দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়েছে আতর, টুপি ও জায়নামাজ বিক্রি

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির.বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩২ এএম, মঙ্গলবার, ৭ মে ২০১৯ | ২৪০

সংযম ও সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে কদর বেড়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাগেরহাটসহ   ১০ জেলায় সুগন্ধী দোকানগুলোতে। সাধনার মাস রমজান মাত্র শুরু হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের সংযমের মাসকে ভালোভাবে ইবাদতের মাধ্যমে কাটাতে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়ে ভিড় করছেন দোকানগুলোতে।

সুরমা, আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক আর জায়নামাজের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই মাথায় টুপি দিয়ে গায়ে খুশবু মেখে নামাজ পড়তে পছন্দ করেন। সে কারণে রোজার শুরুতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন আতর, সুরমার দোকানে।

শুধু আতর-সুরমাই নয়, সেই সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে জায়নামাজ, টুপি, তসবিহ ও মেসওয়াক। আতর সুরমা কিনতে বেশি দেখা যায় কিশোর ও বয়োজ্যেষ্ঠদের। পবিত্র রমজান মাসের শুরতেই এবারও আতরের চাহিদা আকাশছোঁয়া। শুধু আতর নয়, টুপি, তসবিহ ও জায়নামাজের দামও বেড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খুলনা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাটসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় খুশবু স্টোর ও ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে টেবিলে ও র‌্যাকে সাজানো আতর, সুরমা, টুপি পাশাপাশি জায়নামাজ, তসবি ক্রেতাদের ক্রয় করতে দেখা গেছে।

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে সুগন্ধী স্টোরের দোকানী মো. আলামিন   বলেন, পবিত্র রমজান ও ঈদকে উপলক্ষেই বিভিন্ন আইটেমের আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক ও জায়নামাজের ব্যবসা করি। আশাকরি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বিকিকিনি আরো ভালো হবে। তার মতে, কুমিল্লায় টুপি, তসবিহ ও আতরের চাহিদা বেশি। এবার বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধের আতরগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব আতরের তোলা হিসেবে কিনলে অনেক টাকা দাম পড়ে তাই মিলি লিটারের ছোট শিশিতে আতর কেনেন।  প্রতি আতর ২০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এই আতরগুলো আসে পাকিস্তান, ভারত ও দুবাই থেকে।  এদিকে তুলনামূলক হারে বেড়েছে টুপির দামও প্রতিটি টুপি ১০টাকা থেকে ১২০০ টাকা, তসবি ২০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, জায়নামাজ ১০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা। পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিটি মেসওয়াকের মূল্য ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা।

মেসওয়াকের মধ্যে রয়েছে জয়তুন যা শুকনো আর তিলো শুকনো ও কাঁচা হয়। বাহারি ডিজাইনের টুপিগুলো বাংলাদেশসহ সৌদিআরব, চীন, গুজরাট, মালেয়শিয়ান, পাকিস্তান, ওমান, নেপাল ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসে।দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সুবাসের আতর বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে।

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আতর যত পুরনো হয় দাম তত বেশি। দুবাই, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কম্বোডিয়া, ভারত, বুলগেরিয়া থেকে বেশি আতর আসে। এছাড়া দেশি আল মীম, সুলতান, কেপিপি, স্কয়ার, আলিফ নামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি আতরও বিক্রি হচ্ছে। আতর ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের আতরের দানি (বোতল) পাওয়া যায়।

কাচ ছাড়াও বিভিন্ন ধাতু মিশ্রণে তৈরি এসব আতরদানি বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা জানান, বিভিন্নভাবে প্রস্তত হয় আতর। এর মধ্যে রাসায়নিকভাবে তৈরি আতরের দাম তুলনামূলকভাবে কম।


১০০ মিলিলিটারের বোতলে ম্যাডার রোজ আতর ১ হাজার ৬০০ টাকা, লর্ড ১ হাজার টাকা, সিলভার ১ হাজার ৭০০ টাকা, ইগুবস দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কম্বোডিয়ান আগর আতর তোলাপ্রতি (এক তোলায় ১১.৬৬ গ্রাম) ৬৪ হাজার টাকা, ভারতের চন্দনকাঠের তৈরি আতর তোলাপ্রতি ৪ হাজার টাকা, গোলাপের আতর তোলাপ্রতি ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। সিলেটের আগর গাছ থেকে তৈরি আতর বিক্রি হয় তোলাপ্রতি ৩ থেকে ৭ হাজার টাকায়।
আরো কিছু দোকান  শহরের বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে রমজানের নামাজে ব্যবহৃত আতর, টুপি, তসবিহ, মেসওয়াক আর জায়নামাজের কদর বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের রমজানে বিকিকিনি ভাল হবে।
এদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম খুবই চড়া। পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষে সবাই আতর, টুপি, তসবিহ কেনেন, যার কারণে দোকানিরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। শহরে কয়েকটি আতর, সুরমা, টুপির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বাজারে এগুলোর বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
 এক ভ্রাম্যমাণ দোকান ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে এই ভ্রাম্যমাণ আতর, সুরমা ও টুপির ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি আরও জানান, ঈদ যত এগিয়ে আসছে তার বিক্রিও তত বেড়ে যায়।কবির নামের এক ক্রেতা বলেন, সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমযান। আল্লাহ ও রাসূল (সা.) সুগন্ধি পছন্দ করেন, তাই কোরআন নাজিলের মাস রমযানে এ সুগন্ধি কিনলাম। এছাড়া সন্তানদের জন্য কয়েকটি টুপিও কিনেছি। ক্রেতাআমিনুল ইসলাম ,  জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি আতর  তাসবিহ কিনেছি। যাতে এ মাসে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি, সেই দোয়া চাই।আতর, টুপি আর জায়নামাজের পাশাপাশি সুরমা আর তসবিহও কিনছেন অনেকে।