জুতা ছাড়া চলেন দুইবারের ইউপি সদস্য জয়নাল!

স্টার্ফ রিপোটার
প্রকাশিত: ০১:০০ পিএম, রোববার, ১৪ নভেম্বর ২০২১ | ১৪৯

দুইবারের ইউপি সদস্য হয়েও ৩০ বছর যাবৎ জুতা ছাড়াই চলছেন জয়নাল আবেদীন (৬৬)। কলেজে চাকুরি, দুই দফায় পরিষদের ইউপি সদস্যের দায়িত্ব পালনসহ ব্যক্তি জীবন যাপনের পাশাপাশি জুতা ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সামাজিক নানা কর্মকান্ড। এলাকায় তিনি জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবেই পরিচিত। জয়নাল আবেদীন টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান মহানন্দাপুর বাশার চালা গ্রামের মৃত গফুর মিয়ার ছেলে। পেশায় তিনি একজন পোল্ট্রি খাবার বিক্রেতা। 

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ৩০ বছর যাবৎ জুতা ছাড়াই চলাফেরা করছেন জয়নাল মেম্বার। শীত,বর্ষা কোন সময়ই তিনি জুতা পড়েন না। নিজ বাড়ি, অফিস আদালত, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির থেকে শুরু করে সর্বত্রই জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন তিনি। এরপরও কখন শুনেনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে তিনি উপজেলা জুড়ে ব্যাপক পরিচিত বলেও জানান তারা। 

স্থানীয় সত্তর উর্দ্ধো আব্দুর রহিম জানান, জয়নাল মেম্বারকে খুবই ভালো মানুষ। বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তাঁর একটা ভালো গুণ। এ কারণে এলাকার মানুষ তাকে দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত করেছেন।

স্থানীয় মুসুল্লি আতোয়ার রহমান জানান, জয়নাল আবেদীন মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। দীর্ঘদিন যাবৎ তাকে জুতা ছাড়াই চলাচল করতে দেখছি। ব্যক্তি হিসেবে ভালো ও জনপ্রিয় হওয়ায় ইতোমধ্যে তিনি দুইবার ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সংগঠনের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি জানান, আমরা শুনেছি তিনি পীর ধরা। পীরের নির্দেশেই তিনি জুতা ছাড়া চলাফেরা করেন।

জয়নাল আবেদীন জানান, ১৯৬৯ সালে কালিহাতী উপজেলার বর্তমান আউলিয়াবাদ কলেজে অফিস সহকারী পদে যোগদান করেন তিনি। ২০০০ সালে চাকরী থেকে অবসরের যান তিনি। চাকুরীরত অবস্থায় কালিহাতীর ডা. আজহারুল ইসলাম পীরের মুরিদ হন তিনি। জুতা ছাড়া চলাফেরা করার নির্দেশ দেন পীর সাহেব। সেই নির্দেশ অনুসারেই ৩০ বছর যাবৎ জুতা ছাড়া চলাফেরা করছি। জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে স্বাছন্দ বোধ করি। এ কারণে আমি এলাকায় জুতা ছাড়া মেম্বার হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।

তিনি জানান, চাকুরী অবসরের পর নিজ এলাকায় পোল্ট্রির খাবার বিক্রির ব্যবসায় যুক্ত হন তিনি। ব্যবসার পাশাপাশি ৬৬ বছর বয়সী জয়নাল আবেদীন এলাকার মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে ইউপি নির্বাচনের প্রার্থী হন। বিগত ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০২ এবং বিগত ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত কাকড়াজান ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হই। এছাড়াও আমি কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারদের সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।

তিনি জানান, ব্যক্তি জীবনে আমি তিন মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। ইতোমধ্যেই তিন মেয়ে জোহরা আক্তার, জয়নব আক্তার ও শিরিন আক্তারকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে সিয়াম আহমেদ এখন ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। পরিবারের সদস্যরাসহ সকলেই আমার এই ব্যতিক্রম জীবনযাপন মেনে নিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে তার কোন সমস্যা হয় না। পিচের তৈরী পাকা সড়ক কিংবা কাঁচা সড়কে খালি পায়ে চলে তার পায়ে কখনও ব্যথা পাননি। জুতা ছাড়া চলাফেরা করতে তিনি স্বাছন্দ বোধ করেন ও অনেক উপকারও পেয়েছেন। জুতা ছাড়া চলাফেরা করার কারণে বড় ধরনের কোন রোগ্যব্যাধি হয়নি, কমেনি চোখের জ্যোতিও। এবারের নির্বাচনে পরাজিত হওয়া সত্ত্বেও আজীবন তিনি জনগণের সেবা করা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।

এ বিষয়ে কাকড়াজান ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন জানান, গুরুধরা মানুষ জয়নাল আবেদীন। গুরুর আদেশ মান্য করতেই তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ জুতা ছাড়া চলাফেরা করছেন। আমি তাকে ব্যক্তিগতভাবে ভালো মানুষ হিসেবে চিনি। এছাড়াও তিনি দুইবার কাকড়াজান ইউনিয়নের পরিষদের সদস্য ছিলেন বলেও জানান তিনি।