বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধলাখ কৃষক সহয়তা পেয়েছে মাত্র ৩২ জন !

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | ২৮৮

চলতি বছর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর পানির ভয়াবহ বন্যায় ধানের চারা প্রথম দফার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। যমুনার পানি কমতে থাকলে দ্বিতীয় দফায় কৃষকরা পুনরায় ধান চাষ রোপনে ধানের চারা সংকটে পড়ছে।

এদিকে প্রতি বিঘায় খরচ পড়ছে পাঁচ হাজার টাকা। যা পূর্বের তুলনায় বর্তমানে দ্বিগুন হয়ে গেছে। ফলে বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা ধানের চারা কিনতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।

একদিকে যেমন অনেক দূর-দূরান্তর থেকে বেশি দামে ধানের চারা কিনতে হচ্ছে অপরদিকে আবার পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে এবার ফসল ফলিয়ে লাভবান হবেন না বলে জানিয়েছে কৃষকরা।

ভূঞাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চাষ হয়েছিল মোট ৭৩০৫ হেক্টর জমিতে। বন্যায় ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছে মোট ৪৬১২ হেক্টর জমির ধান।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা প্রায় অর্ধলাখ (৪৪১৫৮)। ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকের মাঝে বর্তমানে ধানের চারা ও বীজতলার সহযোগীতা পেয়েছে মাত্র ৩২ জন কৃষক।

ভূঞাপুর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দাসী হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন গ্রামগুলো থেকে নছিমন, বাইসাইকেল ও রিকসা, অটো-ভ্যানে করে গুটি স্বর্না, স্বর্না, গাইনজ্যা, মামুন স্বর্না পাইজম, পারযাক, চিনি সাগর, কালো জিরা, ও তিলকাপুর (চিকন) ধানের চারা নিয়ে আসা হচ্ছে হাটে পাইকাররা।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এই হাটে আসছেন ধানের চারা কেনার জন্য।

বিক্রেতারা জনান, শতকরা মোঠা ধানের চারা ৯ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। অথচ বন্যার আগে বিক্রি করা হতো মাত্র ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। ধান চাষী হিসাব কষছে ১০০মোঠা ধানে ধানের চারা লাগানো ১০শতাংশ জমি।

মোট হিসাব করলে দেখা যাবে ৩৩শতাংশ জমিতে ধানের চারা কিনতে হচ্ছে ৩হাজার টাকা থেকে ৩৫শ টাকা দিয়ে। প্রতি রোববার ও বহস্পতিবার হাট বসে। এ হাটে ধানের চারা বিক্রি করা হয় সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত।

এই হাটে ধানের চারা কিনতে আসা উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, বসতভিটা ছাড়া নিজের কোন আবাদি জমি নাই আমার। এবার এক শতক জমি বর্গা নিয়ে প্রায় প্রতিবিঘায় আড়াই হাজার টাকা খরচ করে জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ধানের চারা লাগিয়ে ছিলাম। কিন্তু বন্যার পানি ঢুকে সব চারা নষ্ট হয়ে গেছে।

আমি সামান্য রিকসা-ভ্যান চালাই। বাবা-মা, স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েসহ ছয় দশ সদস্যের সংসার চালাতে এমনিতেই কষ্ট হচ্ছে। এরপর আবার বেশি দামে হাট থেকে ধানের চারা কিনতে হচ্ছে। যা ডাবল খরচ।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের রাশেদ বলেন, প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ করে তিন বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করেছিলাম। কিন্তু বন্যায় সব নষ্ট হয়ে পচে গেছে। এখন ৯ হাজার টাকা ঋন করে পুনরায় জমিতে ধানের চারা রোপন করছি।

ধানের চারা বিক্রি করতে আসা উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কয়েড়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম বলেন, ৩৩শতাংশ জমিতে ধানের বীজতোলা লাগিয়েছি। নিজের জমিতে লাগানোর পর অবশিষ্ট ধানের চারা বিক্রি করতে হাটে এসেছি। বর্তমানে শতকরা ধানের মোঠা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১৩০০টাকা। যা গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ।

আব্দুল বাছেদ জানান, ৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা লাগিয়ে ছিলাম। বন্যার পানিতে ধানের রোপনকৃত চারা পানিতে তলিয়ে পঁচে যায়। এখন কি করব বুঝতে পারছি না। এদিকে অনেক ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ধানের চারার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকেও পাইনি কোনো ধরণের সহয়তা।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জিয়াউর রহমান জানান, সরকারের দেয়া বরাদ্দকৃত সকল কৃষি সহয়তা কৃষকের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম চলছে। মূলত বন্যার কারণে উপজেলার ফসলাদি ধানের চারা ও রোপনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রত্যেক কৃষককে ধৈর্য ধরতে হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ধানের চারা বিতরণ অব্যাহত আছে।

এ পর্যন্ত ৩২ জন কৃষককের মাঝে ধানের চারা বিতরণ করা হয়েছে। প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকের মাঝে ভূট্রা, সরিষা, চিনাবাদাম, বিটি বেগুন ইত্যাদি ধরণের বীজ বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।