২২ দিন বন্ধ থাকার পর আবার ইলিশ ধরা শুরু

আলোকিতপ্রজন্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৫১ পিএম, সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ | ২০৪

মা মাছ রক্ষা এবং ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার থেকে আবারো নদ-নদীতে ইলিশ ধরা শুরু হচ্ছে। গত ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন দেশের ৩৭ জেলার ৭ হাজার কিলোমিটার নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল মৎস্য মন্ত্রণালয়।

এই ২২ দিন ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি করা, বাজারজাত করা, মজুত রাখাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর নিষেধাজ্ঞার সময় ১৫ দিন থেকে বাড়িয়ে ২২ দিন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় টাক্সফোর্সের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার শাহেরখালী থেকে হাইতকান্দী পয়েন্ট, ভোলার তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন থেকে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া থেকে গণ্ডামার পয়েন্ট পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

সূত্র আরও জানায়, ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যেই চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরীয়তপুর, ঢাকা, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীতে এ সময় সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছিল।

এ ছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাসমূহেও এই ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। ইলিশ ধরা রোধকল্পে দেশের মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইন শপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২২ দিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযানও পরিচালিত হয়েছে।

মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ থেকে ২০০৭-০৮ সাল পর্যন্ত জাটকা আহরণ নিষিদ্ধের সময়ে জেলে পরিবারপ্রতি মাসে ১০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা বাড়িয়ে ৪০ কেজি করে দেওয়া হচ্ছে।

প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে নিবদ্ধকরণ ও পরিচয়পত্র প্রদানের লক্ষ্যে জুন ২০১৭ পর্যন্ত ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী-জেলের নিবন্ধন ও ডাটাবেজ প্রস্তুত এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের পরিচয়পত্র বিতরণ সম্পন্ন করে সরকার ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদনবৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছে।

এর মধ্যে ইলিশ আহরণে জড়িত প্রায় ৭ লাখ জেলে এবং মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে ২২ দিনের জন্য ৩ লাখ ৯৫ হাজার জেলে পরিবারকে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি করে প্রায় ৭ হাজার টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৮ হাজার ৩০৫ দশমিক ৬৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ২৮৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে; যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৩ হাজার ২৪৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৩১ শতাংশ মানুষ মৎস্যখাতে জড়িত এবং ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে।

দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক দশমিক ১৫ শতাংশ। তাই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে এর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৬ শতাংশ।