দখল-দূষণ আর ময়লার ভাগাড়ে মরা খালে পরিণত বংশাই নদী

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৫:২২ পিএম, সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২ | ২৩০

ব্রহ্মপুত্রের অন্যতম একটি শাখা নদীর নাম বংশাই। এর উৎপত্তি জামালপুরের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে। আবার জনশ্রুতি রয়েছে বড় কোন ভূমিকম্প থেকে এ বংশাই নদীর উৎপত্তি। এক সময় এ নদী ছিল প্রমত্তা। ছিল নানা ঐতিহ্য। খ্যাতি ছিল দেশীয় সুস্বাদু নানা জাতের মাছের জন্য। অথচ এ নদীটি এখন দখল-দূষণ আর ময়লার ভাগাড়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। 

জানা যায়, ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদী ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে শুরু হয়ে জামালপুর-টাঙ্গাইল-গাজীপুর দিয়ে তুরাগ নদীতে মিশেছে। মধুপুর-ধনবাড়ীসহ টাঙ্গাইল অংশে রয়েছে ৭৬ কিলোমিটার। যার অধিকাংশই দখল দূষণের শিকার। ঐতিহ্য হারিয়ে কোথাও কোথাও মরা খালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে কয়েক মাস পানির প্রবাহ থাকলেও বাকী সময় ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকে। ফলে নদীর পানি দূষিত হয়ে দেশীয় জাতের মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী-মধুপুর হয়ে বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলা অতিক্রম করে বয়ে গেছে বংশাই নদী। নদীর পাশে ধনবাড়ীর হবিপুর, ভাইঘাট, বাঘিল ও মধুপুরের গোলাবাড়ী, কাতকাই, মধুপুর বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠা বাজার এলাকাগুলোতে জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা গড়ে তুলেছেন দোকান পাট ও বহুতল ভবন।  
বাসা বাড়ির আবর্জনা এবং পঃয়নিস্কানের পাইপ লাইন নদীতে সংযোগ করে দিয়েছে।  মধুপুর ব্রীজের নিচে থানার পাশেই নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলে স্তুপ করা হয়েছে। দেখে মনে হয় নদীতো নয়, যেন ময়লার ভাগাড়। 

স্থানীয় ব্যবসায়ী আফজাল হেসেন, কৃষক হাতেম আলী ও বৃদ্ধ হাসান আলীসহ অনেকেই জানান, এক সময় নৌকা যোগে মধুপুরের আনারস, কলা, কাঠাল, ধনবাড়ী উপজেলার ধান, পাট, সরিষা ও নানা ধরণের সবজিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নানা কৃষি পণ্য জল পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেত। নদী পথ কম খরচে পণ্য পরিবহন ও যোগাযোগের মাধ্যম ছিল। কালের বিবর্তনে দখল দূষণ আর ময়লা আবর্জনা ফেলায় অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে এ নদী। 
স্থানীয় মোবারক হোসেন ও আবু বক্করসহ  অনেকই জানান, এই এ নদী এক সময় অনেক প্রসস্ত ছিল । ধীরে ধীরে দু’পাশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না। নদীর এক পাশ ভাঙ্গে আর একপাশে চর উঠলেই এলাকার প্রভাবশালীরা গাছ লাগিয়ে ও নতুন করে বাঁধ দিয়ে কিছু মাটি ফেলে নিজেদের জমি বলে দাবি করে। অপরদিকে বাসা বাড়ী, হাট বাজারের ময়লা আবর্জনা ও  পঃয়নিস্কাশনের মল ফেলা হচ্ছে। ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। দখল  দূষণের হাত থেকে এ নদীকে সরকার যেন রক্ষা করে। 

মধুপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আজিজ জানান, ঐতিহ্যবাহী মধুপুরের বংশাই নদী যারা দখল করে বাড়ি ঘর ও স্থাপনা নির্মাণ করে বসবাস করছেন তাদের বর্জ্যেই আবার নদী দূষণ ও নদী ভরাট হচ্ছে। তিনি দখল দূষণের কবল থেকে বংশাই নদীকে রক্ষার দাবি জানান।

মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি বজলুর রশীদ খান চুন্নু বলেন, বাসা বাড়ীর আবর্জনার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্লিনিকের বর্জেও ভরাট ও দূষণ হচ্ছে নদী। ফলে জলজ উদ্ভিদ ও মৎস্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দখল দূষণের হাত থেকে এ নদী রক্ষার জন্য দাবি জানান।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি’র (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ জানান,  এ নদীটি চারটি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। মধুপুর গড়া ও মধ্যা লের সভ্যতা ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষার ক্ষেত্র ছিল এ বংশাই। বর্তমানে ময়লার ভাগাড় আর দখল দূষণে জর্জরিত। যা কাম্য নয়। এই গুরুত্বপূর্ণ নদীকে  বাঁচিয়ে রাখা অনস্বীকার্য। নদীর দখল, অবকাঠামো নির্মাণ, মৎস্য চাষ, দূষণ ও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে বাঁধাগ্রস্ত করে এমন কর্মকা- ফৌজদারি অপরাধ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমীন জানান, বংশাই’র দখল ও দূষণ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। দূষণকারীদের প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, সরেজমিনে গিয়ে এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা হবে। যাতে বাসা বাড়ীর ময়লা আবর্জনা  ও মলের পাইপ নদীতে সংযোগ থেকে বিরত থাকে।