সাবেক ইউএনও বিরুদ্ধে স্ত্রীর মর্যাদার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, বুধবার, ২৫ মে ২০২২ | ৩০৬

টাঙ্গাইলের বাসাইলে সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মনজুর হোসেন বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদার অধিকার আদায়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নুজরাত জাহান তিথি নামে এক কলেজ ছাত্রী।

বুধবার ( ২৫ মে) সকালে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলন  করে এ দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে কলেজ ছাত্রী লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিগত ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন দায়িত্ব থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরিচয় হয়। পরিচয়ের এক পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার সরকারী বাসভবনে নিয়ে শারিরিক ও মানসিকভাবে জোড়পূর্বক নির্যাতন ও শারীরিক সম্পর্ক করেন। এত আমি কান্নাকাটি করতে থাকলে আমাকে শান্ত করার জন্য তার তথ্য গোপন রেখে আমাকে বিয়ের আশ্বাস দেয়। ৩ আগষ্ট টাঙ্গাইল শহরের এস এস এস রেস্ট হাউজে রাখেন এবং আমার বিয়ে ভেঙ্গে পরবর্তীতে কুমুুদিনী কলেজ সংলগ্ন পাওয়ার হাইজের পিছনে কাজী আনিছুল হক বাবরের  বাসায় তার পরিচয় গোপন রেখে (সমুন হোসেন,বাড়ি মাধারীপুর,ওয়ালটনে কর্র্মরত) এমন তথ্য দিয়ে আমাকে মিথ্যে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসাইল ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক রাজা হোসনের সাহয্যে ২২ আগস্ট আমাকে উক্ত বাসায় উঠান। এরপর আমার বাবা মা আমাকে নিতে আসলে মো. মনজুর হোসেন বলেন আমাদের বিয়ে হয়েছে,তিন মাস পর কাগজ পাঠিয়ে দিব। । সেখানে তারা দুই মাস সংসার করেন।

এক পর্যায়ে বিয়ের ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ইউএনওকে চাপ প্রয়োগ করি। পরবর্তীতে ইউএনও ভারতে যাওয়ার পর বিয়ে করবে বলে আমাকে আশ্বাস দিয়ে মেডিক্যাল ভিসায় ২৪ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত ১০ টায় সরকারি এসিলেন্ট গাড়িতে তার পরিচিত জোবায়েত হোসেনকে এবং গাড়ীর ড্রাইভার বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং যশোর সার্কিট হাউজে কিছুু সময় কাটান। সেখান থেকে বেনাপোল বর্ডার ক্রস করে আমাকে ভারত নিয়ে যায় সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে একটা অপারেশন করান। যদিও আমার শারিরীক কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছিলেন আমরা ভারত গিয়ে বিয়ে করে সেখান থেকে বাচ্চা নিয়ে দেশে আসবো,তাহলে আমাদের পরিবার আমাদেরকে মেনে নিবে। তার সে আশ^াসেই সেখানে আমার যাওয়া। পরে আমি ইউএনও’র পাসোর্নাল ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারি তিনি বিবাহিত এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে। তখনই আমি কান্নাকাটি শুরু করে চলে আসতে চাই। তখন সে বলে আমার স্ত্রী সাথে আমার সম্পর্ক ভাল না ,আমি তার সাথে থাকতে চাই না বলে তোমাকে এ বিষয়টি জানাইনি। আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে  তোমাকে বিয়ে করবো।

পরে হাসপাতাল থেকে হোটেলে আসলে মনজুর হোসেনের সঙ্গে থাকা জোবায়েত আমার মোবাইল জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয় এবং মনজুরের সাথে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ভিডিও ও মেসেজ চ্যাটিং সকল আলামত ডিলিট করে দেয়। ভারতে ১২দিন অবস্থান করার পর ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে ফেরত আসি। এরপর ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ রবীন্দ্র সরোবরে দেখা হয় এবং পুনরায় স্বামী স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথা বলে জানায় ইউএনও। কিন্তু দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয়নি।

পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ৩ ফেব্রুয়ারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে নারী যৌন হয়রানী ও প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করি এবং ২২ ফেব্রুয়ারী হাই কোর্ট থেকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠাই। জন প্রশাসন মন্ত্রণলয়ের তদন্ত কমিটি গঠন হওয়ায় ১ এপ্রিল আমি নোটিশ পাই যে ৭  এপ্রিল তদন্ত কমিটি  টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যলয়ে আমাকে এবং মো. মনজুর হোসেনেকে নিয়ে বসবেন। সেখানে আমি আমার সকল তথ্য উপস্থাপন করি। পরবর্তীতে ৮ এপ্রিল দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্র পত্রিকায় আমাদেরকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয় । ৯ এপ্রিল তার কর্মস্থল থেকে তাকে ক্লোজ করা হয়।

এর ফলে ইউএনও মনজুর হোসেন আমাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে আসছে। এতে আমি চরম নিরাপত্তাহীনতা এবং মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছি। একই সাথে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিডিও দিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এমনকি আমার ছবি এডিট করে নিজ এলাকায় ভূয়া সাংবাদিক পাঠিয়ে মিথ্যা নিউজ করে সামাজিকভাবে হেনস্থা করে যাচ্ছে। গত ২১ মে ২০২২ আমি মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। আমি এ সব আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।

উল্লেখ্য, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক ১৪ মার্চ ২০২২ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। তদন্তের অংশ হিসেবে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগকারী কলেজছাত্রী, সাবেক ইউএনও মো. মনজুর হোসেন, তাঁর গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত শেষে সোহানা নাসরিন জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রাথমিকভাবে কলেজছাত্রীর সঙ্গে টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তবে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারেনি কমিটি।