ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন : জাতীয় নির্বাচনের একটি ট্রায়াল

মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
প্রকাশিত: ০৯:৪২ পিএম, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৩৬

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতি সবসময়ই কেন্দ্রীয় ভূমিকায় থেকেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন কেবল শিক্ষার্থীদের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের অংশ নয়; বরং তা জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলনও বটে। ২০২৫ সালের ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন তাই নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক রূপরেখা আঁকার এক অসাধারণ ট্রায়াল হিসেবে হাজির হয়েছে। এই নির্বাচন শুধু ক্যাম্পাসভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নয় বরং জাতীয় নির্বাচনের এক মাইক্রো মডেল।

এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা হলো- ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয়। এটি দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ধারার জন্য ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এসেছে। কেননা, ছাত্র শিবিরের সাফল্য কেবল সংগঠনগত দক্ষতার প্রতিফলন নয় বরং একটি ক্রমবর্ধমান জনআস্থার প্রকাশ যা আগামি জাতীয় রাজনীতির গতি-প্রকৃতিকে প্রভাবিত করতে বাধ্য।

১৯৬৩ সালে প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন- সব জায়গায় ডাকসুর নেতৃত্ব ছিল মুখ্য। অন্যদিকে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ ধারক-বাহক। জাকসুতে নির্বাচনী লড়াই সাধারণত জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। অতীতে ডাকসু ও জাকসুর ভেতর দিয়ে ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ, ছাত্রদল প্রভাব বিস্তার করেছে। তবে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র শিবিরের অগ্রগতি এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।

২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় দেখা যায়, দীর্ঘদিন নির্বাচন না হওয়ার কারণে ছাত্রসমাজের মধ্যে ভোটের প্রতি একধরনের আকাঙ্খা ছিল। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর শিক্ষাঙ্গনে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষাঙ্গনের অচলাবস্থা দূর করতে নির্বাচন আয়োজন করে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোটার উপস্থিতি স্পষ্ট করে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনে আগ্রহী হয়েছে এবং জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি এখানে খুঁজে পেয়েছে। এবারের নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র শিবির যেভাবে ডাকসু ও জাকসুর অধিকাংশ আসন জয় করেছে- তা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে। দেশের মূল দলগুলোর বাঘা বাঘা রাজনীতিকদের ভাবনায় স্থান করে নিয়েছে। 

ইসলামী ছাত্র শিবিরের এ বিজয়ের পেছনের কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘ প্রস্তুতি। শিক্ষার্থীদের কাছে সুনির্দিষ্ট ইশতেহার উপস্থাপন। ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী রাজনীতি ও ক্ষমতাধর গোষ্ঠীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন। ইসলামী মূল্যবোধ ও নৈতিকতার প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের একাংশের আস্থা অর্জন। খোলামেলা প্যানেল ঘোষণা ও অংশগ্রহণ ইত্যাদি। এবার ডাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র শিবির প্রথমবার খোলামেলা একটি পূর্ণ প্যানেল নিয়ে অংশ নিয়েছে- ভিপি, জিএস, এজিএস সহ কেন্দ্রীয় পদের প্রায় সবকটিতে প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও নরম ব্যবহারের সুফল হিসেবে নির্বাচিত শিবিরের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভোটের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বা তারও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের এই ব্যাপক ব্যবধান বলছে তাদের সংগঠন ও প্রচারণায় প্রচুর সক্রিয়তা ছিল- প্রচারণার সময় ছাত্র-সমাজের কাছে শুভবার্তা প্রেরণ, সরাসরি যোগাযোগ ও হল ভিত্তিক কাজগুলো নিয়ামকের কাজ করেছে। নির্বাচনের পূর্বে বহুদিন ডাকসু নির্বাচন অনির্দিষ্ট সময় থেকে বন্ধ থাকায়- এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি আকাঙ্খা তৈরি করেছিল। ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’ এবং পরে ছাত্র ও তরুণ সমাজের মধ্যে যে রাজনৈতিক চেতনার উদ্রেক হয়েছিল, সেটি ডাকসু নির্বাচনে একটা ভিত্তি তৈরি করেছিল। নতুন-ভোটার, স্বচ্ছতা, শিক্ষাগত ও আকাঙ্খা ইস্যু যেমন হল-জীবন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয়গুলো ছাত্রসমাজে গুরুত্ব পেয়েছে। এছাড়া নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সঙ্গে শিবির প্রার্থীদের অনেকের অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তারা ছাত্রলীগ বা তাদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন-জানতেন। এজন্য তাদেরকে নানাভাবে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন, দলীয় আদর্শ ও ব্যক্তিগত ইমেজ কাজে লাগাতে সচেষ্ট হয়েছেন- সুফলও পেয়েছেন। পক্ষান্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেল সহ অন্যরা ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টি, ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মর্যাদা না দেওয়া, ব্যবহারে সব সময় যুদ্ধংদেহী মনোভাব পোষণ করা ইত্যাদি নানা কারণে শিক্ষার্থীরা সমর্থন দেয়নি।  
এই নির্বাচনে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল যে ব্যর্থতা দেখিয়েছে- তা শুধুই নির্বাচনে পরাজয় নয়; তার মধ্যে বেশ কিছু কাঠামোগত এবং আদর্শগত ত্রুটি রয়েছে। যেমন- ১. সংগঠন ও উপস্থিতির অভাব। ছাত্রদল-সমর্থিত প্রার্থীর ক্ষেত্রে হল ভিত্তিক সাংগঠনিক কর্মকান্ড ও মাঠ পর্যায়ে প্রচারণা অনেকাংশে দুর্বল ছিল। যেখানে শিবির প্রার্থীদের উপস্থিতি প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রায় প্রতিটি হলে বা ডিপার্টমেন্টে দৃশ্যমান ছিল, ছাত্রদলকে অনেক ক্ষেত্রে ‘অনুপস্থিত’ বা ‘অনিয়মিত প্রচারণা’ হিসেবে দেখা গেছে। ২. নতুন ছাত্রমনোবল ও প্রত্যাশার সঙ্গে বন্ধুত্বহীন বার্তা বা আচরণ। নতুন ভোটার ও তরুণ শিক্ষার্থীদের আকাঙ্খা শিক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ক্যারিয়ার সম্ভাবনা ইত্যাদিতে ছাত্রদলের অবস্থান বা বার্তা ছিল রাজনৈতিক ও পুরনো দল ছাত্রলীগের আগ্রাসী আচরণের ধাচে, সেখানে ইসলামী ছাত্র শিবিরের আচরণ বা বার্তা ছিল- হল কেন্দ্রিক চাহিদা, স্বচ্ছতা ও ছাত্র স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদি। এই পার্থক্য ছাত্রদলের জনপ্রিয়তা ক্ষুন্ন করেছে। ৩. দ্বন্দ্বিত অভিযোগ ও স্বচ্ছতার অভাব। ছাত্রদল নির্বাচনের পরে ফলাফল নিয়েও অভিযোগ তুলেছে: ভোট প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, কেন্দ্রে রিটার্নিং অফিসারদের দায়িত্ববোধে ঘাটতি ইত্যাদি। যদিও এসব অভিযোগের সবগুলোর সত্যতা প্রমাণিত হয়নি, তবে ‘সুন্দর প্রচারণা ও কৌশল’-এর বাইরে যেসব বিষয় জরুরি, ছাত্রদল সেই দিকগুলোতে প্রস্তুত ছিলনা। ৪. নেতৃত্ব ও তরুণদের সম্পৃক্ততায় ফাঁক। ছাত্রদলের মাঝে এমন কোনো নেতা বা প্রার্থী দেখা যায়নি যিনি নতুন ছাত্রসমাজের পরিবর্তিত মনোভাব, অভিযোজন ও প্রত্যাশা গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন। ছাত্রদলের বেশিরভাগ প্রার্থী ও নেতৃত্ব পুরনো ছাত্র রাজনীতি-চর্চায় মশগুল ছিলেন- ফলে নতুন প্রজন্মের সাথে তারা ‘কানেক্ট’ হতে পারেনি। ৫. ইমেজ ও জনমত সংকট। ছাত্রদল ও বিএনপি ঘরাণার সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো রয়েছে- যেমন: দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ইত্যাতি। নতুন ভোটারদের কাছে তার প্রভাব কম নয়। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের ফলাফল ছাত্রদলের মধ্যে হতাশা ও অবসন্নতা বোধ স্পষ্ট হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এটি তাদের জন্য ‘সংবেদনশীল ধাক্কা’ হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধারনা করছেন। 

এই নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের ট্রায়াল বলার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ^বিদ্যালয় হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুতিকাগার। ছাত্ররাজনীতি থেকে ভবিষ্যত রাজনীতিবিদদের জন্য ভাঁজন স্থল। এখানে পরিদর্শিত কৌশল, সংগঠনশক্তি এবং জনমত গঠনের কৌশলগুলো জাতীয় পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে পারে। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনের উপস্থিতি জাতীয় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাড়ার সম্ভাবনা ইঙ্গিত করছে। শিক্ষাঙ্গনের ন্যায় অন্যায় দমন ও সুষ্ঠু পরিবেশে অবাধ নির্বাচন সম্ভব হলে জাতীয় স্তরেও সম্ভব। ভোটারদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে- তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। শিবিরের বিজয় দেখাচ্ছে আওয়ামী বিরোধী ধারার বিকল্প রাজনীতি ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনগুলো সংবাদে বেশি আসে। ফলে জাতীয় মিডিয়া নিরীক্ষা এবং জনমত আকরিক হয়। রাজনৈতিক চিত্রকল্প তৈরি হতে সাহায্য করে। নির্বাচিত ছাত্রনেতারা ভবিষ্যতে দলীয় নীতিগত আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় কৌশল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে যদি ছাত্র সংগঠনের শাখায় কৌশলগত পরিবর্তন আসে। ছাত্র সংগঠনের জয়-পরাজয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক অনুভূতিতে দ্রুত প্রতিফলিত হতে পারে- যেটা বড় নির্বাচনের পূর্বাভাস হিসেবে ধরা হয়। 

যুবসমাজের বড় অংশ যদি নতুনভাবে কোনও ধারায় সংগঠিত হয় জাতীয় স্তরে তার রেশ পড়বে- এটাই স্বাভাবিক। বিএনপি সহ অন্যান্য সংসদীয় দলগুলোর ছাত্র সংগঠন অবিলম্বে নিজেদের কৌশল পর্যালোচনা করার প্রয়াস পাবে। যদি না করা হয়, তবে তারা জাতীয় নির্বাচনেও পেছনে পড়ার ঝুঁঁকিতে থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু ও জাকসুর ফল বিএনপির জন্য সতর্কসূচক একটি বার্তা। নির্বাচনে শিবিরের নেতাদের বিজয় জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনাকে কিছু বিষয় আন্দোলিত করতে পারে- সামাজিক ইস্যু, শিক্ষানীতি ও ধর্ম সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক বক্তব্যের কেন্দ্রীয়তা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এই পরিবর্তন সংসদীয় দলের প্ল্যাটফর্মে প্রভাব ফেলতে পারে। ছাত্রদলের নেতাদের মধ্যে হতাশা থাকলে, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনে কাজ করতে হবে। সময়মতো সংস্কার না করলে এটাকে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। নির্বাচনের সময় প্রযুক্তি, ভোট গণনার পদ্ধতি, কেন্দ্র পরিচালনা, ভোটার সচেতনতা ও স্বচ্ছতা- এসব বিষয় বর্তমানে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনগুলোরও এসব ক্ষেত্রে শক্তহাতে কৌশলী কর্মপন্থা নেওয়া উচিত।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দুটি বিশ^বিদ্যালয়ের নির্বাচনী ফলাফলে জাতীয়তাবাদী ধারার পুনরুত্থানের ইঙ্গিত বহন করছে। নতুন প্রজন্ম আওয়ামী রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যথাযথ কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের বড় অংশ বিএনপির দিকে ঝুঁকতে পারে। সেজন্য বিএনপিকে তরুণ ভোটারদের কাছে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ উপস্থাপন করতে হবে। ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে সকল মত-ধর্ম-জাতের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে শক্তির ঐক্য বাড়াতে হবে।

বিএনপি একটি দীর্ঘ রাজনৈতিক ঐতিহ্য বহন করে- শক্ত পলিসি-প্ল্যাটফর্ম, অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও ব্যাপক সমর্থকশ্রেণি রয়েছে। ডাকসু ও জাকসুর সাম্প্রতিক ফলাফল একটি সতর্ক বার্তা- কিন্তু এগুলোই পরিবর্তনের পথও নির্দেশ করে। অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন, যুবশক্তির প্রতি প্রকৃত গুরুত্ব এবং গ্রাসরুট- চেতনা জাগিয়ে তোলে বিএনপিকে আরো শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। নির্বাচনী পরিস্থিতি যাই হোক, দায়িত্বশীলতা, দক্ষ সংগঠনশক্তি ও নৈতিক রাজনীতি বজায় রেখে বিএনপি জাতীয় পর্যায়ে পুনরায় জনবিশ্বাস জিততে সক্ষম হবে। 

ডাকসু ও জাকসুর নির্বাচন কেবল মসজিদ, হল বা ক্যাম্পাসের রাজনীতি নয়; এগুলো জাতীয় রাজনীতির প্রতিফলন ও আগাম পরীক্ষামাঠি। শিবিরের বিজয় সমাজের রাজনৈতিক মাত্রা ও ছাত্রসমাজের মনোভাবের পরিবর্তনকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিএনপি ও অন্যান্য পক্ষের জন্য এটি একবারে চ্যালেঞ্জ-শিক্ষা ও উপলব্ধির- দ্রুত প্রতিক্রিয়া না নিলে জাতীয় রাজনীতিতে মূল্যহানি হতে পারে। ইসলামী ছাত্র শিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয় প্রমাণ করেছে- তরুণ প্রজন্ম পরিবর্তন চায়, চায় বিকল্প নেতৃত্ব, চায় সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এটি বিএনপির জন্য একটি অসাধারণ ইতিবাচক বার্তা। কারণ জাতীয়তাবাদী ধারার জনআস্থা রয়েছে। এই নির্বাচনের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে আগামির জাতীয় নির্বাচনেও তরুণ ভোটাররা পরিবর্তনের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। তাই বলা যায়- ডাকসু ও জাকসু নির্বাচন আসলে জাতীয় নির্বাচনের এক নিখুঁত ট্রায়াল।