ধনবাড়ীতে ৩ মাস পর ধর্ষিতা গৃহবধূর লাশ কবর থেকে উত্তোলন

মধুপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:২৪ পিএম, সোমবার, ৯ জুলাই ২০১৮ | ৩৩৩

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ৩ মাস পর ধর্ষিতা গৃহবধূর লাশ কবর থেকে উত্তলোন করেছে পুলিশ। ৯ জুলাই সোমবার দিন কাকলী ইয়াসমীন কাকন এর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সিআইডির উপ-পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, কাকলী ইয়াসমীন কাকন এর মা বাদী হয়ে টাঙ্গাইল কোর্টে মামলা দায়ের করেন। কাকলী ইয়াসমীন কাকন এর মৃত্যুর সঠিক কারণ সনাক্ত করণের জন্য মরদেহ কবর থেকে উত্তলোন করা হয়েছে। মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটন করতে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে উত্তোলন করে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পঠানো হয়েছে।

কবর থেকে লাশ উত্তোলন করার সময় ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী অফিসার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে আরিফা সিদ্দিকা,সিআইডির সাব-ইন্সপেক্টর মজিবর রহমান, সুমন মিয়া সহ ধনবাড়ী থানার এসআই কবির, বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার বাবুল,নিজেরা করি সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত কাকলী ইয়াসমীন কাকনের মা হেলেনা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার মেয়ে কাকলি কে দফায়-দফায় ধর্ষণ ও শারিরীক নির্যাতনের ফলে মৃত্যুর ঘটনায় টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্র্যাইব্যুনালে মামলা করি। মামলা নং- ১৫৯/২০১৮। এ দিকে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি মেম্বার শাজহান ওরফে কহিনুরের নেতৃত্বে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকায় ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছিল। আমাকে মামলা প্রত্যাহরের হুমকী দিয়ে বলে নইলে তোকেও তোর মেয়ের মতো অবস্থা করা হবে। আমি আমার মেয়ের খুনিদের ফাঁসি চাই।

নিহত কাকনের বোন রহিমা আক্তার জানান, আমার বোন কাকন কে একই গ্রামের শাহের এর ছেলে রেজাউল করিম, সাইফুল, মালেক, চাঁন মিয়া চান্দে, বর্তমান ইউপি মেম্বার শাজাহান আলী কোহিনুর এরা সকলেই মিলে আমার বোন কে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ ও শারিরীক নির্যাতন করে মুমূর্ষ অবস্থায় আমাদের বাড়ীর পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আমার বোনের একটি ২ বছরের একটি মেয়ে আছে। আমার বোনের এই হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি ফাঁসি দাবী করছি।

নিহত কাকনের খালাত ভাই আশরাফুল জানান, এ ঘটনাটি স্থানীয় ইউপি সদস্য শাজহান ওরফে কহিনুরের নেতৃতেত্ব এলাকার মাতাব্বর শফিকুল ইসলাম ওরফে চাঁন মিয়া ও আব্দুল মালেকের সহায়তায় সালিশি বৈঠকে অভিযুক্তদের ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছিল। জরিমানার ৪ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা মেয়ের পরিবার এবং বাকী ২ লাখ টাকা মাতাব্বররা ভাগ বাটোয়ারা করে নিতে চাইলে মেয়ের পরিবার রাজি হয় নি। ফলে মেয়ের পরিবারকে টাকা না দিয়ে ইউপি মেম্বার শাজহান ওরফে কহিনুর ও আব্দুর মালেক মাতাব্বরের নিকট জমা রেখেছে।

চুনিয়া পটল গ্রামের গৃহবধূ শিখা সহ আরো কয়েক স্থানীয়রা জানান, কাকলী কে রেজাউল সহ যারা ধর্ষণ করে হত্যা করেছে আমরা তাদের ফাঁসি চাই । যাতে আর কোন মেয়েকে ধর্ষণ নির্যাতনের বলি না হতে হয়।

নিহত কাকনের স্বামী লিটন মিয়া ধর্ষণ কারীদের আইনের আওতায় নিয়ে যাতে ফাঁসি দেওয়া হয় এই দাবী করেন। বানিয়াজান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম তালুকদার বাবুল জানান, কাকলী ইয়াসমীন কাকনের হত্যার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি। যাতে এই বিচার দেখে আর কোন লোক এরকম নেক্কার জনক ঘটনা না ঘটাতে পারে।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার চুনিয়া পটল গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে কাকলি বেগমের পার্শ্ববর্তী বলদিআটা গ্রামের শাহজান আলীর ছেলে লিটন মিয়ার সাথে ২৮/৫/২০১৩ ইং তারিখে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর ভালোই চলছিল তাদের দাম্পত্ব জীবন। এরই মধ্যে পার্শ্ববর্তী বাড়ীর ছাহের আলীর ছেলে রেজাউল হক (৩০) মাঝে মধ্যেই কাকলি বেগমকে কু-প্রস্তাব দিতে থাকে। এতে রাজি না হলে রেজাউল ক্ষিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে গত ১৩ জানুয়ারী শনিবার সন্ধ্যায় কাকলি বেগম স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়ী যাওয়া পথে গৈারাং নামকস্থানে আরো ৭/৮ জন দুর্বৃত্তকে সাথে নিয়ে জোর পূর্বক একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর অজ্ঞাতস্থানে রেখে তাকে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়ে দফায়-দফায় ধর্ষণ করতে থাকে। এভাবে দীর্ঘ দিন পৈশাচিক, শারিরীক ও মানসিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে কাকলি বেগম নিস্তেজ হয়ে পড়লে মৃত ভেবে গত ৪ এপ্রিল বুধবার রাতে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে তার বাড়ীর পাশে রাস্তার ধারে ফেলে রেখে যায়।

এমতাবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। এ ঘটনার পর পরই ধনবাড়ী থানায় মামলা করতে গেলেও প্রভাবশালী রেজাউল গংদের চাপে রহস্যজনক কারণে মামলা নেন নি। ফলে বাধ্য হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে নিহতের মা ।

হাফিজুর রহমান / এমএমআর