জাতিসংঘের প্রতিবেদন

বিদেশী সিনেমা ও টিভি দেখার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ৪৫

বিদেশী সিনেমা ও টিভি নাটক দেখা কিংবা শেয়ার করার মতো কর্মকাণ্ডের জন্য উত্তর কোরিয়ায় মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসি।

 

গত ১০ বছরে উত্তর কোরিয়া থেকে পালিয়ে আসা ৩০০ জনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে অন্তত ছয়টি নতুন আইন চালু করা হয়েছে, যা মৃত্যুদণ্ড প্রয়োগের সুযোগ করে দিয়েছে।

এই নতুন আইনগুলোর মধ্যে একটি অপরাধ হলো বিদেশী মিডিয়া কনটেন্ট যেমন চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজ দেখা বা শেয়ার করা। কিম জং উন জনগণের তথ্যের অ্যাক্সেস সীমিত করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন। পালিয়ে আসা ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে বিদেশী কনটেন্ট বিতরণের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা বেড়েছে। এসব মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়, যাতে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি হয় এবং তারা আইন ভাঙার সাহস না করে।

২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়া পালিয়ে আসা কাং গিউরি জানান, তার তিন বন্ধুকে দক্ষিণ কোরীয় কনটেন্ট রাখার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। মাত্র ২৩ বছর বয়সী এক বন্ধুর বিচার তিনি নিজ চোখে দেখেছেন।

২০১১ সালে কিম জং উন ক্ষমতায় আসার পর মানুষ ভেবেছিল তাদের জীবন উন্নত হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আর ‘কষে বেল্ট বাঁধতে হবে না’, অর্থাৎ খাবারের অভাব থাকবে না। কিন্তু ২০১৯ সালে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে কূটনীতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থার আরো অবনতি হয়।

সাক্ষাৎকারে অংশ নেয়া প্রায় সবাই বলেছেন, তাদের পরিবারে খাদ্যাভাব এতটাই তীব্র ছিল যে, দিনে তিন বেলা খাবার পাওয়া যেন হয়ে দাঁড়িয়েছিল ‘বিলাসিতা’। করোনাকালে দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিল বহু মানুষ।

এদিকে সরকার অনানুষ্ঠানিক বাজারও বন্ধ করে দেয়, যা দিয়ে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করত। সীমান্তে নিরাপত্তা আরো কড়া করা হয়, যাতে কেউ পালাতে না পারে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া জোরপূর্বক শ্রমের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে। দরিদ্র পরিবার থেকে তরুণদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘শক ব্রিগেড’, যাদের দিয়ে খনি ও নির্মাণ প্রকল্পে কঠোর পরিশ্রম করানো হয়। মৃত্যুও এখানে সাধারণ ঘটনা। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর বদলে সরকার এসব মৃত্যু কিম জং উনের জন্য ‘ত্যাগ’ হিসেবে প্রচার করে। এমনকি হাজার হাজার এতিম ও পথশিশুকেও এসব কাজে বাধ্য করা হয়েছে।

২০১৪ সালে জাতিসংঘের এক ঐতিহাসিক প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে দেশের কুখ্যাত রাজনৈতিক বন্দিশিবিরগুলোর ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়। নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেইসব শিবিরের মধ্যে অন্তত চারটি এখনো চালু আছে। সাধারণ কারাগারগুলোতেও বন্দিদের ওপর নির্যাতন, অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং অপুষ্টির কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

জাতিসংঘ এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের হস্তক্ষেপ চাইছে। তবে সে জন্য দরকার নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন– যা চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে কঠিন হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি বেইজিংয়ের সামরিক কুচকাওয়াজে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পাশে উপস্থিত ছিলেন কিম জং উন। বিশ্লেষকদের মতে, এটি দুই দেশের নীরব সমর্থনের ইঙ্গিত।