আগে দরকার কৃষকের সুরক্ষা

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৫১ পিএম, শনিবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ | ৩৬৪

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি আমাদের অর্থনীতির মেরুডন্ড। মেরুডন্ড ছাড়া যেমন মানুষ সোজা হয়ে চলতে পারেনা ঠিক তেমনিভাবে কৃষিকে বাদ রেখে অর্থনীতি সচল রাখা যাবেনা। আমাদের মৌলিক চাহিদার প্রায় সব উপাদানই আসে কৃষি থেকে। যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, ইত্যাদি সবখানেই কৃষি।

আর এ কৃষিকে যত সমৃদ্ধ করা যাবে, যত উন্নত করা যাবে, ততো সমৃদ্ধ হবে অর্থনীতি, উন্নত হবে জীবনযাত্রার মান। ইতি মধ্য কৃষিখাতকে আধুনিকায়ন করতে সসেষ্ঠ হয়েছে সরকার। নানা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, বিনা, বিরি, বারি, বাও, ডি এ ইউ,বি এ ডি সসি, সহ নানা কৃষি গবেষনা প্রতিষ্ঠান। এবং কৃষি কাজে ফসল, সবজি বিভিন্ন রোগ ও পোকা মাকড় মহামারি দেখা গেলে তার নিরময়ে বা সুরক্ষায় সরকার ও কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তর প্রচার প্রচারনায় করে থাকে ঘটা করে। কিন্তুু এ ফসল বা সবজি যাদের হাতের কোমল স্পর্শে আমাদের ফসল সোনায় পরিনত হয়। যাদের পরিচর্যায় বাংলাদেশটা আজ এত সবুজ। যাদের কল্যানে আমাদের নিশ্বাসে সজিবতা আনে।সেই কৃষকের সুরক্ষাই নেই কোন গবেষনা প্রতিষ্ঠান। নেই কোন প্রচার লিফলেট, স্টিকার।

প্রতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের, নতুন ফসলের জাতের প্রচার ও প্রসারের জন্য যে অর্থ ব্যয় করে তার একভাগ কৃষকের সুরক্ষার কাজে ব্যয় করলে বাংলাদেশের কৃষিকে আর এক ধাপ এগিয়ে নেওয়া যেত। কৃষকদের নিয়ে জাতীয় কোনো গবেষনা আছে কিনা আমি জানিনা। তবে আমার নিজস্ব গবেষনা থেকে বলতে পারি বাংলা দেশে সতকরা ৫-৭ জন কৃষক(চোখের সমস্যায় ভোগেন কৃষি কাজ করতে গিয়ে) ধান বা শস্য মাড়ায়ের সময় বা অন্যান্য সময় আঘাত জনিত কারনে কৃষকের চোখে সমস্য দেখা দেয়।

কৃষি কাজে সান গ্লাস ব্যবহার আবাশ্যক এ ঘোষনা কোন মিডিয়াতো প্রচার করেনা। এবার আসি অন্য কথায়। যুগে যুগে সব সময়েরর কৃষকেরা ছিল নিষ্পেসিত নিপিড়িত। কিন্তু এক শ্রণীর বুদ্ধিজিবি মহল কখনো রাজনৈতিক মঞ্চে মাইক ফাটয়ে কখনো টিভি টকশো কাপিয়ে কিছু মুখস্থ কথাবলে কৃষকদের ফুলিয়ে রাখে। একটা কথা তারা প্রায় আমাদের মুখে অন্ন তুলে দেয় কৃষক কিন্তু কৃষক আমাদের মুখের অন্ন যোগাতে তার নিজের মুখের অন্ন কিভাবে যোগায়, তা ভেবে দেখেছে কয়জন।আর দেখলেওবা বা বড়জোর একটা সেলফি তার পর এফবিতে আপলোড তারপর সবশেষ।

আমাদের কৃষকেরা অন্ন ফলাতে প্রতিদিন সূর্য ওঠার প্রাক মুহুর্ত থেকে দুপুর অবধি কখনো কাদা থেকে পচা কাদা কোথাও আবার হাঁটু জল তার ভিতর সোনা ফলানোর সংগ্রাম। এ নিয়ে বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি নানা মিডিয়াতে প্রচারিত হয় প্রামান্য প্রতিবেদন। মাটি খোড়া, বীজ বোনা, ফসল উৎপাদন ইত্যাদি ইতিবাচক দিক। কিন্তুুএকটা অংশ সব মিডিয়াতে বাদ রাখে। সেটি হল সেই সোনা ফলানো সোনার ছেলেরা কৃষকের সকালের খাবার। কী ভাবে খাচ্ছে, কী খাচ্ছে, কোথায় খাচ্ছে ইত্যাদি।

সকালের নাস্তা তো দুরের কথা এ প্লেট পান্তা ভাত, দুইটা লংকা মরিচ, একটা পেয়াজ, ইত্যাদি। কোন বক্তরা কৃষকের নিজেদের খাদ্যভাস নিয়ে কথা বলেনা কোন বিস্লেশক বলেনা খাবারের আগে কৃষকের টিফিনের কথা, মিডিয়াতো কৃষকের খবার পুর্বে সাবান দিয়ে দুহাত ভালোভাবে ধোয়ার কথা বলে না।

কৃষকেরা বৃষ্টির দিনেও ভিজে ভিজে কাজ করে। অনেক কৃষকের ঘরে রাত্রিবেলায় চোর বা ঈদুর আসবেনা কারন তাদের স্বাস প্রষাসের যে বিকট শব্দ গ্রামের ভাষায় আমরা যেটাকে ঘোঙ্গর টানা বলে থাকি এটি কেন ঘটে ঠান্ডা জনিত কারনে। কৃষকেরও রেইন কোর্ট বা ওই জাতীয় পোষাক দরকার। কৃষি মন্ত্রকের কোন শাখা কখনো কৃষকে তার উৎপাদিত ফসলে বা কোন ফলে কি পুষ্টি উপাদান। কোন শস্য কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় ইত্যাদি বিষয় প্রশিক্ষন দিয়েছে। আমি অনেক কৃষকের কাছে গিয়ে দেখেছি অনের পায়ের নখ নেই পায়ের চামড়া পচা হাতের নখ ভাঙ্গা এর কারন ব্যাখ্যা করেছেন কোন বিষসঙ্গ পানিতে পচা কাদায় খাওয়া অথবা অথবা কাঁচি নিড়ানির আঘাত জনিত কারন।

কৃষি বিভাগের কোন শাখা কৃষকের নিজের সাবধানতা শুরক্ষা নিয়ে প্রশিক্ষন দিয়েছে। শুধু উৎপাদনের প্রশিক্ষন দিয়ে থাকে তারা।এবার আসি কৃষকের একটি ভয়াবাহ দিক নিয়ে। সেটা হল কমে যাচ্ছে কৃষকের আয়ুকল কিভাবে? কৃষকের শরীরের ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে রাসায়নিক বিষ। এর প্রধান কারন হল কৃষক জানেইনা কখন বিষ স্প্রে করতে হয়। এর যথাযত প্রশিক্ষন বা পরামর্শের অভাব। এব্যপারে কৃষি আধিকারিকরা একটি অভিযোগ প্রায় করেথাকেন তাহল কৃষকরা আমাদের চেয়ে ডিলারদের কথা বেশি শোনে।

এখানে আমার প্রশ্ন ডিলারের কথা কেন শুনবেনা কৃষি আধিকারিকের সাথে কথা বলাত দুরের কথা আমি সাংবাদিকতা করতে যেয়ে আনেক ইউনিয়ন পরিষদের কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রের দরজার তালায় জং পড়েগেছে এমন অবস্থও দেখেছি।তাহলে কেন কৃষকেরা ডিলারদের কথা সুনবেনা। কেন কৃষি অফিস মুখি হবে। এবার আসি কৃষি প্রনোদনার দিকে সরকার যেকোন দলের সরকার কৃষদের যে প্রনোদনা দিয়ে থাকে তার তিনভাগের এক ভাগ এসে পৌঁছায় কৃষকের হাতে।তাও আবার দেখা যায় প্রোনোদনা হিসাবে সরকারি পরিষধিত গমের বীজ যাকে দেওয়া হচ্ছে। তার গম চাষ উপযোগী জমিই নাই।

সে গম সে ভাঙ্গিয়ে খাচ্ছে, সরিষার তেল বানিয়ে ব্যবহার করছে। আবার অপার দিকে প্রকৃত কৃষক যার প্রনোদনা প্রয়জন সে পাচ্ছেনা প্রনোদনা। এর কারনটা কী?সঠিক বন্টন ব্যবস্থা না থাকা। আমি মনে করি কৃষি প্রনোদনাটা সম্পূর্ণ কৃষি আধিকারিকদের উপর ছেড়ে দেয়াটাই শ্রেহ। কারন তারা জানে কে প্রকৃত চাষি। এর পর আসি আর এক শ্রেণীর পন্ডিত শ্রণীর কৃষিবিদের কথায় তারা নিজে যা জানে অন্যকে বা চাষীদের ভিতর সে জ্ঞান কখনো ছাড়তে চাইনা।

মনে হয় যেন চাষিদের পরামর্শ দিলে তার ভিতরের জ্ঞান কমে যাবে। আর এই শ্রেণীর কিছু লোককে সরকার বা সংস্থা প্রশিক্ষন কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়। তারা কৃষক প্রশিক্ষন মাঠে যেয়ে প্রথমে যে প্রশিক্ষনটা দেয় সেটি হল।(কোর্ট)আমাদের আচকের প্রশিক্ষন হল চার ঘন্টা। আমার লেচার দুই ঘন্টা আর মাঠে বাস্তব প্রশিক্ষন দুই ঘন্টা। আপনাদের এ কাদার ভিতর মাঠে যাওয়া লাগবেনা। কেহ ফোন দিলে বা কোন অফিসার আসলে বলবেন মাঠে গিয়ে ছিলাম। (আন কোর্ট) তাহলে চিন্তা করে দেখুন  আমাদের কৃষকদের প্রকৃত মাঠ সংযুক্তি প্রশিক্ষন থেকে বঞ্চিত হল।

বাকি দু ঘন্টা থাকল সেখানে কৃষকের নাম নিবন্ধন, সম্মানী, নান্তা, ইত্যাদি আয়োজনে সিংহভাগ সময় কেটে যায়। তাহলে কৃষক প্রশিক্ষনটা পেল কী? কৃষক প্রশিক্ষনের ক্ষেত্রে এ রকম অনেক ঘটনাই আছে। এটুকুই বল্লাম। যাতে সংস্লিষ্ঠ আধিদপ্তরের টনক নড়ে।সেদিন আকাশ বানি কলকাতায়, আকাশ বানি মত্রি চ্যনেলে একটি কৃষি অনুষ্ঠানে শুনলাম একজন মৎস আধিকারি বর্ণনা করছেন কিভাবে মাছের নতুন জাত তৈরি হয়। কি সুন্দর মনখুলে বল্লেন যেকোন শ্রোতা শুনেই সে নিজেই মাছের কৃত্তিম প্রজননঘটাতে পারবে। আর আমাদের দেশে কথা গুলো গোপন রাখা হয়।সুধু তাদের পরামর্শ কেন্দ্রে যওয়ার সুপারিশ টুকু রাখা হয়। এবার আসুন কোটাই বর্তমান বাংলাদেশে বিভিন্ন নামের কোটা চালু রয়েছে।

যেমন মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা, মহিলা কোটা, পোস্য কোটা, নাম নাজানা আরো কত কোটা কিন্তু কখনো কোন সরকার কৃষকের সন্তানের জন্য কোটা ব্যবস্থা করেনি। অথচ একৃষকেরা নাকি অর্থনীতির মেরুডন্ড। কখনো ভেবে দেখেছেন কৃষি বিষয়ক কোন বাজেট বা গবেষনা বিষয়ক কোন কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষখ থাকে অনুপস্থিত।

সেখানে থাকে কারা বাংলাদেশ কৃষক পরিষদের পদিয় নেতারা। তারা জানেনা। কৃষকের একমন ধান আবাদ করতে কতটুকু অর্থ ব্যয় হয়। তারা সার্থন্যসি মহলকে খুশি করতে কৃষকের সার্ধের বাইরে বাজেট বা গবেষনা থিতিস প্রনায়ন করে থাকে। আর এতে বড় সমস্যায় পড়ে বর্গচাষী কৃষক। যদিও এতে সরকারের কোন দোশ নেই। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মত একটি কৃষি প্রধান দেশে কৃষকের মূল্যায়ন করতে হবে আগে। তবেই দেশকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।

এমএমআর/সাগর হোসেন