নাটোরে ২৩ ডিসেম্বর থেকে নদীর অবৈধ দখল স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু

নাটোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ | ২৪৫

আগামী ২৩ ডিসেম্বর সোমবার থেকে নাটোরের নদী দখল করে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে অবৈধ স্থাপনার তালিকা প্রনয়ণ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

একইসাথে নদীসমূহের জরিপ কাজ সম্পন্ন করে সীমানা চিহ্নিতকরণ ও অবৈধ দখলদারদের তালিকা প্রনয়ণ করে তাদের অবৈধ স্থাপনা স্বেচ্ছায় সরিয়ে নিতে নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় জেলা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন এই কাজ সম্পন্ন করছে।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নারদ নদের নাটোর সদর উপজেলা এলাকা, বড়াল নদীর বড়াইগ্রাম উপজেলা এলাকা এবং নন্দকুজা নদীর গুরুদাসপুর উপজেলা এলাকায় ২৩ ডিসেম্বর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকায় অভিযান চলবে।

উচ্ছেদ অভিযানকে সফল করতে নদী রক্ষা কমিটির সভায় প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের পেশাজীবী, জিও-এনজিও এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের মতামত গ্রহন ও সহযোগিতা চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ এর সভাপতিত্বে এসব সভায় নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভূতপূর্ব ঐক্যমত্য তৈরী হয়।

নাটোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করতে সকল পেশাজীবী একজোট হয়েছে। কোন প্রতিবন্ধকতা এই কার্যক্রমে বাঁধা হয়ে উঠতে পারবেনা।

নদীই বাংলাদেধের প্রাণ। তাই দখল আর দুষণের হাত থেকে নদীকে বাঁচাতেই হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন নদী বাঁচাও আন্দোলন নাটোর জেলা কমিটির সভাপতি ফারাজী আহম্মদ রফিক।

শিক্ষাবিদ অলোক মৈত্র বলেন, দখল আর দুষণের হাত থেকে নদীকে রক্ষা করে নদী ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।

নাটোর শহরের নীচাবাজার এলাকায় ১১টি স্থাপনা, বড়াইগ্রামের আটঘড়িয়া স্লুইস গেট এলাকার ১৮টি স্থাপনা এবং গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় বাজার এলাকার ১০টি স্থাপনা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে।

প্রশাসনের তৎপরতার কারনে জনসাধারণের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নিতে ইতিবাচক বোধ তৈরী হয়েছে। অনেকেই নিজের দায়িত্বে এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নারদ নদের কানাইখালী জেলেপাড়া এলাকায় তোফায়েল মিস্ত্রিকে একতলা বাড়ী ভাঙতে দেখা গেল।

তিনি বলেন, নদীর জায়গাতে বাড়ী করে ভুল করেছি, এখন ভুল শুধরানোর সময়। কান্দিভিটা এলাকার জ্যো¯œা বেগম নামে এক বিধবা তাঁর চালাঘর সরিয়ে নেওয়ার কাজ করতে করতে বলেন, আমি সহায় সম্বলহীন বিধবা মানুষ। নিরুপায় হয়ে নদীতে বাড়ী বানিয়ে বাস করছিলাম। এখন আবার উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছি। আশাকরি সরকার আমাদের পূনর্বাসনের কথা ভাববে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোঃ শাহনেওয়াজ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জনবল সহযোগে আমরা প্রায় প্রতিদিনই নদীর জরিপ কাজ করে সীমানা চিহ্নিত করছি। 

নাটোর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবু আহসান বলেন, জরিপের মাধ্যমে নদীর সীমানা চিহ্নিত করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের নিয়মিত নোটিশ দেওয়া হচ্ছে।

ঐ নোটিশের প্রেক্ষিতে তারা সাতদিনের মধ্যে তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নিলে ‘লোকাল অথরিটি ল্যান্ড এন্ড বিল্ডিংস অর্ডিন্যান্স ১৯৭০’ এর ৭ ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী মামলা দায়ের ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহন করা হবে।

নদীর পারের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের লক্ষ্যে সহায়ক সকল কার্যক্রম নিয়মিতভাবে করা হচ্ছে বলে জানান বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার পারভেজ।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নাটোর জেলাসহ এই অঞ্চলের নদীকে সচল করতে বড়াল বেসিন ভিত্তিক এক হাজার ৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হয়েছে।

এরমধ্যে নারদ নদের নাটোর শহরের পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে নদীর বাঁধ, ওয়াকওয়ে, সিটিংপ্লেস, বনায়নসহ সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন পর্যায়ে গেলে নারদসহ নদীগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোছাঃ শরীফুন্নেছা বলেন, নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর নিজস্ব সীমানায় ফিরিয়ে আনা হবে।

নিরবচ্ছিন্নভাবে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ স্থাপনাই উচ্ছেদ করতে সব রকমের প্রশাসনিক পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বলেন, নদীর সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

সকলের সহযোগিতায় এই কাজের সফলতায় আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি হৃতদরিদ্রদের পূণর্বাসন, নদী খনন এবং নদীর পারে বনায়ন ও সৌন্দর্য বর্ধনের মত নান্দনিক কাজও করা হবে।

এক কথায় নতুন পানি আইন-২০১৩ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনাকে কার্যকর করা গেলে দেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি পৌঁছে