দুই সদস্য দিয়ে চলছে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি

সাড়ে ১০ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি জেলা বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: ১০:১৬ পিএম, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৯৭
তিন মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি সাড়ে ১০ মাসেও তা করতে পারেনি। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। আর সেই জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ওপর ভর করেই সাড়ে ১০ মাস ধরে চলছে দলের কার্যক্রম। জেলা কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক এই দুইজনের কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা টাঙ্গাইল জেলায় সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
 
জেলা বিএনপির নেতারা বলছেন, জেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। টাঙ্গাইল জেলায় মূলত কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খানের একটি গ্রুপ, কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর আরেকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। তাই নিজেদের লোক জেলা কমিটিতে আনতে অধিক সুপারিশের কারণে কমিটি গঠনে সময় লাগছে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন উপ গ্রুপে দল বিভক্ত হওয়ায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে অনেক নেতাকর্মীরা অংশ না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
 
সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা বিএনপির নিজস্ব কোন কার্যালয় নেই। দলের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল আইনজীবী হওয়ায় কোর্ট চত্বরে বসে নিজস্ব বলয়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন। পদ-প্রত্যাশী নেতাদের অভিযোগ, গত বছরের ১ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পৌর শহরের পশ্চিম আকুরটাকুর পাড়া ঈদগাহ মাঠে কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন হাসানুজ্জামিল শাহীন ও এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল। তারপর সাড়ে ১০ মাস কেটে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হয়নি। এতে হতাশ হয়ে পরেছেন পদ-প্রত্যাশী ও দলীয় নেতারা। তারা আরও অভিযোগ করে বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শহরের প্রাণ কেন্দ্র পৌর উদ্যান, নিরালা মোড়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সভা, সমাবেশ ও মিছিল করার সাহস পান না আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের ভয়ে। শহরের প্রাণ কেন্দ্র থেকে এক কিলোমিটার দূরে জেলা বিএনপির সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের বাসভবন সংলগ্ন এলাকা বেপারি পাড়া গিয়ে সভা, সমাবেশ ও মিছিল-মিটিং করে থাকেন। সারা দেশে বিএনপির দলীয় নেতাকর্মীদের নামে শতশত মামলা রয়েছে। কিন্তু জেলা বিএনপির সভাপতির নামে মামলা তো দূরের কথা থানায় একটি জিডিও নেই। তিনি আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে চলেন বলে দলের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। 
 
জেলা বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী হতাশ হয়ে বলেন, এ পর্যন্ত সবগুলো সমাবেশ বা মিছিল শহরের যৌন পল্লীর সামনে দিয়ে গিয়ে বেপাড়ি পাড়া গিয়ে শেষ করেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হাসানুজ্জামিল শাহীন সভাপতি হওয়ার আগে আর্থিকভাবে চরম সংকটে ছিলেন। সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন নেতাকে কমিটিতে পদ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের কাছ থেকে আর্থিক লেনদেন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।  
 
দলীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, জেলা বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদক, কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ওবায়দুল হক নাছির এই চারজন মিলে তাদের অনুসারীদের নিয়ে একটা প্রস্তাবিত কমিটি গঠন করেছেন। সেই প্রস্তাবিত কমিটির বিষয়টি নেতাকর্মীরা জানতে পেরেছেন। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন কমিটির নেতা হওয়ার যোগ্য না, তাদেরকে জেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এমন কি ত্যাগী যোগ্য মামলা হামলায় জড়-জড়িত নেতাকর্মীদের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  
 
জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের অনুসারী। কাউন্সিলরদের ভোটে তাঁরা যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারীদের হারিয়ে দেন। এখন সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারীরা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে গিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পরাজিত হওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছেন। সম্মেলনের দীর্ঘদিন পরেও কমিটি গঠন করা হয়নি। তাই তাঁদের এখন জেলা কমিটির সাবেক নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে হচ্ছে। তাঁরা দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আহ্বান জানান।
 
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, জেলা বিএনপি একটি লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এখানে ত্যাগী, যোগ্যতা, মামলা ও হামলা এগুলো কমিটিতে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নয়। জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কিছু বির্তকিত লোক দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করাই তাদের মূল লক্ষ এবং প্রস্তাবিত কমিটিতে তাদেরই স্থান হয়েছে।
 
জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মাহমুদুল হক সানু বলেন, জেলা বিএনপির কমিটি কেনো গঠন হচ্ছে না তা কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট আহমেদ আযম খান ভালো বলতে পারবেন। এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
 
এসব বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরহাদ ইকবাল বলেন, এ মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কোন আর্থিক লেনদেন হয়নি। এসব কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তিনি আরও বলেন, আমরা শহরের ঈদগাঁ মাঠে সভা ও সমাবেশ করছি। দু’একটা প্রোগ্রাম বেপাড়ি পাড়ায় গিয়ে করেছি। কিছু দিন আগেও ঈদগাঁ মাঠ থেকে একটি বিশাল মিছিল বের করে বেপাড়ি পাড়ায় গিয়ে শেষ হয়। ওই মিছিলে প্রায় দশ হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 
 
টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহিনের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তার মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সারা দেননি।