ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই যেখানে স্বাস্থ্যসেবা!

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট
প্রকাশিত: ১১:০১ এএম, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০১৯ | ৬২০

২ বছরের বেশি সময় আগে ঘোষনা করা হয়েছে পরিত্যাক্ত, তারপরও ঝুঁকিপূর্ণ সেই ভবনেই চলছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পূর্ব পঞ্চকরন কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম।

আর এতে যে কোন সময়ে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা নিয়ে ঝঁকিপূর্ণ এই ভবনেই চলছে স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম। প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ায় এ কমিউনিটি ক্লিনিকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন গ্রামীন জনপদের মা ও শিশুরা।  এলাকাবাসীদের দাবি, নতুন একটি ভবনের, যেখানে নির্ভয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবেন তারা। 

জানা যায়, উপজেলার পঞ্চকরণ ইউনিয়নের পূর্ব পঞ্চকরণ গ্রামে ২০০১ সালে নতুন ভবনে কমিউনিটি ক্লিনিকটির কার্যক্রম শুরু হয়।  কয়েক বছর যেতে না যেতেই লবনাক্ততার কারনে পলেস্তরা খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে ইট। মূল ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দেয় ফাটল। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় ক্লিনিকের দু’টি কক্ষ। ভবনটিতে নেই কোন দরজা জানালা, পলিথিন দিয়ে ডেকে রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

ক্লিনিকে কর্মরত রয়েছেন ৩ জন। সিএইচ সিপি নুসরাত জাহান, স্বাস্থ্য সহকারি আফিফা তাজরিনী ও পরিবার পরিকল্পনার সাজেদা আক্তার। এদের মধ্যে উপস্থিত রয়েছেন চিকিৎসক নুসরাত জাহান ও পরিবার পরিকল্পনার মাঠ কর্মী সাজেদা আক্তার। আফিফা তাজরিনী সপ্তাহে ২দিন শনি ও মঙ্গলবার আসেন। বাকি দিনগুলো তার ফিল্ডে কার্যক্রম।  প্রতিদিন গড়ে এখানে ৪০-৫০ জন রোগী চিকিৎসা নেন এই কমিউনিটি ক্লিনিকে।

পার্শ্ববতী পুটিখালী ইউনিয়নের সোনাখালী গ্রাম ও পঞ্চকরণ ও খারইখালীর ৩ গ্রামের মানুষ এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন অনেক দূর দূরান্ত থেকে। দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে এ জরাজীর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্য সেবার কার্যক্রম। বিষয়টি চেয়ারম্যান মেম্বারসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলেও হয়নি কোন প্রতিকার। তারা এ কমিউিনিটি ক্লিনিকটি নতুন একটি ভবনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।  

 

চিকিৎসক নুসরাত জাহান জানান, পঞ্চকরণ ও পুটিখালী দু’টি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ ক্লিনিকটিতে প্রতিনিয়ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ রোগী, গর্ভবতী মায়েদের এনসি সেবা ও পিএনসি সেবা ও শিশুদের ওজন উচ্চতা পরিমাপসহ চিকিৎসা দেওয়া হয় এই ক্লিনিকে। সরকারিভাবে মায়েদের জন্য আয়রন, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট দেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি, জ্বর, কাশি ও ডায়রিয়ার ওষুধ ও ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল খান, ইউপি মেম্বর ডা. আব্দুস ছোবাহান, মিলন শেখ, শিক্ষক আলম হাওলাদার, মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার, যুবলীগ নেতা মিলন শেখ ও নারী নেত্রী রেনু বেগমসহ একাধিক স্থানীয়রা জানান, এ ইউনিয়নের চিকিৎসাক্ষেত্রে এ কমিউনিটি ক্লিনিকটি জনগুরুত্ব বহন করে আসছে।

এ সর্ম্পকে পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, ‘এ ইউনিয়নের ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে পূর্ব পঞ্চকরন ক্লিনিকটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ন, বিষয়টি লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিতসহ নতুন ভবনের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কামাল হোসেন মুফতি বলেন, ‘পূর্ব পঞ্চকরণ কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে এ ক্লিনিকের কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এ উপজেলার ঝুঁকিপূর্ন ভবনগুলোর নতুন করে পুর্ননির্মানের জন্য গত বছর একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে।