সমকামিতার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধাকে আটক

রুবেল ইসলাম,মিঠাপুকুর
প্রকাশিত: ১২:০১ এএম, শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ২০১

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় জোড়পূর্বক সমকামিতার অপরাধে বকুল হোসেন নামে বীরমুক্তিযোদ্ধাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ।

বৃহস্পতিবার দুপুড়ে অভিযোগের ভিত্তিতে মিঠাপুকুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা অফিস থেকে আটক করে তাকে থানায় নিয়ে আসেন,তার বিরুদ্ধে সমাজ নষ্টকারী ‘সমকামিতা অপরাধের অভিযোগ’ রয়েছে এলাকাবাসীর ।

অভিযুক্ত বকুল হোসেন উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের হরি নারায়নপুর গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের পুত্র,যাহার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং ৫০৬। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার কারণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে সাময়িক সনদপত্র প্রদান করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রযোজ্য সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য করেন।

গত মঙ্গলবার ৯ সেপ্টেম্বর আনুমানিক রাত নয়টার সময় একই গ্রামের (ছদ্মনাম)তুষার মাহমুদ (১২) নামের এক শিশু ছেলেকে ছলেবলে পাশের নির্জন সুপারী বাগানে নিয়ে গিয়ে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে বকুল।

তুষার প্রতিবেদককে জানায়-আমি সহিদুল মেম্বারের বাসার সামনে পুল আছে ,সেই পুলে বসে আছি। এমন সময় বকুল এসে আমাকে বলে আমার সাথে আয়তো একটা কাজ আছে। তখন আমি তার সাথে যাই,সে আমাকে নির্জন সুপারি বাগানে নিয়ে যায় সেখানে সে আমাকে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। তখন আমি এঘটনা কাঁদতে কাঁদতে আমার পরিবারকে জানাতে চাই তখন আমাকে অর্থের লোভ থাকায়।

এমন সময় রাস্তার পাশ চারপাশে ঘেরা সুপারি বাগান থেকে উচ্চস্বরে আওয়াজ শুনতে পান সিহাব ও মাহিন।

সিহাব বলেন-আমি ও মাহিন যখন আমাদের এলাকার দোকান থেকে বাড়ি ফিরছি তখন দুইটা লোকের কথাবার্তার আওয়াজ শুনি। তখন আমরা মনে করি আমাদের বাড়িতে তো কবিরাজরা ঝাঁরফুক এর কাজ করছে তারা মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরণের ঢেঁকিশাকের ডাল বা অন্যান্য পাতা নিয়ে আসে। আমরা বাড়িতে যাই,বাড়িতে গিয়ে দেখি কবিরাজরা বাড়িতেই আছে। তখন আমরা বলি কিরে! সুপারি গাছও তো ছোট আর এখন তো সুপারিও নেই,তবে পেঁপে গাছে পেঁপে আছে তাহলে কি?কেউ পেঁপে চুরি করছে? এই ভেবে লাইট নিয়ে সেখানে দুইজন দুইদিকে যাই। আমি এগিয়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে বলি কে ওখানে? তখন দৌড় দেয় বকুল আর ন্যাংটা তুষারকে জিঙ্গেস করলে সে বলে আমি পায়খানা করার জন্য আসছি। দৌড়ে ঝোপের ভেতর লুকায় বকুল, এগিয়ে গিয়ে লাইট জ্বালিয়ে হাতেনাতে ধরি বকুলকে।

যখন বলি দাদা আপনার এগুলো কাম,তখন আমার পায়ে পড়ে এই কথা মানুষকে বলতে নিষেধ করে কারণ সে একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তার অনেক মানসম্মান রয়েছে।আমি বলি কয়েকবার বিচার করা হয়েছে তখন আমার পা ধরে কাঁদতে থাকে এবং তাকে বাড়ি যেতে বলি এবং তুষারকেও বাড়ি যেতে বলি। পরের দিন বুধবার সকালে আমরা গেলাম দাদার কাছে যে দাদা তুই এগুলো কি শুরু করছিস ? এর আগেও আপনার এইসব কুকর্মের কারণে গ্রামে একটি মাদ্রাসা ছিলো সেটিও বন্ধ হয়েছে। তখন সে আমাদের হুমকি দেয় এবং আমাদের নামে মামলা করার কথা বলে-সে বলে আমরা নাকি একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে মিথ্যা অপবাদ ও অভিযোগ করছি,সেজন্য সে ডিসি,এসপির কাছে অভিযোগ করবে,আমাদের দেখে নেবে এবং মানহানীর মামলা করবে বলে জানায়।

তখন আমরা যারা ভুক্তভোগী তাদেরকে ডাক দিয়ে নিয়ে কৌশলে এবং যেসব ছেলেকে অকাম করেছে তাদের কথা রেকর্ড করি নেই। তখন আমরা পেলাম দেড় মাসে সে তিনজন শিশু ছেলেকে এভাবে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করছেন। তারা হলেন রোহান,মওলা ও রনি(সব ছদ্মনাম)এদের কাছ থেকে আমরা সব বিষয় শুনে রেকর্ড করে নেই এবং এলাকাবাসীকে অবগত করি। চাঁনমিয়া নামে একজন আমাদের দশ হাজার টাকা দিতে চায় আর এই বিষয়টি প্রকাশ করতে নিষেধ করে।

নাম প্রকাশে অনিশ্চুক এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়-এর আগে কয়েকবার তার এ ধরণের কর্মকান্ডের ওপর বিচার করে মিমাংসা করা হয়েছে।আমাদের গ্রামে প্রায় ১০/১২জন হাফেজ রয়েছে।গ্রামে একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসা ছিলো। সে মাদ্রাসার বাচ্চাদের জোড়পূর্বক কিংবা কৌশলে এভাবে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে যার ফলে বাচ্চারা তাদের অভিভাবকদের গিয়ে বলে এবং এক পর্যায়ে মাদ্রাসাটি বন্ধ হয়ে যায়।এই ব্যক্তি যদি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হইত তাহলে এধরণের কাজ করতে পারতেন না। তিনি যেভাবে ছেলেদের ধর্ষণ করেন না জানি কতো নারী তার মাধ্যমে ধর্ষিতার স্বীকার হয়েছে।

পাঁচ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম জানান-বকুল এর আগেও এধরণের ঘটনা ঘঠিয়েছে তাহা গ্রাম্য শালিশী বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে।তিনি আরোও বলেন এর আগে পার্শ্ববতী উপজেলার মধুরাপুর গ্রামে এক নারী কেলেঙ্কারিতে তাকে গণপিটুনী দেওয়া হয়েছিলো।

এঘটনায় সমকামীতার স্বীকার তুষারের মা বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।তিনি বলেন-প্রথমে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর কোনও এসআই তাকে গ্রেফতার করার সাহস পায়না। কারণ তারা মনে করেন মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করার করে তাহার চাকুরী চলে যেতে পারে। পরে এসআই মোঃ ইদ্রিস আলীকে দায়িত্ব দিলে সে গিয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে গিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে আসেন।

ডি-সার্কেল(মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ)সহকারী পুলিশ সুপার হাফিজার রহমান জানান- তাহার নামে একাধিকজন অভিযোগ করেছে। যাহার ফলে তাকে পুলিশ আটক করেছে ,মামলা রেকর্ড করে তাকে চালান দেওয়া হয়েছে।

মিঠাপুকুর থানার অফিসার ইনচার্জ জাফর আলী বিশ্বাস জানান-অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে দায়িত্বরত কর্মকতা গিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে।