তরুণরা ঝুঁকছে ফেসবুকে!

কমে যাচ্ছে টাঙ্গাইল সরকারি গণগ্রন্থাগারের পাঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, রোববার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ১২৩

পাঠক কমে যাচ্ছে টাঙ্গাইল জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে। তরুণরা ঝুঁকছে ফেসবুকে! একসময় এ লাইব্রেরিতে পাঠকের ভিড় লেগেই থাকতো। নতুন ভবনে স্থানান্তরের পর থেকে পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। দেখা গেছে, লাইব্রেরিতে চাকুরিপ্রত্যাশী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বই নিয়ে পড়তে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন অনলাইনেই সব তথ্য পাওয়া যায়। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সময় কাটানোর কারণে গণগ্রন্থাগারেও কমেছে পাঠক। তবে গণগ্রন্থাগারে পাঠক ফিরিয়ে আনতে নতুন নতুন বই ও বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে গণগ্রন্থাগারের কর্তৃপক্। 

সূত্র জানায়, টাঙ্গাইল জেলা গণগ্রন্থাগারটি এক সময় শহরের প্রাণকেন্দ্র কলেজপাড়া আম গাট রোডের একটি ভবনে ভাড়ায় পরিচালিত হতো। ২০১২ সালের দিকে গণগ্রন্থাগারটি টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ রোড ডিস্ট্রিক গেট সংলগ্ন নতুন নিজস্ব ভবনে স্থানান্তর করা হয়। ৫ হাজার ৫০ বর্গফুট জুড়ে অবস্থিত এ গণগ্রান্থাগারে ৪১ হাজার ১৪৯টি বই আছে। এখানে ৮টি বাংলা ও একটি ইংরেজি ও স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকা পাঠকদের জন্য রাখা হয়। তবে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা এবং সাময়িকী সংরক্ষণ করা হয় না। নিয়ম মোতাবেক কোনো পাঠক চাইলে গ্রন্থাগারের নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করে সদস্য হয়ে বই বাসায় নিয়েও পড়তে পারেন। তবে ১৫ দিনের বেশি বই রাখতে পারবেন না বলে জানান কর্মকর্তারা।

এই গণগ্রন্থাগারে ৪৭০ জন্য সদস্য আছে। এখানে তিন ধরণের সদস্য রয়েছে। শিশু সদস্য, স্কুল-কলেজের সদস্য ও সাধারণ সদস্য।  বৃহস্পতি ও শুক্রবার গণগ্রন্থাগার বন্ধ থাকে। তবে বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিন গণগ্রন্থাগার বন্ধ থাকে। শনিবার ও বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গণগ্রন্থাগারটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। এই গণগ্রন্থাগারে একজন লাইব্রেরি ইনচার্জ, একজন বুক সর্টার, একজন অফিস সহায়ক ও একজন নিরাপত্তাপহরী কর্মরত রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গণগ্রন্থাগারের সামনে অস্থায়ীভাবে সিএনজি স্টেশন করা হয়েছে। সিএনজির শব্দের কারণে পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। অপরদিকে ময়লার ভাগাড়ের দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।  

চাকুরিপ্রত্যাশী গণগ্রন্থাগারে পড়তে আসেন লোকমান তালুকদার। তিনি বলেন, গ্রন্থাগারের সামনে সিএনজির স্টেশন করার কারণে এর শব্দে আমাদের পড়তে সমস্যা হয়। অপরদিকে গ্রন্থাগারের সামনে ময়লা আবর্জন রাখার কারণে দুর্গন্ধ ছাড়াচ্ছে। এত আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। 

চাকুরিপ্রত্যাশী আবু সাঈদ মিয়া বলেন, পাঠাগারে একাডেমিক বই কম থাকার কারণে আমরা বাসা থেকে বই নিয়ে এখানে পড়াশোনা করছি। এখানে প্রতিনিদিন ৭০-৮০ জন চাকুরিপ্রত্যাশী ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করতে আসেন। 

টাঙ্গাইলের  স্থানীয় বাতিঘর আদর্শ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, একাডেমিক বইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পাঠের অভ্যাস শিক্ষার্থী বা পাঠকদের  মধ্যে সাংস্কৃতিগতভাবে গড়ে উঠছেনা। বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের কারণে মানুষ অনলাইন ও মোবাইলে বেশি সময় ব্যয় করছে। এতে বই পাঠের আগ্রহ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এযুগে মানুষ অনেক ব্যস্ত। তাদের পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার সময় সুযোগ খুবই কম। যদি বই সহজলভ্য করা যায়, হাতের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তাহলে ধীরে ধীরে পাঠাভ্যাস তৈরি হবে বলে মনে করি।

টাঙ্গাইল জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারের লাইব্রেরি ইনচার্জ ওয়াকিফুল ইসলাম বলেন, পুরনো গ্রন্থাগারের তুলনায় নতুন ভবনের আয়তন ও বই বেড়েছে। এখানে প্রতিদিন ১০০-১২০ জন বিভিন্ন ধরনের পাঠক আসেন। তার দাবি পুরোনো ভবনের তুলনায় নতুন ভবনের পাঠকের সংখ্যা বেড়েছে।  

তিনি আরও জানান, মানুষের মাঝে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা এবং পাঠক বৃদ্ধির জন্য গ্রন্থাগারের উদ্যোগে নিয়মিত কার্যক্রম যেমন বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে রচনা, পাঠ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি আয়োজন করা হয়ে থাকে।