হুমকিতে শিক্ষাব্যবস্থা
বন্যায় ভূঞাপুরের টেপিবাড়ী হাই স্কুলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি


বন্যার পানি কমতে থাকায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হয়েছে। আকস্মিক বন্যা কাটিয়ে স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। তবে পানি নামতে শুরু করার সাথে সাথে ভেসে উঠছে ক্ষত চিহ্ন।
জানা গেছে, যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১৭ জুলাই (বুধবার) উপজেলার তাড়াই গ্রামের নদীরক্ষা বাঁধ রাতের আঁধারে ভেঙে গিয়ে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। প্রবল বেগে নদীর পানি প্রবেশ করায় নিমিষেই পৌর এলাকার টেপিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক ভেঙে যায়।
এ সময় তীব্র স্রোতে দুইটি অর্ধ পাকা টিনের ঘর, নবনির্মিত ওয়াস বল্কসহ বিদ্যালয়টির বিভিন্ন আসবাবপত্র মুহূর্তেই ভেসে গেছে। এছাড়া বিদ্যালয় মাঠ দিয়ে পানির স্রোত প্রবাহিত হওয়ায় মাঠ গভীর খাদে পরিণত হয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছে বিদ্যালয়ের তিন তলা ও একতলা বিশিষ্ট ভবন।
সরজমিনে দেখা যায়, টেপিবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও মাঠ দিয়ে এখনো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানির স্রোতে বিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশ মাঠটি এখন গভীর খাদে পরিণত হওয়ায় সেখানে জাল ফেলে মাছ ধরছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ধীরে ধীরে পানি নেমে যাওয়ায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিত্র। উচ্চ বিদ্যালটির তিনতলা ভবনটির সিঁড়ির নিচ দিয়ে প্রায় ১০ ফিট গভীর হয়ে মাটি চলে গেছে। গর্তে পানি জমে ডোবার রূপ ধারণ করেছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। ফলে পানি নেমে গেলেও হুমকিতে রয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা।
সরজমিনে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টির একটি তিনতলা ভবনের পাশাপাশি আরেকটি ২কক্ষ বিশিষ্ট পাকা ভবন রয়েছে যেটি বিজ্ঞানাগার নামে পরিচিত। যা এখন ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের কলাম থেকে ভীম ফেঁটে গেছে। এছাড়া বৃষ্টি হলেই ছাদ দিয়ে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে। ফলে ভবন ভেঙে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশংঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষকরা।
এদিকে ক্লাস কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে বিদ্যালয় মাঠের পূর্ব প্রান্তে ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সম্প্রতি ১০০ হাত দুটি অর্ধ পাকা টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। যা এবার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এমন অবস্থায় বিদ্যালয়টিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে তা জানেন না কেউ।
টেপিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খায়রুল ইসলাম জানান, বন্যার পানিতে বিদ্যালয়টির বহুবিধ ক্ষতি হয়েছে। একটি নবনির্মিত ওয়াশবল্ক ও দুটি অর্ধ পাকা টিনসিড ঘরসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র, টেবিল-চেয়ার, ব্যাঞ্চসহ ঘরের সব আসবাবপত্র পানির ¯্রােতে ভেসে গেছে। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠও এখন পুকুরে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবনটির সিঁড়ির নিচ দিয়ে প্রায় ১০ ফিট গভীর হয়ে মাটি চলে যাওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে। বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি পূর্ণনির্মাণ ও নতুন ভবন তৈরি না হওয়ায় এটি এখন সংস্কারেরও অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
নতুন একটি ভবন নির্মাণ না করা হলে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে। বাঁধ ভেঙে এবার আকস্মিক বন্যায় সব মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার স্বার্থ এবং বিদ্যালয়ের মান রক্ষার স্বার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে দিয়ে বিদ্যালয়টি যাতে আবার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে ক্লাসকার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার সুব্যবস্থা করা হয়।
ভূঞাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.শাহিনুর ইসলাম বলেন, টেপিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের বিষয়ে আমি অবগত। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সরকারের কাছে প্রেরণ করা হবে। বন্যার পানি প্রবেশ করায় টেপিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ উপজেলার ১৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বন্ধ স্কুল গুলোর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানান শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম।