্যাহার করে নিবেন বললেন এবং আজ আদালতে গ্রিন লাইনের কেউ নেই। সেহেতু আজ আমরা আর কোনো আদেশ দিচ্ছি না। আমরা এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ জুন দিন ধার্য করছি।’

আজ আদালতে গ্রিন লাইন পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. অজি উল্লাহ ও রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন খোন্দকার শামসুল হক রেজা। এসময় রাসেল সরকার তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারের হাতে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেয় গ্রিন লাইন বাস কর্তৃপক্ষ। ওই দিন হাইকোর্ট কক্ষে বিচারকের সামনে গ্রিন লাইনের আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ এই চেক রাসেলের হাতে তুলে দেন।

সে সময় গ্রিন লাইনের আইনজীবী বাকি ৪৫ লাখ টাকা দিতে এক মাস সময় চাইলে হাইকোর্ট সময় মঞ্জুর করেন। সেই সাথে রাসেলকে যথাযথ চিকিৎসা দিতে গ্রিন লাইন বাসের মালিককে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ১২ মার্চ হাইকোর্ট পা হারানো প্রাইভেটকার চালক রাসেলকে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। সেই সাথে গ্রিন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষের খরচে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাসেলের বিচ্ছিন্ন পায়ে কৃত্রিম পা লাগাতে বলেন আদালত। এছাড়া রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হলে সে খরচও গ্রিন লাইনকে দিতে বলা হয়।

২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল যাত্রাবাড়িতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসের চাপায় এক যুবকের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ওই যুবককে চাপা দেওয়ার পর গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসটি এবং তার চালককে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ জানায়, মো. রাসেল (২৫) নামের ওই যুবক একটি প্রাইভেটকার চালাচ্ছিলেন। বাসটি তার গাড়িকে ধাক্কা দিলে প্রতিবাদ জানাতে বাস থামাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস চালক তার ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ির বাসিন্দা রাসেল রাজধানীর আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিংয়ে বসবাস করতেন এবং স্থানীয় একটি ‘রেন্ট-এ-কার’ প্রতিষ্ঠানের প্রাইভেটকার চালাতেন। রাসেলের পা হারানোর ঘটনার পর গত বছরের ১৪ মে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী উম্মে কুলসুম। সে রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষতিপূরণের রুলসহ আদেশ দেন।