আট বছর পর বাবা মাকে ফিরে পেলো নাজিম


আট বছর আগে ঢাকার বাড্ডা কালাচানপুর লিচু বাগান এলাকায় খেলতে গিয়ে হারিয়ে যায় নাজিম হাওলাদার (১৭)। ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে তাকে বাড্ডায় থানায় দেয়া হয়।
সেখান থেকে আদালতের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কারাগার পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শিশু কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে নাজিমকে টাঙ্গাইল সরকারি শিশু পরিবার বালকে আনা হয়। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে শিশু পরিবারের শিক্ষার্থীরা বাবা মাসহ আত্মীয় স্বজনের কাছে গেলেও নাজিমসহ আরো কয়েক শিশু পরিবারে থেকে যায়। এ কারণে নাজিম সব সময় অন্য মনস্ক ও হতাশা থাকতো। এ পরিস্থিতি দেখে সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. সৌরভ তালুকদার তাদের পরিবারের খোঁজ করতে থাকেন। লিফলেট, মাইকিংসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পরিবারের খোঁজ করতে থাকেন। গত মঙ্গলবার সৌরভ তালুকদারসহ তার অফিসের অন্যান্য সদস্যরা ঢাকায় গিয়ে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে নাজিমের পরিবারের সন্ধান পায়।
পরে তাদের দুজনের তথ্য যাচাই বাচাই করে বৃহস্পতিবার (০৭ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নাজিম হাওলাদার বরিশালের বাগেরগঞ্জ উপজেলার মধ্যম মহেষপুর গ্রামের লিটন হাওলাদারের ছেলে। তারা দুই ভাই এক বোন।
নাজিমের বাবা লিটন হাওলাদার বলেন, আমি ৩০ বছর যাবত ঢাকায় রিক্সা চালাই। গত ৮ বছর আগে ঢাকার কালাচানপুর লিচু বাগান এলাকায় খেলতে গিয়ে নাজিম হারিয়ে যায়। পরদিন থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হলেও তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। গত পাঁচ দিন আগে তিনি ঢাকা রিক্সা চালানোর সময় লিফলেট দেখে তার ছেলেকে চিনতে পেরে মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করেন।
লিটন আরো বলেন, আমার ছেলেকে ৮ বছর পর ফিরে পাবো তা কল্পনাও করি নাই। আমার বড় ছেলে হারিয়ে যাওয়ায় আমার অনেক কষ্ট হয়েছে। এতো দিন পর আমার ছেলেকে ফিরে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।
নাজিম হাওলাদার বলেন, ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে যখন আমার সহপাঠীরা বাড়িতে যেত বা অনেকে বাবা মা শিশু পরিবারে আসলে তখন আমার বাবা মার কথা মনে হতো। এতে আমার খুব কষ্ট হতো। আমিও ভাবতাম আমার বাবা মাকে ফিরে পাবো। মা বাবাকে ফিরে পেয়ে দীর্ঘ দিনের কষ্ট দূর হলো। যাদের মাধ্যমে আমার বাবা মাকে ফিরে পেলাম সেই সমাজ সেবা বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি আমি খুব কৃতজ্ঞ। তাদের মঙ্গল কামনা করি।
সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. সৌরভ তালুকদার বলেন, অনেকেই বিভিন্ন সময় বাড়িতে যায়। আবার অনেকের বাবা মা তাদের সন্তানদের দেখতে আসেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িতেও যায় না। তাদের বাবা মাও দেখতে আসে না। তাই তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। সেই ধারাবাহিকতা দুই সপ্তাহ আগে থেকে নাজিমের ছবি দিয়ে লিফলেট করে ঢাকায় খুঁজতে থাকি। আমার কাজে অফিসের কর্মচারীরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। খেয়ে না খেয়ে নাজিমের পরিবারের খোঁজ করেছি। অবশেষে গত মঙ্গলবার তার পবিবারের সন্ধান পাই। তাদের তথ্য যাচাই বাছাই করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে। বাকিদেরও পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, হারিয়ে যাওয়া কিশোর নাজিমকে সমাজ সেবা বিভাগ তার বাবা মার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা খুবই প্রসংশনীয়। এই মানবিক কাজে সাথে জড়িত সমাজ সেবা কর্মকর্তা সৌরভ তালুকদারসহ সকল কর্মকর্তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান। এছাড়াও সকল মানবিক কাজে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাজ সেবা বিভাগকে সকল প্রকার সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন। এক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সমাজ সেবা কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণাও দেন তিনি।
কিশোর নাজিম হাওলাদারকে হস্তান্তরকালে জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আমিনুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান, জেলা সমাজ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শাহআলম, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি জাফর আহমেদ, সরকারি শিশু পরিবার বালকের উপ-তত্ত্বাবধায়ক মো. সৌরভ তালুকদার, নাজিম হাওলদারের বাবা লিটন হাওলদারসহ তার পরিবারের সদস্যরা।