আওয়ামী লীগের ৭০ বছর

মোহাম্মদ কানিছুর রহমান
প্রকাশিত: ০২:১৫ পিএম, মঙ্গলবার, ২৩ জুন ২০২০ | ২৩৩
বাংলার স্বাধীনতা অস্তমিত গিয়েছিল পলাশীর প্রান্তরে ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন। মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় মাত্র আট ঘন্টার যুদ্ধে (অনেকেই বলে দাঙ্গা) বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হয়েছিলেন।
 
এই একটি বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই আমরা দুই শত বছর ধরে ইংরেজদের দ্বারা শোষিত ও নির্যাতিত হয়েছি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি পৃথক ভূ-খন্ড নিয়ে কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তান সৃষ্টি হয়।
 
সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে গড়ে উঠা এবং ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলার কারণে কোন ভাবেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারী গঠিত হয় সরকার বিরোধী ছাত্র সংগঠন`পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ'। যার অগ্রভাগে ছিলেন তেজোদীপ্ত তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
 
মুসলিম লীগের দুঃশাসন ও শোষণের মধ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হয় ``পূর্ব পাকিস্তান  আওয়ামী মুসলিম লীগ"।
 
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং কারাগারে আটক অবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সম্পাদক করে নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। জন্মলগ্ন থেকেই দলটি মানুষের মুক্তির কথা বলে আসছে। বাঙালির মুক্তিকামী মানুষ গুলো মনের কথা বলতে বলতে এ দলটি মানুষের মনের মনি কোঠায় ঠাঁই করে নিয়েছে। ১৯৪৮ ভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে ১৯৫২ সালের গণআন্দোলন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অবদান গৌরবোজ্জ্বল।
 
ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন এবং বীর শহীদদের আত্মদানের ভেতর দিয়ে ভাষা আন্দোলনের বিজয় অর্জিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রেন্টর নির্বাচনে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় বরণ করে। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই ২১ ফেব্রুয়ারী ঘোষিত হয় জাতীয় ছুটির দিন ও 'শহীদ দিবস'। দুই দশকের বঞ্চনা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাক-ভারত যুদ্ধের আলোকে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে লাহোরে ৬-দফা দাবি পেশ করেন।
 
১৯৬৬ সালের মার্চ মাসের সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি ও তাজউদ্দীন আহমেদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালের ৬-দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবির্ভূত হন বাংলার অবিসংবাদিত ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা হিসেবে। যার ফল স্বরূপ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভুদ্বয় হয়। শেখ মুজিবুর রহমান হন বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে বাংলার মানুষের স্বাধীনতা যুদ্ধ থামানো যায়নি। নয় মাস যুদ্ধ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১।
 
আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২সালের ১০ জানুয়ারী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। শুরু হয় দেশ পুনর্গঠনের কাজ। যখনই দেশকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক নির্মম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মূল করার চেষ্টা করা হয়।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দুই কন্যা ব্যতিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের হত্যা করা হয়। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু শেখ রাসেলও। আবারও বাঙালি দেখে এক বিশ্বাসঘাতক মোস্তাক এর। বাঙালি আবারো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যায়।
 
কলংকিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাস। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈরশাসন চলে বাংলার মানুষের উপর। এর মধ্যে সামরিক স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার। এসেই নেমে পরেন দলকে সংগঠিত করার কাজে। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।
এরপর আবার ২০০৯ সালে আবারও আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে আজও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেন। আজ আমরা যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছি তা আওয়ামী লীগ তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। 
 
আজ আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ২৩ জুন আপামর জনসাধারণের প্রাণ প্রিয় সংগঠন আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা কর্মী মিলে মিশে একাকার হয়ে যাওয়ার দিন। সবাই মিলে মিশে দল ও বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার দিন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সবার আনন্দ উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠুক চারদিক। ভালো থাকুন আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা কর্মী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একদিন উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। 
 
লেখক:  
মোহাম্মদ কানিছুর রহমান
উপ-রেজিস্ট্রার
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইল