চকরিয়ায় মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে ইভটিজিং


চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটছে কিছু না কিছু অপৃতিকর ঘটনা। আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের শ্রেষ্ঠ অভিভাবক। যেখানে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালানো হয়, সেখানে সু-শিক্ষা ছাড়া কোনো পথ নেই। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশে-পাশে বসবাস করে সচেতন অভিভাবকরা। কিন্তু সেই সচেতন অভিভাবকরা আজ তাদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তানদের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন। প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে ইভটিজিং নামক অসভ্য বার্তার।
সকাল থেকে সন্ধ্যা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরর পাশে অবস্থান করে বেশ কিছু সঠিক পথ হারা বখাটে। তাদের মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে নিজেকে ক্ষমতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে। আবার অনেকে বিভিন্ন কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তারা বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আশো-পাশে সার্বক্ষণিক ঘুরতে থাকে। তাদের কিছু বলতে গেলেই আঙ্গুল তুলে কথা বলে। এমনকি তাদের সন্তানদের ক্ষতি করবে বলে হুমকি দেয়।
চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে প্রতিনিয়ত ঘটছে কিছু না কিছু অপৃতিকর ঘটনা। বিশেষকরে চকরিয়া পৌর এলাকার নামি-দামি স্কুল-কলেজের আশে-পাশে বর্তমানে বখাটেদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিভাবকরা হতাশ প্রকাশ করছেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছেন।
চকরিয়া পৌর এলাকায় অবস্থিত চকরিয়া আবাসিক মহিলা কলেজ, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া গ্রামার স্কুল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চারদিকে সার্বক্ষণিক অবস্খান করছে বখাটেরা। বর্তমানে বখাটের উৎপাত আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের জীবনের নিরাপত্তায় উদ্বিগ্ন। বখাটেদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ না থাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ সংলগ্ন সবুজবাগ এলাকায় বখাটদের সংখ্যা অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিদিন ঘটছে ইভটিজিং নামক অসামাজিক কার্যকলাপ। প্রশাসন কর্তৃক বখাটদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনদিন তাদের উপদ্রপ বেড়েই চলছে। যার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ায় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে স্কুল-কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা। ইভটিজিংরত বখাটেদের বাধা দিলে নাজেহালের শিকারও হচ্ছেন অভিভাবকরা, সম্প্রতি এমন বহু ঘটনাও ঘটছে।
এ ধরনের ভুক্তভোগি একাধিক অভিভাবক প্রতিবেদককে বলেন, চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ সংলগ্ন সবুজবাগ এলাকায় স্কুলে আগমন, ছুটির সময় ও বিকেলে প্রাইভেট পড়তে কোচিং সেন্টারের আসা-যাওয়ার সময়ে বখাটেরা সড়কের দু‘পাশে দাঁড়িয়ে ও দোকানে বসে বিভিন্ন খারাপ উক্তির মাধ্যমে ছাত্রীদেরকে সমস্যার সৃষ্টি করছে যা ইভটিজিং আওতাভুক্ত। খবর নিয়ে জানা যায়, বখাটেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও উচ্ছৃঙ্খল বিপদগামী যুবক। তাই কেউ প্রতিবাদ করলে উল্টো নাজেহালের শিকার হতে হয়।
চকরিয়া সবুজবাগ আবাসিক এলাকার সভাপতি এহেছানুল আনোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে আমাদের সন্তানেরা স্কুলে যাওয়া ও আসার সময় বহিরাগত বখাটে ছেলেরা প্রায় সময় বিরক্ত করে। তাদেরকে কিছু বলতে গেলে উল্টো আমাদেরকে খারাপ ব্যবহার করে। একইভাবে বিকাল-সন্ধ্যার সময় সবুজবাগের অলিগলিতে বখাটের উপদ্রুব বেড়ে যায়। এমনকি বখাটেরা মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ওইসময় অভিভাবক থাকার পরও ইভটিজিং করতে থাকে। দ্রুত সময়ে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
কোরক বিদ্যাপীঠের অভিভাবক প্রতিনিধি মকছুদুল হক ছুট্টো ও শওকত হোসেন বলেন, আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সাম্প্রতিক ইভটিজিং হচ্ছে বলে খবর কানে এসেছে এবং বখাটের উৎপাত বেড়ে যাওয়ার কথা আমরা শুনেছি, যে সব ঘটনা দৃশ্যমান হয়েছে সেসব দমন করা হয়েছে, তবুও প্রশাসনের আইনী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নুরুল আখের ও কেন্দ্রীয় উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদুল হক জানান, বখাটদের উৎপাতের বিষয় নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে, সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। সে-প্রেক্ষিতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন এসে কয়েক বখাটেকে আটকও করা হয়েছিল, তবুও উৎপাত বন্ধ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান প্রতিবেদককে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে বখাটেরা ইভটিজিং করলে তাৎক্ষনিকভাবে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে সাজা দেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বখাটের উৎপাত হলে তাৎক্ষনিকভাবে জানাতে হবে। ইতোমধ্যে ইভটিজিং রোধ করার জন্য বেশ কয়েকবার ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমরা ইভটিজিং এর বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেমিনার করেছি, ভবিষ্যতে বাকি বিদ্যালয়গুলোতে সেমিনার করা হবে জানান। তিনি বলেন, স্কুল ছুটির সময় বখাটেদের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে হুন্ডা টহল পার্টি ও মোবাইল পার্টি নিয়মিত কাজ করে। এমনকি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষকরে কোরক বিদ্যাপীঠের আশে-পাশে বখাটেদের বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়ার হবে বলে তিনি জানান।