টাঙ্গাইলে ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪২ পিএম, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৯১

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস রফিকুল ইসলাম (৪২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন  (পিবিআই) টাঙ্গাইল জেলা।

রোববার (১২ অক্টোবর) গভীর রাতে টাঙ্গাইল ধনবাড়ী উপজেলার নাথের পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামী মকবুল(৫৫)কে গ্রেফতার করা হয়।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সে হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য আসামীদের সম্পৃক্ত করে ১৬৪ ধারা মতে বিস্তারিত দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন  (পিবিআই) টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় হতে দেয়া প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,২০২২ সালের ২ ফেব্রুয়ারী সকালে টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার নাথেরপাড়া গ্রামের জনৈক মামুন মিয়ার জমিতে ঝোপের পাশ্বের রফিকুল ইসলাম (৪২) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ধনবাড়ী থানা পুলিশ।

পরবর্তীতে নিহতের মা ছাহেরা বেওয়া (৫৮) বাদী হয়ে ধনাবাড়ী থানায় ৩ ফেব্রুয়ারী হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করলেও মূল রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় পুলিশ হেডকোয়াটার্র্সে মাধ্যমে মামলাটি গত ২৫/০৭/২০২২ তারিখে পিবিআই টাঙ্গাইলের এর উপর মামলার তদন্তভার অর্পিত হয়। পরবর্তীতে পিবিআই টাঙ্গাইলের চৌকস টিম প্রথাগত এবং প্রযুক্তিগত ভাবে মামলাটি তদন্ত করতে শুরু করেন। পিবিআই টিম তদন্তকালে জানতে পারেন নিহত রফিকুল কিছুটা উশৃংখল প্রকৃতির ছিল। সে কাউকে মান্য করতোনা এবং সে চুরি চামারীর সাথেও যুক্ত ছিল। তাছাড়া সে তার মামার বাড়ীর মায়ের ওয়ারিশের সম্পত্তি কড়ায়গন্ডায় একাই বুঝিয়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা করলে তারা মামা ও মামাতো ভাইদের সাথে চরম বিরোধের সৃষ্টি হয়। অপর দিকে তার মামা রেহান আলীর বাগী হতে পর পর কয়েকবার গরু চুরি হলে তারা রফিকুলকে সন্দেহ করে। এছাড়া রফিকুলের সাথে তার ভাই হাফিজুর এর সাথেও জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তাছাড়া অত্র মামলার গ্রেফতারকৃত আসামী মকবুল (৫৫) নিহত রফিকুলের বোন জামাই। সে দীর্ঘদিন যাবৎ রফিকুলদের বাড়ীতে বসবাস করে আসছিল। রফিকুল বিষয়টি ভালো চোখে দেখতনা এবং অত্র মামলার ঘটনার কিছুদিন আগে সে মকবুলের ঘর ভেঙ্গে দেয়। ফলে মকবুলের সাথেও রফিকুলের বিরোধের সৃষ্টি হয়। এই সব তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন তালুকদারের সার্বিক দিক নির্দেশনায় এই মামলার আইও এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম ঘটনার পর হতে পলাতক আসামী মকবুলের অবস্থান নির্নয়ের জন্য টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী সহ বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান অব্যাহত রাখেন। অব্যাহত অভিযানের এক পর্যায়ে বিশ^স্ত সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারে মকবুল ধনবাড়ী থানা এলাকায় অবস্থান করছে। সেই লক্ষ্যে এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আলমগীর কবির সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স সহ গত রোববার (১২ অকাটাবর) গভীর রাতে ধনবাড়ী থানাধীন নাথের পাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনাকালে নাথের পাড়া মোড়ে পৌছলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে  যাওয়ার চেষ্টা কালে আসামী মকবুল (৫৫)কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অত্র মামলার ঘটনার বিষয়ে নিজেকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন কলা কৌশল প্রয়োগ করলে এক পর্যায়ে সে অত্র মামলার ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য আসামীদের সম্পৃক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মতে দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য ইচ্ছা পোষন করে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) তাকে আদালতে প্রেরণ করা হলে সেচ্ছায় সে আদালতে অত্র মামলার হত্যাকান্ডের ঘটনার সাথে নিজেকে জড়িয়ে এবং অন্যান্য আসামীদের সম্পৃক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারা মতে বিস্তারিত দোষ স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, মামার বাড়ী থেকে প্রাপ্য ওয়ারিশের সম্পত্তি ও গরু চুরির বিষয় নিয়ে রফিকুলের সাথে তার মামা ও মামাতো ভাইদের বিরোধ এবং জমি ও ঘর ভাঙ্গার বিষয় নিয়ে রফিকুলের সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী মকবুল ও হাফিজুরের সাথে বিরোধকে কেন্দ্র করে অত্র হত্যা মামলার ঘটনার কয়েক দিন আগে রফিকুলের মামা রেহানের বাড়ীতে মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল, সেকান্দার ও আলম মিলে রফিকুলের কে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন রাতে রফিকুল এর মামাতো ভাই আলম তাকে মাদক সেবনের কথা বলে তার বাড়ী থেকে ডেকে সেখানে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল ও সেকান্দার উক্ত ক্ষেতের দক্ষিন পাশ্বের লুকিয়ে ছিল। তাদের হাতে বােঁশর লাঠি ছিল। রফিকুল সেখানে যাওয়া মাত্রই মকবুল, হাফিজুর, রেহান, জলিল ও সেকান্দার লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ীভাবে রফিকুলের কে মারপিট করে এবং আলম মাথায় ও মুখে চা পাতি দিয়ে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে সকলে মিলে রফিকুলের লাশ তার বাড়ীর পাশ্বের স্থানীয় মামুন গংদের বিরোধপূর্ন জমিতে রেখে আসে।

এ ধরনের নৃশংস ক্লুলেস হত্যাকান্ডের ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন সহ আসামী গ্রেফতার হওয়ায় এলাকার সাধারন মানুষের মধ্যে সন্তোষ বিরাজ করছে এবং পিবিআই, টাঙ্গাইল জেলার কর্মতৎপরতা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে।