সেনা কর্মকর্তার লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার

নির্জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৫৭ পিএম, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪০৩

কক্সবাজারের চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করার সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সেনা কর্মকর্তার লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এদিকে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বাবা বলেন, ‘এমন মৃত্যু যেন আর কারো না হয়।’

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের বাবা সারোয়ার জাহান প্রায় বাকরুদ্ধ। তিনি বলেন, ‘এ রকম মৃত্যু যেন আর কারো না হয়। আর যেন কোনো বাবার এভাবে আর্তনাদ করতে না হয়। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার চাই। তানজিমই আমার একমাত্র ছেলে। সেই ছিল বাড়ির একমাত্র উপার্জন করার লোক। আমি এই হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি চাই।’

একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে নিহত তানজিমের মা নাজমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সরকার প্রধান ও সেনা প্রধানের কাছে আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। তানজিম ছিল আমার কলিজার টুকরা।’

তানজিম নিহতের খবর এলাকায় জানাজানি হলে, তাঁর বাড়িতে ভিড় করে আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এরইমধ্যে ঘাটাইল শহীদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাস থেকে ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা নিহত তানজিমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমবেদনা জানিয়েছেন।

এদিকে চট্্রগ্রাম থেকে সামরিক একটি হেলিকপ্টারে নির্জনের লাশ বেলা সাড়ে তিনটার সময় টাঙ্গাইল হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে সেখান থেকে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় করের বেতকা বাড়িতে। লাশ পৌঁছলে স্বজনদের মাঝে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বাদ আছর বোয়ালী জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাযা শেষে বোয়ালী সামাজিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হক, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতুসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ। 

আইএসপিআর প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চকরিয়া উপজেলার অন্তর্গত ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর পেয়ে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্প থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল দ্রুত যায়। আনুমানিক ৪টার দিকে মাইজপাড়া গ্রামে অভিযান পরিচালনা করার সময় সাত থেকে আট সদস্যের একটি ডাকাত দল সেনা টহল দলের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার ডাকাত দলের কয়েকজনকে তাড়া করেন। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা লেফটেন্যান্ট তানজিমের ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে তিনি গুরুতর আহত হন। এতে তাঁর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তানজিমকে উদ্ধার করে মালুমঘাট মেমোরিয়াল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট তানজিম সারোয়ার নির্জন টাঙ্গাইল জেলার একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী এই তরুণ সেনা কর্মকর্তা পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনান্তে ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে গত ৮ জুন ২০২২ তারিখে আর্মি সার্ভিস কোরে (এএসসি) কমিশন লাভ করেন।