দুই সিটির চার লাখ বাড়ি ডেঙ্গু ঝুঁকিতে!

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:০৩ পিএম, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০১৯ | ২৪৯

► প্রবেশাধিকার না থাকার অজুহাতে বাসাবাড়িতে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হয় না 
► সচেতনতা বাড়ানোই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের উপায় মনে করে সিটি করপোরেশন 
► বাসায় মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ চালানোর জনবল-অর্থ কোনোটাই নেই বলে দাবি 
► গৃহকর দিলেও চার লাখ বাসায় এডিস মশা অনিয়ন্ত্রিত

বাসাবাড়ির পরিষ্কার পানিতে জন্ম নেওয়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্মসূচি নেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। প্রবেশাধিকার না থাকার অজুহাতে বাসাবাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে না সংস্থা দুটি। ফলে দুই সিটি করপোরেশনকে গৃহকর দেওয়া চার লাখ বাড়ি রয়েছে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস মশার ঝুঁকিতে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে শুধু সচেতনতা বাড়ানোর দিকেই মনোযোগ সংস্থাগুলোর।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) নিয়মিত গৃহকর পরিশোধ করে দুই লাখ ৮৮ হাজার ৯১২টি বাড়ির মালিক। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে (ডিএসসিসি) গৃহকর দেয় এক লাখ ৬৫ হাজার বাড়ির মালিক। মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য গত অর্থবছরে দুই সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ ছিল ৪৭ কোটি টাকা। ওই অর্থ দিয়ে মশার ওষুধ কেনা, কচুরিপানা ও আগাছা পরিষ্কার, ওষুধ ছিটানোর মেশিন কেনা এবং মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মনিটরিং করে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। মশক নিয়ন্ত্রণ কাজ পরিচালনার জন্য ডিএসসিসির ৪২৯ জন এবং ডিএনসিসির ২৮০ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন। মশার লার্ভা ধ্বংস করার জন্য ভোরে লার্ভিসাইড এবং বিকেলে ফগার মেশিন দিয়ে অ্যাডাল্টিসাইড প্রয়োগ করার কথা। মশক কর্মীদের নিয়মিত কাজ নিয়েও নাগরিকদের অভিযোগ পুরনো। মশক নিধন কাজ নিয়মিত তদারকির জন্য সম্প্রতি দুই সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সচেতন ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করেছে, কিন্তু তাতেও তেমন কোনো ফল মিলছে না।

জুরাইন এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জুরাইন, দনিয়া ও শ্যামপুর এলাকায় অনেক পরিত্যক্ত বাড়ি রয়েছে। এসব বাড়িতে পরিষ্কার পানি জমে থাকে বর্ষাকালে। এখানে মশক কর্মীদের দেখা যায় না। এসব জায়গায় এডিস মশা বংশবিস্তার করতে পারে। আর বাসাবাড়িতে মশক কর্মীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।’

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, বাসার বাইরের উন্মুক্ত জলাশয়, পরিত্যক্ত স্থান, পার্ক ও খেলার মাঠ এবং নর্দমায় ছিটানো হয় মশার ওষুধ। কিন্তু নাগরিকদের বাসাবাড়িতে মশক কর্মীদের প্রবেশাধিকার নেই। তাই এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজ নগরবাসীর নিজ উদ্যোগে করতে হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের জন্য আলাদা কোনো ওষুধও নেই সিটি করপোরেশনের কাছে। এ ছাড়া বাইরে থেকে কিনতে পাওয়া যাবে এমন কোনো ওষুধের নামও জানাতে পারেনি সংস্থাগুলো। পরিষ্কার পানি জমতে পারে এমন সব স্থান পরিষ্কার রাখার বিষয়ে নগরবাসীকে সচেতন করাকেই একমাত্র উপায় হিসেবে দেখছে সিটি করপোরেশন। সে লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, লিফলেট বিতরণ, গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ নানা ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে। এডিস মশার প্রজনন মৌসুমেও এর বাইরে কোনো কর্মসূচি নেই।

সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়লেও এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে বাসাবাড়িতে নিয়মিত কোনো কর্মসূচি নেয়নি কোনো সংস্থাই। জনগণ সচেতন না হলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তাদের মতে, ডিএনসিসি এলাকায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর থাকায় ওই সব এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়। এ ছাড়া ডিএসসিসি এলাকায় বিভিন্ন সরকারি অফিস শুক্রবার ও শনিবার বন্ধ থাকায় ওই সব স্থানে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করা কঠিন বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। 

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোনিনুর রহমান মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাসাবাড়িতে মশার ওষুধ ছিটানোর বিধান নেই। ওষুধের রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তাই নাগরিকদের সচেতন করতে আমরা ক্যাম্পেইন ও অ্যাডভোকেসি পরিচালনা করছি। নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। এ ছাড়া ওষুধ ছিটানোর চেয়ে বাসাবাড়ির ফুলের টব, টয়লেটের কমোড, ফ্রিজে জমে থাকা পানি এবং অন্যান্য পাত্রের পরিষ্কার পানি পরিবর্তন করলেই মশা বংশবিস্তার করতে পারে না।’

মিরপুর ১ নম্বর সেকশন এলাকার তুরাগ সিটির বাসিন্দা শেখ জিনিয়া বলেন, ‘এডিস মশা তো বাসার নিচে গ্যারেজের পানিতেও থাকতে পারে না। এ ছাড়া বাসার ভেতরেও মশার ওষুধ ছিটানো উচিত। নাগরিক হিসেবে আমি তাই মনে করি।’

প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারীরা প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করতে পারলে মশক কর্মীরা কেন বাড়িতে গিয়ে ওষুধ ছিটাতে পারেন না, জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের সেই অর্থ ও জনবল কোনোটাই নেই। তবে কোনো প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা চাইলে আমরা সরবরাহ করব। এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে আমরা স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করছি। সচেতনতা বাড়ানোর সব অ্যাপ্রোচ অনুসরণ করার চেষ্টা করছি আমরা।’