আসলেই মৎস্যকন্যার অস্তিত্ব আছে!

ফিচার ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২০ পিএম, বুধবার, ১১ জুলাই ২০১৮ | ৩০০

গভীর সমুদ্রে ভেসে চলেছে জাহাজ। পাড়ি দিতে হবে অনন্ত পথ। হঠাৎ জলের মধ্যে থেকে শোনা গেলো মধুর কণ্ঠের সুললিত আকুল করা সুর। বিমোহিত হলেন নাবিক সুরের মূর্ছনায়।

গভীর সমুদ্রে ভেসে চলেছে জাহাজ। পাড়ি দিতে হবে অনন্ত পথ। হঠাৎ জলের মধ্যে থেকে শোনা গেলো মধুর কণ্ঠের সুললিত আকুল করা সুর। বিমোহিত হলেন নাবিক সুরের মূর্ছনায়। লাফ দিলেন অতল জলে গানের সুরে আবেশিত হয়ে। কিন্তু কোথায় সে সুরের উৎস? অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক মাছরূপী মৎস্যকন্যা, মৎস্যকুমারী বা মারমেইডের মায়াজালে জড়িয়ে ততক্ষণে নাবিক হারিয়েছেন সব দিশা।

যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা নামে পরিচিত, মারমেইড, মৎস্যকন্যা, মৎস্যকুমারী, জলপরী বা সেলকাই। বিশ্ব পুরাণ, কিংবদন্তি, কল্পবিশ্বাস বা ঐন্দ্রজালিক জগতের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে এর রহস্য থেকে গেছে রহস্য হিসেবেই। তবে থেমে নেই সত্যানুসন্ধান। 

সম্প্রতি ‘অ্যানিমেল প্ল্যানেট’ নামে একটি টিভি শোতে ‘মারমেইড: নতুন প্রমাণ’ শিরোনামের একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পর আবার আলোচনায় এসেছে মারমেইড বা মৎস্যকুমারী। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট একটি খবরও প্রকাশ করেছে অনুষ্ঠানটির নতুন আবিষ্কার নিয়ে। এটি ২০১২ সালে একই টিভি শোতে প্রচারিত ‘মারমেইড: দেহ পাওয়া গেছে’ অনুষ্ঠানের ফলোআপ। 

তার মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, অ্যানিমেল প্লানেট বিষয়টি নিয়ে হাল ছাড়েনি বা ছাড়ছে না। রহস্যের পর রহস্য খুঁজছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা দ্য ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, এ টেলিভিশন শো শুধু মানুষকে বিনোদিত করেনি, মারমেইড বা মৎস্যকন্যা বাস্তবে ছিল বা রয়েছে দাবি করে তাদের ওয়েবসাইটের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে:

মারমেইড বা মৎস্যকন্যা সমুদ্রচারী মায়াবী প্রাণী। এরা অর্ধেক মানবী, অর্ধেক মাছ। আবহমান কাল ধরে এরা সমুদ্রে কাল্পনিকরূপে ছিল এবং এখনো রয়েছে। এগুলো নিয়ে রয়েছে নানা ঐন্দ্রজালিক রহস্য। সামুদ্রিক নানা অভিযাত্রায় রয়েছে এর নানাবিধ অস্তিত্বের প্রমাণ।

প্রাচীন গ্রিসের মহাকবি হোমারের বিখ্যাত মহাকাব্য ‘ওডেসি’তেও উল্লেখ রয়েছে মারমেইডের। প্রাচীন পূর্বাঞ্চলীয় মহাসাগরে মারমেইড শক্তিশালী সমুদ্রের ভয়ানক ড্রাগনের স্ত্রী ছিল। শুধু তাই নয়, তারা ছিল স্থলভাগের সম্রাট ও তাদের স্বামীদের মধ্যেকার বিশ্বস্ত বার্তাবাহক। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা মারমেইডকে বলে ইয়াকিয়কস। তারা এর নামে গানও করতো।

মারমেইড সংক্রান্ত বিশ্বাস মানব ইতিহাসের প্রায় শুরু থেকেই ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে অ্যানিমেল প্লানেট।

এই রহস্যময়ী অর্ধনারীর অবয়ব চিত্রের প্রথম নিদর্শন পাওয়া যায় প্রস্তরযুগের গুহাচিত্রে। সেটা প্রায় ৩০ হাজার বছর আগের কথা। মানুষ সেসময় মাটিতে ফসল ফলাতে শিখেছে, সমুদ্রপথে ভাসানো শুরু করেছে জাহাজ।

মৎস্যকন্যাকে অর্ধমানব, চিমেরাস বা কাল্পনিক জীব, বনদেবতা, সেনচারস প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। পুরাণে আবার উড়ন্ত মারমেইড বা মৎস্যকন্যারও উল্লেখ রয়েছে।

অ্যানিমেল প্লানেট এসব অস্তিত্ব খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেও মারমেইড কি আসলে বাস্তবে রয়েছে? রয়েছে কি কোনো বাস্তব প্রমাণ? ঐতিহাসিক, দার্শনিক, এবং নৃতত্ত্ববিদদের একটি বড় প্রশ্ন এটি।

মৎস্যকন্যা নিয়ে সিনেমা, কাব্য, গল্প, রূপকথা কম হয়নি। নানা জন নানা রূপে উপস্থাপন করেছেন মারমেইডকে।

আর ডিজনির বিখ্যাত সৃষ্টি লিটল মারমেইড এরিয়েল ও রাজকুমার এরিকের অসাধারণ গল্পের কথা কে না জানে।

স্কটিশ, আইসল্যান্ডিক এবং আইরিশ লোককাহিনীর মৎস্যকন্যার নাম আবার সেলকাই। সেলকাইয়ের গল্পটিও কিছুটা ব্যতিক্রমী। কিন্তু গল্পের কাহিনীবিন্যাস প্রায় মৎস্যকন্যার মতোই। প্রচলিত এ লোককথা নিয়ে তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্র। নাম `দ্য সিক্রেট অব রোয়ান ইনিশ`।

অ্যানিমেল প্লানেট কি ভবিষ্যতে দিতে পারবে আবার নতুন কোনো প্রমাণ?