পাপিয়া হত্যা মামলার আসামিরা ৩ মাসেও গ্রেফতার হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১০ পিএম, সোমবার, ২ এপ্রিল ২০১৮ | ৪৩৮

যৌতুক লোভীদের বিচার চায় নিহত মারিয়া আক্তার পাপিয়া নামের গৃহবধূর (২৯) হত দরিদ্র পরিবার। পাপিয়ার মৃত্যুর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও থামেনি তার পরিবারের কান্না। বিচার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পাপিয়ার বাবা।

গত ২৭ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে বিষপান জনিত কারনে পাপিয়ার মৃত্যু হয়। তবে পাপিয়ার বাবা-মায়ের অভিযোগ শারিরিক ভাবে নির্যাতন করে পরিকল্পিত ভাবে জোর পূর্বক বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের মেয়েকে।

পাপিয়ার মা মোছাঃ পারভিন বেগম বাদি হয়ে চলতি বছর ১ জানুয়ারি টাঙ্গাইল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে পাপিয়ার স্বামী মীর মনির হোসেন (৩০), শাশুড়ি মমতাজ বেগম (৫০), শশুড় মীর সমেজ (৫০), সুমা আক্তার (১৯), সুমি আক্তার (২২) কে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে দেলদুয়ার থানা মামলা নিলেও পুলিশ অদৃশ্য কারনে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা বলে বাদি পক্ষের অভিযোগ। ঘটনার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন আসমীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

মামলার এজাহার ও পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, গত ২১-১০-২০১১ ইং সালে দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল ইউনিয়নের ডুবাইল উত্তর পাড়া গ্রামের মীর সমেজের ছেলে মীর মনিরের সাথে পাশ্ববর্তী মির্জাপুর উপজেলার স্বল্প মহেড়া গ্রামের মোঃ আলী আজমের কন্যার পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়।

বিয়ের পূর্বে মনীর ও তার পরিবারের লোকজন ৪ লাখ টাকা ও ৩ ভরি স্বর্ণ দাবি করে। যৌতুক দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়। পরে সম্মানার্থে মারিয়ার বাবা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দেড়ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ বিয়ের পোশাক ও প্রসাধনি সামগ্রী প্রদান করলে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই মনীরের টাকার লালসা বেড়ে যায়। মারিয়ার কাছে সে আরো দেড় লাখ টাকা দাবি করে।

টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় শারিরিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয় পাপিয়াকে। পরে বাধ্য হয়ে ৩১-৭-২০১৪ ইং তারিখে পাপিয়া আদালতে হাজির হয়ে সি.আর মোঃ নং-২৯৯/১৪ যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারা একটি মোকাদ্দমা দায়ের করেন। মামলা হওয়ায় বিপাকে পড়ে যায় মনীরের পরিবারের লোকজন।

কৌশলে পাপিয়াকে আর যৌতুকের জন্য নির্যাতন করেবনা বলে আপোষ মিমাংসা করে মনীর তার ঘরে পাপিয়াকে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। এসময় পাপিয়ার গর্ভে থেকে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তাতেও আক্রোশ কমেনা মনীরের। পূর্বের জমানো আক্রোশে পাপিয়াকে আত্মহত্যা ও বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে মনীরের পরিবারের লোকজন।

পাপিয়া ধৈর্য্য সহকারে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সংসার করে যেতে থাকে। ঘটনার দিন মনীর সহ আসামীরা পাপিয়াকে কিল ঘুষি ও তলপেটে লাথি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে এবং বিষাক্ত জাতীয় তরল পদার্থ পাপিয়ার মুখে জোর পূর্বক ঢেলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় বলেও পাপিয়ার পরিবারের দাবি।

এদিকে ঘটনার দিন মির্জাপুর থানা পুলিশ নিহতের যে সুরতহাল প্রতিবেদন দাখিল করেছে তাতে পাপিয়ার শরিরে কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মারিয়ার লাশ দাফনের পূর্বে গোসলের সময় তার পরিবারের লোকজন শরিরে মারাত্মক জখমের চিহ্ন দেখতে পায়। এবং সেই চিহ্নের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে রেখেছে পাপিয়ার পরিবার।

পাপিয়ার বাবা সমেজ মিয়া ও মামলার বাদি মা পারভিন বেগম জানান, আমাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছে আমরা বিশ্বাস করিনা। এছাড়া পাপিয়ার শরিরে আঘাতের চিহ্ন তাই প্রমান করে যে পাপিয়া আত্মহত্যা করেনি। মুলত তাকে নির্যাতন করে মেরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে যাচ্ছে আসামীরা। তারা থানা পুলিশ কে ম্যানেজ করে ঘটনাকে তাদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় আমাদের হুমকি দিয়ে ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। পুলিশ এখনও পর্যন্ত কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি। আমরা আমাদের মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

পাপিয়ার মৃত্যুতে পাপিয়ার পাপ কতটুকু ছিল তা না জানা গেলেও টাকার লোভে মনিরের মনুষত্য যে বিলীন হয়েছিলো তা যৌতুক মামলাটিই প্রমান করে।

তবে এলাকাবাসীর দাবি পাপিয়ার মৃত্যুতে যদি মনির ও তার পরিবারের লোকজন জড়িত হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। যাতে পাপিয়ার মতো আর কাউকে যৌতুকের বলি না হতে হয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা এস.আই আশরাফুজ্জমান বলেন, জানুয়ারি মাসে মামলা রজু হয়েছে। এর পর থেকেই মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হয়নি। ইচ্ছে করেই কোন আসামী ধরা হচ্ছেনা বাদি পক্ষের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামালার দায়িত্ব প্রাপ্ত এ কর্মকর্তা জানান, যে কেউ এমন বক্তব্য দিতে পারে তবে তা সঠিক নয়।