বৃদ্ধ মহিলার বয়স্কভাতার দায়িত্ব নিলেন চকরিয়ার ইউএনও


বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধা ছলেমা খাতুনের বয়স্ক ভাতার দায়িত্ব নিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান।
লামা উপজেলার পাশ্ববর্তী ছিটমহল খ্যাত চকরিয়ার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার এলাকার মৃত নুর আহমদের স্ত্রী ছলেমা খাতুন। সেই ‘বৃদ্ধার সকল দায়িত্ব আমি নিজের’ এমনটি বলেই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে বয়স্কভাতা পাবার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
পরনির্ভরশীল ছলেমা খাতুনের বর্তমান বয়স চলছে “৯১” বছর। জীবনের পদে পদে দূর্গম বাস্তবতার সম্মুখিন এ বৃদ্ধা। চলেনা কোনভাবেই তার জীবন। বার্ধক্যে ঘিরে থাকা জীবন; তার কাছে কবর ঘরের বাসিন্দা হওয়া ছাড়া আর কোন বাসনা নেই বললেই চলে। একদিকে দারিদ্রতা, অন্যদিকে বার্ধক্যের চাপ। অভাব-অনটনের টানা পোড়েনে আর্থিক দৈন্যতাও কম নয়। বাহাত্তোরের পহেলা আগস্ট জন্ম নেয়া ছলেমা খাতুন দুটোকে সামাল দিতে গিয়ে বারে বারেই যেনো খেই হারিয়ে ফেলছেন। কঠিন বাস্তবতার সাথে কোনভাবেই পেরে উঠছেনা ৯১ বছর বয়সের এ বৃদ্ধা। সরকারি সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত ছলেমা খাতুনের দিন কাটছে মানবেতরভাবে। কপালে জুটেনি বয়স্কভাতা। অথচ এটি (ভাতা) বয়স্কদের জন্য সরকারের বিশেষ উপহার।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জরাজীর্ণ একটি কুঁড়ে ঘরে বিছানা পাতিয়ে মাটিতে পড়ে থাকেন ছলেমা খাতুন। গায়ে ময়লা জামা। একবার পরিধান করলে সেই জামা গায়েই থেকে যায় বহুদিন। বয়সের ভারে কথা বলতে পারেননা ভালভাবে। পৈত্রিক ও স্বামীর সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ভাগ করে দিয়েছেন ছেলে-মেয়েদের। এমনকি তিনি মসজিদের জন্যও জায়গা দান করে দিয়েছেন।
খেয়ে না খেয়ে ছেলের টানাপোড়া সংসারে দিন পার করছেন ছলেমা। দিনমজুরী করে ছেলে। ছলেমা খাতুনের বরাত দিয়ে সূত্রটি জানায়, ছেলের সামান্য আয়ে সবাইকে নিয়ে কোনরকম বেঁচে আছেন তিনি। সকলেই বয়স্কভাতা পায়। ছলেমা বলেন, আমি পাইনা? আমার আরো কতো বয়স পার হলে বয়স্কভাতা পাবো? এভাবে তিনি জনসম্মুকে প্রশ্ন করেন।
বৃদ্ধা ছলেমা খাতুনের ছেলে শাহ আলম বলেন, আমার মায়ের চেয়ে বয়সের ছোট অনেকেই বয়স্কভাতা পায়। আম্মা পায়না। আমরা গরীব। ভাতা পেলে মাকে চিকিৎসা করাতে পারতাম। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের কাছে অনেকবার ধর্ণা দিয়েছি। তারা মাকে বয়স্কভাতা দেয়নি। কোনদিন আশ্বস্থও করেনি। সরকারের কাছে আবেদন করছি আমার মায়ের দিকে নজর রাখতে। স্থানীয় ইউপি মেম্বার আহাম্মদ হোসেন জানান, সামনে নতুন বয়স্কভাতা দেয়া হলে; ছলেমা খাতুনকে দেয়া হবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিবলী নোমান বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জরুরিভিত্তিতে যাতে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করে। প্রয়োজনে বয়স্ক মহিলাটিকে তার ছেলে দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। তার বয়স্কভাতা প্রদানের সকল দায়িত্ব আমার (ইউএনও)।
তিনি জানান, বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের দফাদারকে বাড়ি গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করে আমার অফিসে জমা দেওয়ার জন্য নিদের্শনা দিয়েছি।