‘শান্তি প্রক্রিয়ায়’ যুক্তরাষ্ট্রকে আর মধ্যস্থতাকারী মানা যাবে না: মাহমুদ আব্বাস

আলোকিত প্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৯ পিএম, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | ৩০২

মধ্যপ্রাচ্য ‘শান্তি প্রক্রিয়ায়’ যুক্তরাষ্ট্রকে আর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে না মানার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরুজালেমকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দখলদার ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করায় পাল্টা এ ঘোষণা দেন তিনি। জেরুজালেম ইস্যুতে বুধবার তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন-ওআইসি’র বিশেষ সম্মেলনে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, জেরুজালেমকে ফিলিস্তিনের রাজধানী ঘোষণা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে কোনো শান্তি বা স্থিতি ফিরবে না। ওয়াশিংটন তার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা আগের সমঝোতাগুলো অনুসরণ করবে না।

এসময় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে জেরুজালেমকে ট্রাম্পের ইসরাইলি রাজধানী ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান মাহমুদ আব্বাস।

তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে ‘বড় অপরাধ’ এবং ‘আন্তর্জাতিক আইন ও স্বাক্ষরিত চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে আখ্যায়িত করেন। ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সমঝোতা তৎপরতায় মধ্যস্থতার অধিকার হারিয়েছে। তারা এখন সর্বাত্মকভাবে ইসরাইলের পক্ষভুক্ত। ট্রাম্পের একক সিদ্ধান্ত জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানীর হিসেবে কোনো বৈধতা দেবে না।

তিনি বলেন, ‘পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করা ছাড়া কোনোভাবেই ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র মেনে নেয়া হবে না। প্রয়োজনে জেরুজালেম নিয়ে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সব সংস্থা থেকে ফিলিস্তিন তার সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেবে।’

সম্মেলন থেকে আব্বাস এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার দাবি করেন যা ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করবে। পাশাপাশি তিনি বিশ্বকে আন্তর্জাতিক আইন না মানা পর্যন্ত ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান।

সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান পৃথিবীর সমীকরণ পরিবর্তনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির আহ্বান জানান।

ইসরাইলকে ‘দখলদার ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতির মার্কিন সিদ্ধান্তের কোনো কার্যকারিতা নেই।’

তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ট্রাম্প কর্তৃক জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনবিরোধী এবং আমাদের মুসলিম সভ্যতার ওপর চরম আঘাত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি ইসরাইলের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিদানমাত্র।’

তিনি বলেন, একমাত্র ইসরাইল ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। পৃথিবীর আর সব রাষ্ট্র এটা প্রত্যাখ্যান করেছে। এ অবৈধ ও অন্যায্য ঘোষণা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরে আসারও আহ্বান জানান এরদোয়ান।

তিনি বলেন, ‘আমরা হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী নয় কিংবা আমাদের কাছে পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র নেই। কিন্তু আমরাই সত্য ও ন্যায্যতার ওপর আছি।’

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের কাছে জেরুজালেম হল রেড লাইন। জেরুজালেমে ইসরাইলের বর্ণবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে।’

উদ্বোধনী বক্তব্যে ফিলিস্তিনে ইহুদি দখলদারিত্ব সম্প্রসারণের বিভিন্ন ধাপের মানচিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি ভূমি সঙ্কোচনের এই কার্যক্রম চলছে ১৯৪৮ সাল থেকে।

প্রসঙ্গত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী এবং তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তরের ঘোষণা দেন।

এ ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, তুরস্ক, ইরান, রাশিয়া ও চীনের পাশপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থা ট্রাম্পের এই একতরফা ঘোষণার নিন্দা জানায়। অবশ্য ইসরাইলের মিত্র ভারত এ ইস্যুতে চুপ রয়েছে।

জেরুজালেম সংকট নিয়ে তুরস্কের ঐতিহাসিক নগরী ইস্তাম্বুলে শুরু হওয়া এই শীর্ষ সম্মেলনে ওআইসিভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশের ৪৮ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছে। এতে অংশ নিয়েছেন ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো।

তবে সম্মেলনে অংশ নেয়নি সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের কোনো রাষ্ট্র কিংবা সরকার প্রধান। তারা সম্মেলনে মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। সৌদি আরবের সম্মতিতে ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছেন এমন অভিযোগের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটল।