বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

টাঙ্গাইল কারাগারে নারী কয়েদীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০০ এএম, বুধবার, ১ জুন ২০২২ | ১৮৮

টাঙ্গাইল কারাগারে নাদীয়া জাহান শেলী নামের এক নারী কয়েদীর মৃত্যু হয়েছে। সুচিকিৎসার অভাবে ওই কয়েদীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডেপুটি জেলারসহ অজ্ঞাতনামা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন তার স্বামী মো. মিনহাজ উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে আসামীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই নারী কয়েদীর পরিবার।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই নারী কয়েদীর মেয়ে সোনালী আক্তার বলেন, তার মা নাদীয়া জাহান শেলী ডায়াবেটিক ও কিডনী রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এরপরও বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রট সখীপুর আমলী আদালতে চলমান সি.আর ৩১১/২০২১ এর মামলায় তিনি ছিলেন ২ নং আসামী। গত ৪ এপ্রিল অসুস্থ অবস্থায় তার মা অন্য একটি মামলায় সখীপুর আমলী আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। জামিনের জন্য আদালতে শারীরিক অসুস্থতার সকল প্রতিবেদন (রিপোর্ট) দাখিল করার পরও বিচারক তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন। নাদীয়া জাহান শেলী অসুস্থ হওয়ায় তার সুচিকিৎসার জন্য জেল সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু জেল সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডেপুটি জেলারসহ অজ্ঞাতনামা অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারিরা তার চিকিৎসার সু ব্যবস্থা না করে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে তাকে সাধারণ কয়েদী হিসেবে জেনারেল ওয়ার্ডে রাখেন। চিকিৎসা না পেয়ে তিনি কারাগারে খুবই কষ্ট করেছেন। অবশেষে গত ৮ এপ্রিল রাতে তিনি চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন।  

তিনি আরও জানান, ১৯ এপ্রিল তার বাবা মিনহাজ উদ্দিন বাদি হয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর থানা আমলী আদালতে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১০৪(খ)/১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেন। বিচারক এই অবহেলিত হত্যা মামলার বিষয়ে তার আদেশ উল্লেখ করেন ‘আসামীগণ উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী হওয়ায় এবং অভিযোগের গভীরতা বিবেচনায় মামলার ঘটনার বিষয়ে পুলিশ বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্বারা তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে বলে আদালত মনে করেন। সার্বিক পর্যালোচনায় টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারকে মামলার ঘটনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ পূর্বক তদন্ত করে প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন।’  

সংবাদ সম্মেলনে তার পাঁচ বছরের জমজ দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন এবং মেয়ে সোনালী আক্তার উপস্থিত ছিলেন। জমজ দুই ছেলে হাসান ও হোসাইন এবং সোনালী আক্তার বলেন, আমার মা খুব অসুস্থ ছিলেন। তারপরও জেল সুপার তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি। জেল সুপার আদালতের নির্দেশকে অমান্য করেছে। আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি।

এ বিষয়ে জেলা সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, কারাগারের দুইজন চিকিৎসক নাদীয়া জাহান শেলীর সুচিকিৎসার দায়িত্বে ছিলেন। কারাগারে তাকে সুচিকিৎসাই দেয়া হয়েছে। তিনি মারা যাওয়ার পর সকল প্রকার আইনী পক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহ নেয়ার সময় তাদের কোন অভিযোগ ছিলো না।

এরপরও তারা চিকিৎসার অভাবে ওই কয়েদীর মৃত্যু হয়েছে দাবি আর আমাদের আসামী করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট টাঙ্গাইল সদর থানা আমলী আদালতে বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনের ১০৪(খ)/১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার নিজেই তদন্ত করছেন।