‘ফলাফল স্থগিত ও পুনরায় ভোট গণনার দাবি’

ভোটের ফলাফলে গড়মিল: প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫:২০ পিএম, মঙ্গলবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ | ১৫৪

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ইউপি নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে ভোট গণনার ফলাফলে গড়মিল পাওয়া গেছে। এতে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত ও সাধারণ সদস্যপদে আলাদা আলাদা ভোট গণনার ফলাফল শিটে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। এতে সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভূঞাপুর শহীদ জিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আনিছুর রহমানের  বিরুদ্ধে সদস্য পদে মোরগ প্রতীকের প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরকারকে বিজয়ী দেখানোর অভিযোগ উঠেছে।

গত রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের বিলচাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।

নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের বিলচাপড়া ও বিল রুহুলী গ্রাম মিলিয়ে ২২৫৪ জন ভোটারের ভোট কেন্দ্র বিলচাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২৬ ডিসেম্বর ইউপি নির্বাচনে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আনিছুর রহমান ভোট শেষে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত সদস্য ও সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের ভোট গণনার বিবরণীর ফলাফল শিট প্রদান করেন। ওই কেন্দ্রে ২২৫৪ জন ভোটারের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বৈধ ও অবৈধ মোট ভোটার সংখ্যা উল্লেখ করেছেন ১৮০৪ টি, ভোটারের অনুপস্থিত দেখিয়েছেন ৩৯০ টি মিলিয়ে ২১৯৪ জন।

এছাড়াও সংরক্ষিত সদস্য পদে মোট ভোটার উপস্থিত বৈধ ও অবৈধ ১৮২৭ টি এবং অনুপস্থিত ৩৯০ টি মিলিয়ে ২২১৭ এবং সদস্য পদে মোট ভোটার উপস্থিতি বৈধ ও অবৈধ ১৯৩৭ টি এবং অনুপস্থিত ৩১৭ জন মিলিয়ে ২২৫৪ ভোটার সংখ্যা দেখিয়েছেন। ওই কেন্দ্রে মনিরুজ্জামান সরকার মোরগ প্রতীকে ৮৭৮ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী মো. মনছুর ফুটবল প্রতীকে ৭৬৮ ভোট ও মো. সঞ্জাব আলীর তালা প্রতীকে ২৬৩ ভোট দেখানো হয়েছে।

এদিকে, চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ভোটার উপস্থিতি ও অনুপস্থিতি মিলিয়ে ভোটার সংখ্যা ভিন্ন থাকলেও সদস্য পদে ভোটার সংখ্যা ও অনুপস্থিত ভোটার সংখ্যা ২২৫৪ জনই দেখিয়েছেন। এতে তথ্যের গড়মিল হওয়ায় কারচুপির অভিযোগ উঠে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ভোটার সংখ্যা কম থাকলেও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা সদস্য প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরকার মোরগ প্রতীকে ভোট বেশি দেখিয়ে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন।  নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী ফুটবল প্রতীকের মো. মনছুরের পোলিং এজেন্ট আলতাফ হোসেন বলেন, ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আনিছুর রহমান প্রতিপক্ষের (মোরগ প্রতীকের) টাকা নিয়ে ভোটার সংখ্যা গড়মিল করে তাকে বিজয়ী করেছেন।

এছাড়া ভোট প্রদানের সময় জাল ভোটের বিষয়টি তাকে অবহিত করলেও তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। সেখানে চেয়ারম্যান পদে ভোটার সংখ্যা এক রকম ও সংরক্ষিত সদস্য পদে আরেক রকম রয়েছে। এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে আরেক ভোটার সংখ্যা দেখিয়েছেন তিনি।  নির্বাচনে পরাজিত সদস্য প্রার্থী মনছুর জানান, কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা জাল ভোট ও কারচুপির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতির চেয়ে ১১০-১৩৩ ভোটার সংখ্যা কিভাবে বেশি হয়। অনিয়মের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

 বিজয়ী প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরকার জানান, প্রতিদ্বন্দ্বি পরাজিত প্রার্থী আমার বিষয়ে অহেতুক অভিযোগ করছেন। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জয় লাভ করেছি। অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও জানান- প্রিজাইডিং কর্মকর্তা কি করেছে না করেছে সেটা তার ব্যাপার।  

পরাজিত প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ অস্বীকার করে বিলচাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ভূঞাপুর শহীদ জিয়া মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক আনিছুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যান পদে হয়ত অনেকেই ভোট দেয়নি তাই সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যদের ভোটার সংখ্যা মিলেনি। এতে কেন্দ্রে মোট ভোটার ২২৫৪ জন সদস্য পদে মিল হয়েছে বাকি পদে সংখ্যা কম বেশি হয়েছে।  

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমা সুলতানা বলেন, ভোটার সংখ্যা গড়মিলের বিষয়ে এখন কিছু করার নাই। অভিযোগকারীকে নির্বাচন কমিশন বা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দিতে হবে। অভিযোগ এখনও পাইনি।