পটল চাষে বদলে গেছে বাগাতিপাড়ার অনেক পরিবারের ভাগ্য

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৫০ পিএম, রোববার, ১৪ জুন ২০২০ | ৩৪১

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় অনেক পরিবার অল্প পুঁজির পটলের চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন। সারা বছর চাহিদা থাকায় এবং অন্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হওয়ায় পটল চাষের দিকে ঝুঁকেছেন এই অঞ্চলের চাষিরা। বিলগোপালহাটি গ্রামের পটল চাষী আব্দুল মমিন বলেন, নয় বছর আগেও তিনি মানুষের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন। ফসল করবার মত মাঠে তার নিজের এক শতাংশ জমিও নেই।

প্রথমে ১০ কাঠা জমি লিজ নিয়ে পটল চাষ করেন তিনি। এর পর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এখন দিনমজুরের কাজও করতে হয়না তাকে। আড়াই লাখ টাকার জমি লিজ নিয়ে ফসলের চাষ করছেন তিনি। এবছরও এক বিঘা সাত কাঠা জমিতে পটল আছে তার। তিনি আশা করছেন সব খরচ বাদ দিয়েও লাভ হবে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। তার মত এই উপজেলায় পটল চাষের মাধ্যমে আরো অনেক পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে পটলের আবাদ বাড়াতে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।

স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে জানা যায়, সময় মতো সেচ ও সার প্রয়োগসহ সব ধরণের যতœ সঠিক সময়ে করায় এই এলাকার পটল চাষিরা অন্য এলাকার চেয়ে ভালো ফলন পান। বাজারে তাদের পটলের কদরও বেশি। জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ, সার, মাচা তৈরিসহ সব মিলিয়ে পটলের আবাদে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। এক বার কট সুতা দিয়ে মাচা তৈরি করলে ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত পটল চাষ করা যায়। প্রথম বছর খরচ একটু বেশি হলেও পরের বছর গুলোতে তেমন একটা খরচ হয়না। আর অন্য যে কোনো ফসল চাষ থেকে পটল চাষ লাভ জনক। ফলন ভালো হলে এখান থেকে সব খরচ বাদ দিয়েও বিঘা প্রতি বছর শেষে প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা লাভ হয়। 

কৃষক আবু তালেবের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, পটল চাষের ফলে তার সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। ছেলেকে রাজশাহী সরকারি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে লেখা পড়া করাতে পারছেন। তাছাড়া এই অল্প জমিতে অন্য আবাদ করে ছেলেকে হয়তো শহরে রেখে পড়ানো তার পক্ষে সম্ভব হতো না। চলতি মৌসুমেও নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমিতে পটলের চাষ করেছেন তিনি।

সপ্তাহে প্রায় চার থেকে পাঁচ মণ পটল তুলে বাজারে বিক্রি করেন। গত চৈত্র মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত প্রতি কেজি ২০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারী দামে পটল বিক্রি করেছেন। তিনি আরো বলেন, পটলের ন্যায্য মূল্য পেলে এ অঞ্চলে পটল চাষের পরিধি আরও বাড়বে ।

পাইকার ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, বাগাতিপাড়া থেকে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ মণ পটল ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। সারা দেশেই এই অঞ্চলের পটলের চাহিদা থাকায় কৃষকরা লাভোবান হচ্ছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী জানান, বাগাতিপাড়া উপজেলায় এ বছর প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে পটলের চাষ হয়েছে। সেক্স ফেরোমন ট্র্যাপ (কীটনাশক ফাঁদ) ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন কৃষকদের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।

কারণ এতে কীটনাশকের ব্যবহার প্রায় অর্ধেক হ্রাস পেয়েছে। এছাড়াও  উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় আধুনিক পদ্ধতিতে পটল উৎপাদন এবং পোকা-মাকড় ও রোগ দমনে আইপিএম পদ্ধতিসহ বিভিন্ন কার্যকর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।