উন্নত জাতি গঠনে যেমন শিক্ষক দরকার

মো. শাহেদ শাহান
প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, রোববার, ৩০ জুলাই ২০১৭ | ৩৫৯
শিক্ষক যখন দুর্বল হয় প্রজন্ম তখন দুর্বল শিক্ষা পায়, প্রজন্ম যখন দুর্বল হয় জাতি তখন দুর্বল সরকার গঠন করে। দুর্বল সরকার দিয়ে কখনোই জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানুষ অনুকরণপ্রিয়। অনুকরণ থেকেই সে শেখে। আর শেখার প্রাতিষ্ঠনিক স্থানটি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই ভিন্ন ভাষায় বললে বলা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনুকরণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানিক সংস্থা। এখানে শিক্ষক যা বলেন ছাত্ররা তা অনুকরণ করে শিখতে চায়। সেই শিক্ষকের জানার ও বোঝানোর পরিধি সংকীর্ণ হলে প্রতিফলন সংকীর্ণ হবে। আর প্রতিফলন সংকীর্ণ হলে অনুকরণও সংকীর্ণ হবে। আর অনুকরণ সংকীর্ণ হলে শিক্ষার মান সংকুচিত হবে একথা সহজেই বলা যায়। Bisk Club এদেশে ক্যাডেট কলেজ গুলোতে যে প্রক্রিয়ায় ছাত্র ভর্তি করা হয় তার থেকে দ্বিগুণ কঠোর প্রক্রিয়ায় মেধা যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ করা উচিত, কারণ মেধাবী ছাত্রকে শেখানোর জন্য মেধাবী শিক্ষক প্রয়োজন। হীরা কাটার জন্য তার থেকে অধিক ঘনত্বের হীরা প্রয়োজন। হীরা দিয়ে কাঁচ কাটা যায় কিন্তু কাঁচ দিয়ে কখনো হীরা কাটা যায় না। কেউ কেউ মনে করেন বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা মেধাবী নয়। আমি এই ধারণার সাথে একমত পোষণ করিনা। যুগে যুগে সব মানুষই মেধাবী শুধু মস্তিষ্কের ব্যবহার ছিলো ভিন্ন। যারা মস্তিষ্কের ব্যবহার বেশি করেছেন তারাই নিজেদের মেধাবী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বরং আমি বলতে চাই বর্তমান প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা অধিক পরিশ্রমী এবং আমাদের ছোট বেলার জীবনের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবে মস্তিষ্কের ব্যবহার তারাই বেশি করছে। সেই কাক ডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। সেখানে একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে বাসায় যাবার আগে দু একটা কোচিং সেন্টারে ঢু ও মারতে হয়। এরপর যানজট ঠেলে বাসায় ফিরে বিশ্রাম নেয়ার সময় নেই এর মধ্যে হয়তো গানের বা নাচের অথবা অন্য কোন এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিজ এর শিক্ষক হাজির হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় অংক অথবা ইংরেজির শিক্ষক চলে আসবে। তারা যাবার পর সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করে যে জ্ঞান অর্জন করেছে তার একটা টানা রিভিশন দিতে হবে। একবার ভেবে দেখেছেন, আপনার সন্তানের মত এই বয়সে আপনি কতটা সুখময় সময় পার করেছেন। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে আপনার সন্তানের কাছে আপনি ছাত্র। বর্তমান যুগ যদি তথ্য প্রযুক্তির যুগ হয় তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার সন্তনটি এগিয়ে যাচ্ছে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে। সুতরাং তাকে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার থেকে দূরে রাখা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমার মতে সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতে যে প্রক্রিয়ায় কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয় এবং নিয়োগের পর দেশপ্রেম সম্পর্কে তাদের যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় ঠিক একই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ ও দেশপ্রেমের প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। এবং মেধাবীদের এ পেশায় আনতে শিক্ষাকতাকে আরো বেশি আর্কষণীয় করা উচিত। এর কারণ দুটি। শিক্ষার্থীরা যোগ্যদের অনুকরণ ও অনুসরণ করতে পারবে, ও তাদের কাছ থেকে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, এই নতুন প্রজন্ম দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ছাড়া আমাদের দেশে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে উল্টোটা লক্ষণীয়। জাল সনদ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেয়ার অভিযোগ আমরা অহরহ দেখতে পাই। এটি আমাদের শুধু শংকিতই করে না বরং লজ্জিতও করে। সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি সরকারি কলেজ স্থাপন বা জাতীয়করণ যা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাবার যোগ্য। তবে সেই সাথে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক প্রেরণের ব্যবস্থা না করতে পারলে শিক্ষার মান উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। নিয়ম হওয়া উচিত বিসিএস ছাড় সরকারি কলেজের শিক্ষক নয়। এমনকি পিএসসির পরীক্ষা ছাড়া কোন সরকারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগ হওয়া উচিত নয়। পরিশেষে একটি কথা বলে শেষ করতে চাই একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত মেধাবী, পরিশ্রমী ও সৎ শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া পদ্ধতি।