করোনা রোগী সাজানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০১:০৮ পিএম, বুধবার, ২৭ মে ২০২০ | ১৫৮

টাঙ্গাইলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সাজানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার সীমান্তবর্তী সখীপুর আর ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালির চালা গ্রামের ইচালীপাড়ায়। ভয় দেখানোসহ চাঁদা না পেয়ে ক্ষিপ্ত গ্রামটির দুই স্বেচ্ছাসেবকের বিরুদ্ধে শ্যালকের উপর হামলা চালানোর অভিযোগ থানায় দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগে জানা যায়, গত ২০ মে ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি ইউনিয়নের ফুলমালির চালা গ্রামের ইচালীপাড়ায় আসেন গ্রামটির বাসিন্দা ও সিলেটের সুনামগঞ্জ উপজেলার সেলিমগঞ্জ শাখা ব্রাক এর ম্যানেজার মো. সাদেকুর রহমান (৫৫)। (২৩ মে) খবর পেয়ে প্রতিবেশী ও পাশ^বর্তী সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন ও কুতুবপুর গ্রামের বাসিন্দা ও মৃত. ইসমাইল হোসেনের ছেলে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক আবুল কালাম আর মৃত.চাঁন মাহমুদের ছেলে নায়েব আলী তার বাড়িতে যান।

এ সময় তারা সিলেটের সুনামগঞ্জ উপজেলার সেলিমগঞ্জ শাখা ব্রাক অফিস থেকে তিনি সরাসরি বাড়িতে এসেছেন আর তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এমন অভিযোগ তোলেন। এক পর্যায়ে আর বাধ্য হয়ে সাদেকুর কর্মরত প্রতিষ্ঠান ব্রাক এ তার করা করোনা পরীক্ষায় আসা নেগেটিভ রিপোর্টটি তাদের দেখান। এতে তারা ফিরে গেলেও মুঠোফোনে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন স্বেচ্ছাসেবক আবুল কালাম। তা না হলে তাকে করোনায় আক্রান্ত রোগী বানিয়ে বাড়ি লকডাউনের হুমকি দেন। তবে এতেও দাবিকৃত টাকা আদায় না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বেচ্ছসেবক কালাম আর নায়েব ২৪ মে আবার তার বাড়িতে গিয়ে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে দিয়ে চলে যান। এ সময় টাঙ্গানো পতাকা নামিয়ে রাখেন ওই ব্রাক কর্মকর্তা।

এছাড়াও ওই কর্মকর্তা বাড়িটি ঘাটাইল উপজেলা হওয়া স্বত্তেও তারা বাড়িটি লকডাউন করতে ২৪ মে দুপুরে সখীপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে নিয়ে ওই বাড়িতে যান ওই স্বেচ্ছাসেবকরা।

এ সময় ওই কর্মকর্তার করা করোনার নেগেটিভ রিপোর্টটি দেখেন। তবে এ সময় পুলিশ আর স্থানীয় ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবক আবুল কালাম ব্রাক কর্মকর্তার স্ত্রী হাসিনাকে ধাপ্পর মারেন। ব্রাক কর্মকর্তার স্ত্রীকে মারধর করাসহ চাঁদা দাবির বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশ কর্মকর্তা অভিযুক্ত কালামকে ব্রাক কর্মকর্তা স্ত্রীর পা ধরে ক্ষমা নেয়াসহ পূনরায় তাদের বিরক্ত না করার জন্য সাবধান করেন। তবে এ ঘটনার পরই বিকেলে স্বেচ্ছাসেবক নায়েব আলীর হুকুমে ওই ব্রাক কর্মকর্তার শ্যালক ও সখীপুর উপজেলা কালিয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামের মো. আফসার মাস্টারের ছেলে কীটনাশক ব্যবসায়ী মো.মিনহাজ উদ্দিনের উপর দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান স্বেচ্ছাসেবক আবুল কালাম।

চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করে স্বেচ্ছাসেবক আবুল কালাম বলেন, ব্রাক কর্মকর্তার বাড়ি ঘাটাইল উপজেলায় হলেও তিনি ওই কুতুবপুর গ্রাম্য সমাজভুক্ত। এছাড়াও সিলেট থেকে বাড়িতে আসায় তাকে বাহিরে না আসার জন্য সতর্ক করতে গিয়েছিলেন সে আর নায়েব আলী নামের আরেকজন স্বেচ্ছাসেবক। তবে ওই ব্রাক কর্মকর্তা তাদের নিষেধ অমান্য করায় ঈদের আগের দিন গত ২৪ মে পুলিশ কর্মকর্তা, দফাদার আর ইউপি সদস্যদের নিয়ে ওই বাড়িতে যান। এ সময় ওই ব্রাক কর্মকর্তা স্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ওই চাঁদা দাবির কথা বললে উত্তেজিত হয়ে সে তার স্ত্রীকে একটি ধাপ্পর মারেন। এ সময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা এ অপরাধের জন্য তাকে মারধর করাসহ ব্রাক কর্মকর্তার পায়ে ধরে মাপ চাওয়ান।

এ ঘটনায় আহত কীটনাশক ব্যবসায়ি মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বাড়িতে এসে আমার বোনের গায়ে হাত তোলাসহ দুলাভাই ওই ব্রাক কর্মকর্তাকে এমন হয়রানী করার খবর পান। এ সময় ওই বাড়িতে আসার পথে স্বেচ্ছাসেবক নায়েব আলী হুকুমে চাঁদাবাজ আবুল কালাম আমাকে ধারালো দাঁ দিয়ে এলোপাথারী কোপাতে থাকেন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হামলায় আমার বাম হাতের হাঁড় কেটে যাওয়াসহ বাম কানে মারাত্মক আঘাত লাগে। এ ঘটনায় সখীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মজিবর ফকির বলেন, ব্রাক কর্মকর্তার বাড়িটি ঘাটাইল থানায় হলেও তারা সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রাম্য সমাজভুক্ত। এছাড়াও তিনি সিলেট থেকে বাড়িতে আসায় তাদের সতর্ক করতে থানা পুলিশ, দফাদার, সাবেক ইউপি মেম্বারসহ তারা ওই বাড়িতে যান। তবে এ সময় আকস্মিক স্বেচ্ছাসেবক কালাম ওই ব্রাক কর্মকর্তা স্ত্রীর গায়ে হাত তোলে। এ ঘটনায় হতভম্ব উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাসহ তারা ওই স্বেচ্ছাসেবকের বিচার করাসহ ওই মহিলার কাছে ক্ষমা চাওয়ানো হয়। এক পর্যায়ে ওই ব্রাক কর্মকর্তা তাদের করোনার রিপোর্ট বলে একটি কাগজ দেখান।

এ প্রসঙ্গে সখীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওমর ফারুক বলেন, অন্য একটি মামলা তদন্ত করতে তিনি ওই এলাকায় যান। এ সময় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক তাকে অভিযোগ করেন সিলেট থেকে একজন ব্যক্তি গ্রামে এসেছেন এবং সে যত্রতত্র ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন। তাকে সতর্ক করার পরও বলেও তিনি তাদের কথা না মানচ্ছেন না। এ কারণে তিনি ওই বাড়িতে যান। এ সময় তার উপস্থিতিতে ওই স্বেচ্ছাসেবক বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ওই ব্রাক কর্মকর্তা স্ত্রী গায়ে হাত তোলেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওই স্বেচ্ছাসেবককে মারধর করাসহ লাঞ্ছিত নারীর অনুমতিতেই তার পা ধরে ক্ষমা চাওয়ান। তবে ওই ব্রাক কর্মকর্তার বাড়িটি ঘাটাইল থানায় এটি তিনি জানতেন না।

পরে ওই দিন বিকেলেই এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবার ওই স্বেচ্ছাসেবক ধারালো অস্ত্র দিয়ে ব্রাক কর্মকর্তার শ্যালকের উপর হামলা চালায়। হামলার অভিযোগটি তারা পেয়েছেন। হামলার সার্টিফিকেট হাতে পাওয়া মাত্রই মামলা দায়ের করাসহ অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান তিনি।