ভূঞাপুরে আমন ধানের বাম্পার ফলন শ্রমিক সংকটে কৃষক

ভূূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, রোববার, ১৮ নভেম্বর ২০১৮ | ৩১৪

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার কৃষকরা আগের সব লোকসান কাটিয়ে লাভের আশা করছেন। তাইতো কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক। কিন্তু কার্তিক মাস শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে শীত। গ্রামাঞ্চলের মেঠোপথে এখন কুয়াশার হিমশীতল পরশ।

হেমন্তের শীতের পরশটা উপভোগ্য হয়ে উঠে নবান্নে। তাই ভূঞাপুর উপজেলার সর্বত্র এখন আমন ধান কাটার ধুম চলেছে। মাঠে-ময়দানে শীত কিংবা রোদ্র উপেক্ষা করে চাষীরা ক্ষেত থেকে পাকা ধান সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কিষাণ-কিষাণিরা। নতুন ধানে হবে নবান্ন। নতুন ধানের পিঠা পুলি, পায়েস, মুড়িমুড়কি ও মোয়াসহ নানা খাবার তৈরি হয় এই নবান্নের দিনে।

সরজমিনে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ সোনালী রঙের পাকা ধান ঝলমল করছে। ফলে পাকা ধান কাটতে এবং সেগুলো ঘরে তুলতে চাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেকে আবার ধান কেটেও ফেলেছেন। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধা পর্যন্ত ধান কাটা ও সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত এখানকার কৃষকরা। ধান কাটা শুরু হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে কিছটা সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক পাওয়া গেলেও তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে দিগুণ। একজন শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ৫/৬শত টাকা।

উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের কৃষক আজমত আলী বলেন, এবছর আমি ছয় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি ছয় বিঘায় আমার প্রায় ২২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ কম থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি ছয় বিঘায় প্রায় ১২০ মন ধান পাবো। ফলন ভালো হওয়ায় আমি খুব খুশি।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের স্থলকাশি গ্রামের কৃষক মোঃ তুলা মিয়া বলেন, নয় বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। কয়েক বছর ধরে বন্যার কারণে ধান আবাদ করে চরম লোকসান হচ্ছিল। আশা করছি এবার বাজার ভালো থাকায় ঘরে অতিরিক্ত মুনাফা আসবে। অলোয়া ইউনিয়নের ভারই গ্রামের চাষী আবুল কাশেম বলেন, শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। দৈনিক ৫/৬শত টাকা মজুরিতেও মিলছেনা ধান কাটার শ্রমিক। যারা আগে ধান কাটার জন্য দিন মজুরের কাজ করত তারা অনেকে এখন ঢাকায় রিক্সা চালায়, রাজমিস্ত্রির কাজ করছে। ফলে বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ধান কেটে ঘরে তুলছে তারা। নিকরাইল ইউনিয়নের আমন চাষী আব্দুল কাদের বলেন, চলতি মৌসুমে আমন ধানের ভালো ফলন হওয়ায় আমি অনেক খুশি। আশা করছি চলতি মৌসুমে বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মন ধান পাওয়া যাবে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, মাঠ পযায়ে আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করেছেন এবং বিভিন্নভাবে কৃষকদের পরার্মশ দিয়েছেন। যার ফলে উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা এবার লাভের মুখ দেখবে এমনটাই আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জিয়াউর রহমান জানান, উপজেলায় ৫ হাজার ৭ শত হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবহাওয়া ভালো থাকায় ওই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ধান আবাদ করা হয়েছে। গত দুই-তিন বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উপজেলায় শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষককে ঘরে ধান তুলতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এই সংকট উত্তরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে ধান কাটার জন্য রিপার মেশিন দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।