ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে ৫২০০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারত সফরকালে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে তাঁকে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকি আর চীনের উদ্বেগ এক পাশে রেখে শেষেমেশ রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চুক্তি চূড়ান্ত করল ভারত। গতকাল শুক্রবার নয়াদিল্লিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫২০ কোটি ডলারের এ চুক্তির ঘোষণা দেন।
আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভারতের অবস্থান না যুক্তরাষ্ট্রের দিকে, না রাশিয়ার দিকে। এর মধ্যে কয়েক শ কোটি ডলারের চুক্তিকে পুতিনের বিজয় আর ট্রাম্পের পরাজয় হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
গত বৃহস্পতিবার দুই দিনের সফরে নয়াদিল্লি পৌঁছেন পুতিন। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার চুক্তি নিয়ে। ‘এস-৪০০’ মডেলের এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সবচেয়ে আধুনিক হিসেবে বিবেচিত। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে এই অস্ত্র কিনলে তারা ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। ঠিক একই কারণে গত মাসে চীনের সামরিক বাহিনীর অধীন একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা। যদিও নয়াদিল্লির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ওয়াশিংটনের জন্য বেশ কঠিন একটা ব্যাপার। কারণ হলো, চীনকে টেক্কা দিতে নয়াদিল্লিকেই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার মনে করে তারা। এ ছাড়া চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও ভালো নয়।
‘এস-৪০০’ কেনা বাদেও পুতিনের সফরকালে দুই দেশের মধ্যে আরো কয়েকটি চুক্তি সই হয়েছে। এর মধ্যে একটি চুক্তি আছে ভারতের রেলওয়ে অবকাঠামো নিয়ে। আরেকটি চুক্তির আওতায় ভারতীয় নভোচারীদের প্রশিক্ষণ দেবে রাশিয়া। ২০২২ সালের মধ্যে মহাকাশে নভোচারীসহ মহাকাশযান পাঠানোর লক্ষ্যে ভারত এ চুক্তি করেছে।
ভারত সবচেয়ে বেশি অস্ত্র কেনে যথাক্রমে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অপছন্দ সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সুম্পর্কের কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় ‘দুশ্চিন্তা’ চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি। এ ছাড়া বেইজিং নিজেদের আধিপত্য বাড়াতে ভারতের আশপাশের দেশগুলোতে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে।
দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর বিশ্লেষক মনোজ যোশী বলেন, ‘রাশিয়া যাতে পুরোপুরি চীনের পক্ষে চলে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতেই তাদের সঙ্গে ভারত একটা সুসম্পর্ক রাখতে চায়। আরেকটা কারণ হলো, আঞ্চলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে রাশিয়া ও ভারতের নীতি অনেকটা একই রকম। ওয়াশিংটনের নীতি খানিকটা ভিন্ন।’
তবে চীনের সঙ্গে বিরোধিতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখা জরুরি ভারতের। এ কারণে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কিনলেও কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি গত কয়েক বছরে ওয়াশিংটনের সঙ্গেই বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছেন। গত মাসে দুই দেশ ঘোষণা দিয়েছে, আগামী বছর তারা যৌথ সামরিক মহড়া চালাবে। সমঝোতা হয়েছে স্পর্শকাতর সামরিক নথিপত্র আদান-প্রদানের ব্যাপারেও।