ভোলায় মাদকের বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা তরুণ ও যুবসমাজ

কামরুজ্জামান শাহীন,ভোলা
প্রকাশিত: ১০:৩৬ এএম, মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট ২০২০ | ২৬৯

ভোলায় মাদকবিরোধী সভা-সেমিনার ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য আটক ও এলাকার মসজিদ-মন্দির-গির্জায় মাদক সেবনের কুফল, অপব্যবহার ও মাদক পাচাররোধে জনসাধারণকে সচেতন করার পরও কোনোক্রমেই রোধ করা যাচ্ছে না মাদক সেবন ও পাচার। বরং নিত্যনতুনভাবে মাদকের থাবায় নীল হচ্ছে স্কুলপড়–য়া ছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

এখনই শক্ত হাতে এর লাগাম টেনে না ধরলে ধ্বংস হয়ে যাবে তরুন ও যুবসমাজ। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে সভা-সেমিনারে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন জেলার সচেতন সমাজ।

মাদকের বিষাক্ত ছোবলে নাকাল জেলার বিরাট একটি অংশ। মাদকসামগ্রীর এমন কোনো উপাদান নেই যা এ জেলায় পাওয়া যায় না। হেরোইন, ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা কি নেই? হাত বাড়ালেই সব পাওয়া যায়। সহজলভ্য এসব উপাদান সরবরাহে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। প্রকাশ্য এবং গোপনীয় এমন কিছু স্থান আছে যেখানে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকের বিরাট একটা চালান এসে মজুদ হয়।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার রির্পোটে জানা যায়,দেশের ৫১টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অবাধে মাদক ঢুকছে দেশে। ছড়িয়ে পড়ছে তা রাজধানীসহ দেশের সবকটি জেলা ও উপজেলা শহরে। সেখান থেকে এ মাদক যাচ্ছে পাড়া-মহল্লা আর গ্রাম-গঞ্জে। দেশজুড়ে মাদক সিন্ডিকেটের ছড়িয়ে থাকা শক্তিশালী জালের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এসব মাদকদ্রব্য। তারই ধারাবাহিকতায় ভোলা জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবাধে অনুপ্রবশ ঘটছে এসব মাদক উপাদানের। আর এসব মাদক উপাদান নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা বেশ প্রভাবশালী। কথিত এই প্রভাবশালী রথি-মহারথিরা সবসময় থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশি অভিযানে যারা ধরা পড়ে তারা নেহায়েৎ বহনকারী মাত্র। আর ধৃত ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে নিতে কথিত বড় ভাইয়েরা পর্দার আড়ালে থেকে দেন-দরবার শুরু করেন। আজ থেকে দেড়দশক আগে ভোলায় শুধু চোলাই মদ আর গাঁজা পাওয়া যেতো।

কিন্তু কালের বিবর্তনের ছোঁয়ায় এখানকার মদ্যপায়ীরা এখনো সনাতনী স্বাদ নেবে কেন? কারণ এখন নিত্যনতুন সব মাদকই তো হাতের নাগালে। বর্তমানে তরুন ও যুবসমাজের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে ইয়াবার নীল থাবা। দিন দিন কাবু হয়ে যাচ্ছে এই জেলার তরুন ও যুবসমাজ। জেলার একাধিক এমপি মাদকের বিরুদ্ধে কাঠোর অবস্থানের কথা জানালেও দলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় স্থানীয় প্রশাসন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় রয়েছে।

বিশেষ করে ভোলা-১ (সদর আসনের সংসদ সদস্য বানিজ্য মন্ত্রী আলহাজ্ব তোফায়ের আহম্মেদ ও ভোলা-৪ চরফ্যাশন-মনপুরার সংসদ সদস্য সাবেক পরিবেশ ও বন উপ-মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং জেলা প্রাশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক ও পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন।

এদিকে জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সভা-সেমিনারেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন তাদের কার্যক্রম। প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় না আনার ফলে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেট। জেলার সচেতন মহল দেশের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে তরুন ও যুবসমাজকে রক্ষায় দল-মত নির্বিশেষে দ্রুত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চালানোর জোর দাবি জানিয়েছেন। এক অনুসন্ধানে দেখা যায় জেলা শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে মাদকে সয়লাব হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ভোলা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্ম আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশের প্রতিটি ইউনিটকে মাদক ব্যবসায়ী,পাচাকারী ও সেবককারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি কোনও পুলিশ সদস্য মাদকের সঙ্গে অথবা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

ভোলা জেলা পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ”মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর অবস্থান ’’জিরো টলারেন্স”। বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নির্দেশ মোতাবেক আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ভোলা থেকে মাদক নিমূল করা হবে ইনশাআল্লাহ।