বাসাইলের কলিয়ায় সকল প্রকার

নীতিমালা ভঙ্গ করে স্থাপন করা হচ্ছে ইটভাটা

বাসাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, রোববার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ | ২০৬

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কলিয়া গ্রামে সকল প্রকার নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে দেলোয়ার হোসেন এন্ড কোং নামে একটি নির্মাণ করা হচ্ছে ইটের ভাটা।

জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগসহ কোন বিভাগেরই লাইসেন্স ও প্রত্যয়ন মেলেনি তার অনুকূলে। অপরিকল্পিত ইটভাটা নির্মাণের কারণে পরিবেশের উপর মারাত্বক বিপর্যয় নেমে আসবে আশংকা করছেন এলাকাবাসী। পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

প্রভাবশালী ভাটা মালিক নির্মাণ কাজ চালিয়েই যাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার সাধারাণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন (২০১৩) অনুযায়ী আবাসিক এলাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজার থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার এবং গ্রামীণ বা ইউনিয়ন পরিষদ রাস্তা থেকে অন্তত অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না।

অথচ বাসাইলের কলিয়া গ্রামে সব ধরণের নিয়ম ভঙ্গ করে স্থাপন করা হচ্ছে ইটের ভাটা। ভাটার দু’পাশেই এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আছে দু’টি বাজার, বসত বাড়ি ও তিন ফসলি জমি। ৫০ গজের মধ্যেই রয়েছে গ্রামীণ সড়ক। সেই রাস্তা দিয়ে তিন টনের অধিক মালামাল বহনকারী যানবাহন চলাচল করছে।

যা ইটভাটা আইন নীতিমালার পরিপন্থী। সকল প্রকার সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে ইটভাটা নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। ইট বানানোর কাজও চলছে পুরোদমে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইটভাটার উত্তরের গ্রাম কাউলজানী দক্ষিণ পাড়ার হোমিও চিকিৎসক আলতাফ হোসেন বলেন, এখানে ইটভাটার কাজ শুরু হলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

ধোঁয়ায় স্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হবে মানুষ। গাছে কোন ধরণের ফল আসবে না। বাড়ি ঘরেও মানুষ বসবাস করতে পারবে না। অবিলম্বে ভাটার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে হবে। একই গ্রামের শরীফ খান বলেন, ইটাভাটার চারপাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কোমলমতি শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হবে। পরিবেশের উপর নেমে আসবে বিপর্যয়। মজনু ভূইয়া বলেন, ভাটার পাশেই রয়েছে আমাদের প্রচুর জমি। এসব জমিতে বছরে তিনটি ফসল হয়। ইটভাটা হলে কোন ফসল হবে না।

আমরা দ্রæতই এই ভাটা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। কলিয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা কোন প্রতিবাদ করতে পারছি না। আমরা চাই না এখানে ইটভাটা নির্মাণ হোক। কিন্তু কে শোনে কার কথা ? এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেছে। যে কোনভাবেই হোক ইটভাটা বন্ধ করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই।

এ ব্যাপারে ভাটা মালিক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সবগুলো অধিদপ্তরে আমরা আবেদন করেছি ভাটা নির্মাণের অনুমোতির জন্য। এখনও অনুমোতি পাইনি। তবে দ্রæতই অনুমোতি মিলবে।

বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, এখানে কিভাবে ইটভাটা করছে বুঝতে পারছি না । এটি তিন ফসলি জমি। আমাদের কাছে প্রত্যয়ন চাওয়া হয়েছে। শেষে আমরা তিন ফসলের জমিরই প্রত্যয়ন দিয়েছি।

টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, কলিয়ার ইটভাটা নির্মাণে আমাদের কাছে একটি আবেদন করা হয়েছে। কোন অনুমোতি হয়নি। আমরা ভাটার মালিককে নোটিশ করেছি সকল প্রকার কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য। এরপরেও কার্যক্রম চালিয়ে গেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহান স্বপ্না বলেন, ইটভাটা নির্মাণের জন্য তাদের লাইসেন্স নিতে হবে। আমি সরেজমিনে সেখানে যাবো। যদি লাইসেন্স না নিয়ে থাকে তাহলে ইটভাটার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এনায়েত করিম বিজয়/পিএইচ