হাওয়া ভবন ফিরে পেতে বিএনপির আন্দোলন চলছে-ওবায়দুল কাদের

টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে ত্রি-বার্ষিক জেলা সম্মেলনে লাখো নেতাকর্মীর সমাগম ঘটিয়ে টাঙ্গাইলে বড় ধরনের রাজনৈতিক শোডাউন করেছে আওয়ামী লীগ। সম্মেলন থেকে দলের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সর্তক থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি রাজপথেই বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতারা। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। অতীতের মতো তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে সহিংসতার পথে গেলে বিএনপিকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিসেম্বর মাসে, খেলা হবে, মোকাবেলা হবে। নির্বাচনে হবে, আন্দোলনে হবে। বিএনপির দুরশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে জনতার সাগরের গর্জন শুনতে পাবে বিএনপি। ভোট চুরি, ভুয়া ভোটার তৈরি, ভোট জালিয়াতি, লুটপাট, দুর্নীতি ও নারী নির্যাতনকারী বিএনপির বিরুদ্ধে এবার খেলা হবে। বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আশা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরকার এতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না।
তিনি বলেন, পয়সা খেয়ে কমিটি করা লোকদের আওয়ামী লীগের প্রয়োজন নেই। এসব কর্মকান্ড যারা করেন নিজেকে সংশোধন করে ভালো হয়ে যান। কমিটিকে ঘিরে পদ বানিজ্যের কথা যেন না শুনি। ডেকে ডেকে পকেটের লোক বসাবেন তাও চলবে না। এবার তদন্ত করে খোঁজ-খবর নেব। পয়সা খেয়ে কমিটি করা লোকদের আমাদের প্রয়োজন নেই। কমিটি একটা হবে। নতুন নেতা আসতে দেন। বসস্তের কোকিল আছে দুঃসময়ের লোক নেই। কে কী করে তা শেখ হাসিনাও জানেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জনগনকে সরকার পতনের উষ্কানী দিচ্ছে। বিএনপি তেরো বছরে ১৩ মিনিটও আন্দোলন দেখি নাই। শেখ হাসিনার উদারতায় খালেদা জিয়া আজ মুক্ত। বিএনপি বেগম জিয়ার জন্য একটা মিছিলও করতে পারেনি। তেরো বছরও পারনেনি, এখন সরকার পতনের আন্দোলন করবেন। বিজয় মিছিল করবে, খালেদা জিয়াকে নিয়ে নাকি ১০ ডিসেম্বর বিজয় মিছিল করবে খমেনি স্টাইলে। তারেক রহমানকে নিয়ে নাকি বিপ্লবের কাধে ভর করে ঢাকা নিয়ে আসবে। এয়ারপোটে দাওয়াত দিচ্ছে। তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল আর রাজনীতি করবো না। এই তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনবে। হারানো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আন্দোলন চলছে। আসলে তারেকের হাওয়া ভবন ফিরে পেতে বিএনপির আন্দোলন চলছে। বিএনপি তারেক রহমানের রিমোর্ট কন্টোল। কোথায় তিনি, বাংলাদেশে আন্দোলনের নেতা। ট্যামস্ নদীর পাড় থেকে ডাক দিবে আন্দোলনের। এটা বাংলার মানুষ বিশ^াস করে না। এই তারেকের অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পালানোর দল আওয়ামী লীগ নয়- বিএনপি। বিএনপির আমলে মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি। এখন মানুষ শান্তিতে থাকতে পারে। বাঁশের লাঠিতে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে রাস্তায় নামবেন তা হবে না। বরিশাল ও রংপুরে বস্তা বস্তা টাকা দিয়ে মানুষ নিয়ে গেছেন। দশ লাখ মানুষের কথা বলেন! অথচ সমাবেশে তো আপনাদের চেয়ার ফাঁকা থাকে।
তিনি বলেন, তারেক রহমান মুচলেকা দিয়ে গেছেন যে, তিনি রাজনীতি করবেন না। তারপরও তিনি লন্ডনে বসে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে রাজনীতি চালাচ্ছেন। ডিসেম্বরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে খেলা হবে। বিএনপির দুঃশাসন এবং যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ১০ ডিসেম্বর খেলা হবে। যারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামিদের বাঁচাতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবেন বলছেন। তিনি তো মুক্তই। তাকে নিয়ে তো আপনারা একটা মিছিলও করতে পারেননি। খালেদা জিয়াকে নিয়ে রাজনীতি কইরেন না, বেশিও বুইঝেন না।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নভেম্বরের পরে আসছে ডিসেম্বর। ডাক দিয়েছে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশের। বাইরের লোক লাগবে না আমাদের। শেখ হাসিনা ডাক দিলে বাইরের লোক লাগবে না। ঢাকার রাজপথে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম হবে। আমরা যদি ঢাকার রাজপথে অবস্থান নেই তাহলে বিএনপি পালাবার পথ পাবে না। পালনোর দল আওয়ামী লীগ নয়, পালানোর দল বিএনপি।
দীর্ঘ প্রায় সাত বছর পর টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন আগামী সোমবার অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দুপুর ২টা থেকে সম্মেলনস্থল টাঙ্গাইল স্টেডিয়াম মাঠে জেলার লাখো নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হন। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জোরদার করা হয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিকে এই সম্মেলনকে ঘিরে গোটা জেলাব্যাপী দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। জেলা শহরের চতুর্দিকে বিভিন্ন সড়কে তোরণ নির্মাণ করা হয়। এমন আয়োজনে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে চারিদিকে সাজ সাজ রব পড়ে যায়।
সম্মেলনের উদ্বোধক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেন, বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে দেশে। বিএনপি আগে কোন রাজনৈতিক দল ছিল না। ‘৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদের নিয়ে বিএনপির জন্ম হয়েছে। ইতিপুর্বে তারা দেশে অনেক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা সিলেটে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করেছে। যারাই এই কাজে জড়িত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবে।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। সারা বিশ্ব আজ শেখ হাসিনার প্রশংসা করে। এখন বছরের প্রথম দিনেই বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে বাঙালি জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলে। বঙ্গবন্ধু কন্যা এ দেশকে বিশ্ব দরবারে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। সন্ত্রাসী, লুটেরা ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূর প্রসারি চিন্তা-চেতনায় বিশ্ব মহামারী করোনা সহ সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম-হানিফ বলেন, ‘৭১-এর পরাজিত শক্তিরা দেশকে পিছিয়ে নিতে চায়, তারা আরেকটা ‘৭৫- এর দিবাস্বপ্ন দেখছে। তাদের সে ইচ্ছা কোনভাবেই পুরণ হবেনা। জনগনকে সাথে নিয়ে তাদের সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য শ্রমিক নেতা শাজাহান খান এমপি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার পরোক্ষ খুনি। বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে খুন করে তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। এ দেশে এখন আর মঙ্গা নেই। খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি। আমাদের খাদ্য এখন উদ্বৃত্ত হয়।
টাঙ্গাইল স্টেডিয়ামে বেলুন উড়িয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক এমপি।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপির সঞ্চালনায় বিশেষ বক্তার বক্তব্য রাখেন- প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর আবদুস সালাম গোলাপ এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম, ইকবাল হোসেন অপু এমপি ও আলহাজ মো. সাঈদ খোকন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ছানোয়ার হোসেন, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আতাউর রহমান, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, টাঙ্গাইল-২ গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু।
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক কাউন্সিলরদের সমর্থনে পুণরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের এমপিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার ঘোষণা দেন।