ট্রাম্পের শপথের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ | ৪৫

১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ইতি টানতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের দ্বারপ্রান্তে ইসরায়েল ও হামাস। গত বুধবার কাতারের রাজধানী দোহায় দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এ চুক্তিতে সই করেন, যা কার্যকর হওয়ার কথা রোববার। এরই মধ্যে এতে অনুমোদনও দিয়েছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।

চু্ক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হয়েছে শুধু নভেম্বরের ঐতিহাসিক বিজয়ের কারণে।’ এর আগে তার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে জিম্মিদের জন্য আমরা একটি চুক্তি করছি। তারা খুব দ্রুতই মুক্তি পাবেন।’

চুক্তিটি কয়েকটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে ছয় সপ্তাহের একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে। এ সময়ে হামাস ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেবে। প্রতিজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে ইসরায়েল বেশ কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ কার্যকরের বিষয়ে আলোচনাগুলো প্রথম ধাপের ১৬তম দিনের মধ্যে শুরু হবে। সেখানে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তৃতীয় ধাপের বিস্তারিত তথ্য এখনো অস্পষ্ট। যদি দ্বিতীয় ধাপের শর্তগুলো পূরণ হয়েছে বলে বিবেচিত হয় তবে তৃতীয় ধাপে কিছু বন্দির মরদেহ ফেরত দেয়া হবে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে তিন থেকে পাঁচ বছরব্যাপী পুনর্গঠন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে।

এদিকে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গতকাল যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুমোদন করেছে। রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হেরজগ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বলেন, ‘পূর্ণ মন্ত্রিসভা চুক্তিটি অনুমোদন দিলে রোববার থেকে যুদ্ধবিরতি শুরু হতে পারে।’ তবে তিনি সতর্ক করেছেন যে এ চুক্তি ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বয়ে আনতে পারে।

যদি এ যুদ্ধবিরতি সফলভাবে কার্যকর হয়, তাহলে কয়েক মাস ধরে চলা চরম সহিংসতা ও মানবিক সংকটের মধ্যে এটি গাজাবাসীর জন্য বড় স্বস্তির বার্তা হতে পারে। একই সঙ্গে চুক্তিটি মধ্যপ্রাচ্যে চলমান অস্থিতিশীলতা হ্রাসে সহায়তা করবে বলেও আশা করছেন বিশ্লেষকরা।

গাজা যুদ্ধের প্রভাব এরই মধ্যে লেবানন, ইয়েমেন ও ইরাকের মতো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো, যেমন হিজবুল্লাহ ও হুতির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ইসরায়েল। এ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ওই সংঘাতগুলোয় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন। শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সরকারের অনুমোদনের পর চুক্তি বাস্তবায়ন ও জিম্মি মুক্তির প্রক্রিয়া পরিকল্পিত কাঠামো অনুযায়ী শুরু হবে। রোববার থেকে জিম্মিদের মুক্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভায় চুক্তি অনুমোদনের জন্য ভোটগ্রহণ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে হামাস চুক্তির কয়েকটি শর্ত মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া একদিন পিছিয়ে যায়। গতকালের বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, চুক্তি কার্যকর হলে তা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে ও গাজায় আটকে থাকা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে।